স্টাফ রিপোর্টার ::
পারিবারিক কলহের জের ধরে জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামে ইঁদুর নিধনের গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে মারা গেছে ২ শিশু ও ১ কিশোরী। এ ঘটনায় শিশুদের মা যমুনা খাতুনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। নিহতরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেনের মেয়ে শাফিয়া খাতুন (১৮), ছেলে তামজিদ হোসেন (১৫) ও শাহেদ মিয়া (৫)। যমুনার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (৪০) পুলিশি হেফাজতে আছেন।
প্রতিবেশী ও জামালগঞ্জ থানা পুলিশ জানায়, রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে স্বামী জাহাঙ্গীর হোসেন বাড়ির পাশে সুরমা নদীতে মাছ ধরার জন্য চলে যান। সকাল ৭টার দিকে স্ত্রী যমুনা খাতুন মিষ্টির ভেতরে ইঁদুর মারার গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে তিন সন্তানকে মিষ্টি খেতে দেন। পরে যমুনা খাতুনও গ্যাস ট্যাবলেট মিশ্রিত মিষ্টি খান। এর কিছুক্ষণ পরে সবার মধ্যে বিষক্রিয়া দেখা দেয়। এ সময় কিশোরী শাফিয়ার চিৎকারে স্বজন ও প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন। তাদের সবার মুখ থেকে তখন ফেনা বের হচ্ছিলো। একপর্যায়ে প্রতিবেশীরা বুঝতে পারেন তারা বিষ খেয়েছে। পরে দ্রুত সবাইকে প্রথমে জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে সেখানের ডাক্তার তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর কথা বলেন। তাদের বহনকারী গাড়ি শান্তিগঞ্জ এলাকায় পৌঁছলে শাফিয়া, শাহেদ ও তামজিদ মারা যায়। পরে তাদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ফেনারবাঁক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল চন্দ্র তালুকদার জানান, শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে জুয়া খেলায় আসক্ত স্বামী জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে স্ত্রী যমুনা খাতুনের তীব্র ঝগড়াঝাটি হয়। দীর্ঘদিন ধরে জাহাঙ্গীরকে জুয়া খেলা বাদ দেওয়ার কথা বলে আসছিলেন যমুনা। কিন্তু স্বামী প্রতিদিন রাতে বিভিন্ন এলাকায় জুয়ার আসরে গিয়ে জুয়া খেলেন। খেলা শেষে ভোরে বাড়ি ফিরে আসেন। যেদিন জুয়া খেলায় জিততেন সেদিন পরিবারের জন্য হাটবাজার করে নিয়ে আসতেন। খেলায় হেরে গেলে বাড়ি ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে টাকার জন্য ঝগড়া করতেন। জাহাঙ্গীর একজন জেলে ও পেশাদার জুয়াড়ি। অনেক বছর ধরে তিনি জুয়া খেলেন। খেলায় হেরে গেলে তিনি বাড়িতে এসে স্ত্রীর কাছে টাকা-পয়সা চাইতেন। না দিলে সন্তানদের সামনে স্ত্রী যমুনাকে মারধর করতেন।
যমুনা বেগমের ছোট ভাই মমিন আহমদ অভিযোগ করে বলেন, তার বোনের স্বামী জাহাঙ্গীর আলম জুয়া খেলতেন। এ নিয়ে ঝগড়ার জেরে তার বোনকে মারধর করতেন। স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তার বোন এমনটা করেছেন বলে তিনি ধারণা করছেন।
শান্তিপুর গ্রামের আব্দুল মতিন জানান, জাহাঙ্গীর জুয়া খেলা নিয়ে প্রতিদিন সন্তানদের সামনে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করতেন।
সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম জানান, দুপুর ১২টার দিকে তাদের হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আনার আগেই তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। যমুনা বেগমের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলমের আত্মীয় মুজিবুর রহমান বলেন, পারিবারিক কিছু বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। কিন্তু যমুনা এমন করতে পারেন, এটি তারা চিন্তা করতে পারেননি।
জামালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলীপ কুমার দাশ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে জেনেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিন শিশুর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে আছে।