সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
“আমি একজন সরকারি চাকুরে। সব নিয়ম মেনে আমেরিকার ভিসার জন্য দাঁড়িয়েছিলাম। তারা ভিসা দেয়নি, কী কারণে আমি সেটা পেলাম না সেটাও জানায়নি। সেটা গত নভেম্বরের ঘটনা। চাইলেই যে আমেরিকার ভিসা পাওয়া যায় না সেটাতো জানা কথা। কিন্তু এবার যেটা হলো, তারা কিছু পেশা নির্ধারণ করে দেওয়ায় ভিসা পেতে আরও বেশি সমস্যা হবে। এখন করার তো কিছু নেই। সেটা তাদের সিদ্ধান্ত।”
কথাগুলো বলছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা না পাওয়া এক কর্মকর্তা। কেবল তিনি নন ভিসা পাননি এমন অনেকে গত ১২ ঘণ্টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত, গণমাধ্যমকর্মী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ অনেকে। চলতি মাসে ভিসা পাননি এমন এক ব্যবসায়ী বলেন, এখনতো অনেকে মনে করবে আমি বোধহয় অনেক ক্ষমতা নিয়ে চলি। আমাকে সে কারণে ভিসা দেয়নি।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, আইন-শৃংখলা বাহিনী, সরকারি ও বিরোধী দলের যেসব সদস্য বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে খাটো করার চেষ্টা করছে, তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো। বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে ওই ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।
এর পরপরই নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার দল সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে। যদি কোনও কারণে নির্বাচন বানচালের কোনও পদক্ষেপের ক্ষেত্রে যারা উদ্যোগ নেবে, বাংলাদেশের জনগণ তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। নতুন ভিসা নিষেধাজ্ঞা স¤পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আশা করেন, বিরোধী দলসহ নির্বাচন বানচালের প্রচেষ্টাকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক আমেরিকার ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও কোন নামের তালিকা না থাকা প্রসঙ্গে লিখেছেন, “খবর: ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করবে না আমেরিকা। পাড়ার বল্টু এখন ভিসা রিজেক্ট হলে সবাইকে বলে বেড়াবে, ‘চিনস ব্যাটা আমারে? বুঝছিস তো আমি কত্তো বড় নেতা! আমেরিকার ভিসা রিজেক্ট লিস্টে আছি। হ্যাডম থাকলে তোরাও ভিসা না পেয়ে দেখা!”
কেবল রাজধানী বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলাপ আছে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য বলছে, আমেরিকা ভিসা দিলো কী দিলা না তা নিয়ে মানুষের খুব বেশি মাথাব্যথা নেই। বাজার করতে আসা বিভিন্ন পেশার মানুষ, এলাকার চায়ের দোকানে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কেউই মনে করে না আমেরিকার কথা মতো চলার দরকার আছে। তারা বলছেন, আমাদের সমস্যা আমাদের সমাধান করতে হবে। আমরা স্বাধীন দেশ। অন্য দেশ বলে দিবে না, আমার সংসার কীভাবে চলবে।
বরগুনার ব্যবসায়ী কবির আহমেদ বলেন, এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আমরা শুনেছি। এটাকে আমার আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নগ্ন হস্তক্ষেপ মনে হয়। একটা দেশের রাজনীতিতে নানারকম বিষয় ঘটতে পারে। সেটার জন্য আরেক দেশ বলবে ভিসা দেব না। এইটার যুক্তি খুঁজে পাই না।
আমেরিকাকে বলতে চাই আপনার ভিসানীতি আপনি আপনার কাছে রাখেন উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জের পোশাক শ্রমিক রাবেয়া বলেন, ওসব আমি বুঝি না। বেতন ঠিকমতো বাড়বে কিনা হেইডা কন। ও ভিসা না দিলে কী আমার মালিকের ব্যবসা থাকবে না?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রেজানুর সিদ্দিক বলেন, ভিসানীতিতে আমাদের কিছু যায় আসে না। বাংলাদেশ গরীব রাষ্ট্র থেকে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের পথে আছে। আমরা ছাত্রসমাজ নিয়ম মেনে উচ্চশিক্ষায় যদি যেতেও চাই তাতে কোন বাধা নেই। বিষয়টা আরও পরিষ্কার করে বলা দরকার। আমেরিকা নিজেদের স্বার্থেই আমাদের ভিসা দেবে।
পিরোজপুরের সাদেকুল ইসলাম বলেন, আসলেই কি এই ভিসানীতিতে আমাদের কিছু যায় আসে? প্রধানমন্ত্রী যে জবাব দিয়েছেন তার তুলনা হয় না। আমরা আমাদের আভ্যন্তরীণ ইস্যুতে কোন হস্তক্ষেপ চাই না।