1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:২৯ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

চলাচলের রাস্তায় বাধা, অবরুদ্ধ দুই পরিবার

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

হোসাইন আহমদ ::
শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের চুরখাই গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে পুটিয়া নদী। নদীর উত্তর পাড় ঘেঁষে সত্তরোর্ধ্ব প্রমিলা দেব ও গোবিন্দ দাসদের বসতঘর। দুটি পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১১/১২জন। তাদের মধ্যে কেউ রোগী, কেউ শিক্ষার্থী, কেউ প্রতিবন্ধী ও কেউ আছেন শিক্ষকতা এবং সেবা পেশায়। প্রায় ২৫ বছর ধরে এ জায়গায় তাদের বসতি। এতো দিন চলাচলের রাস্তায় কোনো বাধা-বিপত্তি না হলেও বছর দেড়েক ধরে প্রতিবেশী সুনীল কুমার দে ও সজল কুমার দে ওই দুই পরিবারকে চলাচলে বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন দুই পরিবারের সদস্যরা। এতে তারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। চলাচলের রাস্তায় বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় তাদের চলতে হয় জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। নিজেদের ঘর থেকে বাঁশ-বেতের ঝোপের মধ্য দিয়ে কাদা মাড়িয়ে পুটিয়া নদীর উপর দিয়ে নৌকায় করে আসতে হয় চুরখাই গ্রামের প্রধান রাস্তায়। এতে যেমন ভয় থাকে সাপ ও বন্যপ্রাণির আক্রমণের, তেমনি চলাফেরায় পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। এছাড়াও নদীর পানিতে পড়ে নৌকা পারাপারের সময় শিশুদের প্রাণহানিরও শঙ্কা রয়েছে।
গত বৃহ¯পতিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বলতে গেলে বনজঙ্গলের মাঝখানেই প্রমিলা দেব ও গোবিন্দ দাসের বসতঘর। চলাচলের জন্য যে রাস্তা আছে তা বন্ধ থাকায় বনজঙ্গলের মাঝখান দিয়েই চলাচল করেন তারা। একদিকে বেতের ঝোপ, অপরদিকে বাঁশ, করচ ও অন্যান্য বনের প্রচ- ঝোপ। বলতে গেলে ছোটখাটো একটি জঙ্গল। এখানে যে কোনো ধরনের বন্যপ্রাণি থাকা একেবারেই স্বাভাবিক। কর্দমাক্ত মাটিতে চলাচল প্রায় অসম্ভব। জঙ্গলের মধ্য দিয়ে আনুমানিক একশো মিটার জায়গার কাদা মাড়িয়ে পুটিয়া নদীতে এসে তারপর নৌকায় করে আসতে হয় চুরখাই গ্রামের প্রধান সড়কে।
অপরদিকে, প্রমিলা দেব ও গোবিন্দ দাসের বাড়ি থেকে পশ্চিম দিকে সুনীল কুমার দে’র ঘরের পেছনের ছোট খাল পর্যন্ত যে রাস্তা গিয়েছে তা বন্ধ। মানুষ চলাচল না করায় রাস্তায় বড় বড় ঘাস কিংবা বন গজিয়েছে। পাশের খালে কোনো সাঁকো না থাকায় এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারছেন না ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সদস্যরা।
প্রমিলা দেব, তার মেয়ে রতœা দেব ও গোবিন্দ দাস বলেন, আমাদের বাড়ি থেকে খাল পর্যন্ত রাস্তায় কোনো সমস্যা না থাকলেও মূল সমস্যা খালের পশ্চিম পাড়ে। ওই জায়গাটি সুনীল কুমার দে ও সজল কুমার দে’র। সামান্য জায়গা পরেই আবার সরকারি সড়ক। এই সামান্য জায়গার উপর দিয়ে আমাদের চলতে হয়। এখানেই সুনীল কুমার দে ও সজল কুমার দে’র মূল আপত্তি। তাদের কথা হলো এদিকে আমরা চলাফেরা করতে পারবো না। এজন্য অনেক সালিশ বৈঠক হয়েছে। অনেকে অনেক অনুরোধ অনুনয় করেছেন। পঞ্চায়েত বৈঠকে বসে তারা দু’জন বিষয়টি মেনে নিয়ে আমাদেরকে চলাচলের রাস্তা দিয়েছেন। পরে বীরেন্দ্র কুমার দে ওরফে বিজু নামের এক ব্যক্তির প্ররোচনায় পরে আমাদেরকে আবারও বাধা দিতে থাকেন। এভাবে একাধিকবার তারা এমনটি করেছেন। এ বিষয় নিষ্পত্তির স্বার্থে পীযুষ কান্তি দে নামের একজন লোক আমাদেরকে কিছু জায়গা দান করেছেন যেনো আমরা এই জায়গা বিবাদীগণের সাথে অদলবদল করতে পারি। সুনীল কুমার দে ও সজল কুমার দে আমাদের দেওয়া জায়গা গ্রহণ করে ব্যবহার করার পরও তারা আমাদেরকে চলাচলের জন্য রাস্তা প্রদান করছেন না। সাঁকো বাঁধতে দিচ্ছেন না।
রতœা রানী দেব জানান, বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করলে সুষ্ঠু সমাধানের স্বার্থে আমরা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। আদালত আমাদের পক্ষে দুটি আদেশ দিয়েছেন। আদালতের চূড়ান্ত আদেশনামায় বিজ্ঞ আদালত বলেছেন, উভয়পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীকে শুনলাম। ২য় পক্ষের (সুনীল কুমার দে ও সজল কুমার দে) দাখিলকৃত জবাব সন্তোষজনক নয় বিধায় গত ১২/০৭/২০২৩ তারিখের আদেশ স্থায়ী করা হল।
পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের শালিস ব্যক্তি ও পূর্ব সাবেক চেয়ারম্যান রফিক খান, পঞ্চগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এনামুল কবির এনাম বলেন, কারো রাস্তা আটকানো কোনভাবেই সমীচীন নয়। আমরা একাধিকবার বিষয়টি নি®পত্তির চেষ্টা করেছি। মানবিক খাতিরে হলেও রাস্তা দেওয়া উচিত।
অভিযোগের ব্যাপারে সজল কুমার দে বলেন, আমার নিজের জায়গা দিয়ে তারা চলাচল করে, আমি কোনো দিন বাধা দেই নি। এখন তারা এদিকে স্থায়ী রাস্তা করতে চাচ্ছে। আপনার বাড়ির উঠানের উপর দিয়ে তো আর আপনি কাউকে রাস্তা দিবেন না? আমার নিজের বাড়ির নিরাপত্তার ব্যাপার-সেপারও তো আছে। তাছাড়া তারা আমার বাড়ির উপর দিয়ে যাবে আর আমাদের আত্মসম্মানে আঘাত করে কথা বললে তো আর মেনে নেওয়া যায় না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নদীর পাড়ের দিকে সালিশ ব্যক্তিরা আমার জায়গায় খুঁটি মেরে তাদের রাস্তা দিয়েছিলেন। আমাকে না বলে খুঁটি মারায় আমি সেখানে বাধা দিয়েছি।
বীরেন্দ্র কুমার দে বিজু বলেন, আমার নিজের ভাতিজারা যদি পরামর্শ নিতে আমার কাছে আসে আমি তো না করতে পারি না। প্রমিলা দেব ও তার মেয়ে রতœা দেব বৃদ্ধ মানুষগুলোকে কোর্টে তুলেছে। আরেকজনের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে সে কাজ করছে। তাদের নিজেস্ব এক গোপাট আছে। তার বাবা গোপাট রেখে গিয়েছিলেন। সেই গোপাট দিয়ে তারা চলাফেরা করুক। নিরীহ মানুষগুলোকে হয়রানি করছে তারা।
পীযুষ কান্তি দে বলেন, আমি শেষের স্বার্থে নিজের কিছু জমিও দান করেছি। কিন্তু তাতেও মানছেন না তারা। কারো রাস্তা আটকানো কোনোভাবেই সুন্দর কাজ নয়।
শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com