1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:১৫ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

আগেও অনেক দেশ মার্কিন ভিসানীতি আমলে নেয়নি

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ করার জন্য আমেরিকা ঘোষিত নতুন ভিসানীতি প্রয়োগের ঘোষণা এসেছে শুক্রবার। ঘোষণার পর থেকে বিরোধী দল এটিকে সরকারের ওপর চাপ হিসেবে প্রচারের চেষ্টা করলেও এই ভিসানীতির আওতায় কারা পড়বে তা এখনও স্পষ্ট নয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর আগে যেসব দেশকে এই ভিসানীতির ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে তাদের ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস ভ্যালু’ বাংলাদেশের চেয়ে কম। তারাই এই ভিসানীতি আমলে নেয়নি, বাংলাদেশের শঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। আমেরিকা তার দেশে কাকে ভিসা দেবে না সেই এখতিয়ার তার আছে। সেটা তাদের আভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, আইন-শৃংখলা বাহিনী, সরকারি ও বিরোধী দলের যেসব সদস্য বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে খাটো করার চেষ্টা করছে, তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো। বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে ওই ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।
এরপরপরই নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশবাসী ভোট দিলে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু বিদেশ থেকেও নির্বাচন বানচালের কোনও পদক্ষেপ জনগণ মেনে নেবে না। তার দল সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে। যদি কোনও কারণে নির্বাচন বানচালের কোনও পদক্ষেপের ক্ষেত্রে যারা উদ্যোগ নেবে, বাংলাদেশের জনগণ তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।
এর আগে আমেরিকা ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো আফ্রিকার কয়েকটি দেশে। সেসব দেশ হচ্ছে- নাইজেরিয়া, উগান্ডা এবং সোমালিয়া। এসব দেশে কোনটিতে নির্বাচনের আগে কোনটিতে নির্বাচনের পরে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ভিসানীতি ঘোষণার পরে সকলের মনে প্রশ্ন- বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কী হতে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর আগে আফ্রিকার দেশগুলোতে এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসলেও সেটা যে উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছিলো তা কার্যকর হয়নি।
বাংলাদেশে ভিসানীতি ঘোষণার ঠিক নয় দিন আগে একই ধারা ব্যবহার করে নাইজেরিয়াতে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটারদের ভয় দেখানো, ভোটের ফলাফল কারচুপি ও গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকা-ের জন্য কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আমেরিকা। ২০১৯ সালের নির্বাচনের এক মাস আগেও আমেরিকা ঘোষণা করেছিল – নাইজেরিয়ায় নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে।
আফ্রিকার আরেক দেশ উগান্ডাতেও নির্বাচন ঘিরে কিছু ব্যক্তির উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। ভিসা নিষেধাজ্ঞার তেমন প্রভাব উগান্ডায় পড়েনি। উগান্ডায় ১৯৮৬ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন প্রেসিডেন্ট ইওয়েরি মুসেভেনি, একই সাথে রাষ্ট্রপ্রধান ও সেনাপ্রধান। প্রেসিডেন্টের সমর্থকরা তাঁকে দেশে শান্তি ও সমৃদ্ধি আনার জন্য প্রশংসা করেন। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে উগান্ডায় সাধারণ নির্বাচনের পর আমেরিকার তরফ থেকে কিছু ব্যক্তির উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, বিরোধী দলের প্রার্থীদের ধারাবাহিকভাবে হয়রানি করা হয়েছে এবং কোন অভিযোগ ছাড়াই আটক করা হয়েছে। তবে সে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি।
এদিকে সোমালিয়ার নির্বাচনে নাগরিকদের সবার ভোট দেয়ার সুযোগ ছিল না। সেখানকার নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতারা সাধারণ নির্বাচনে ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচন করেন। এর পরের ধাপে সেই সংসদ সদস্যরা ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন। ভিসানীতির পর কিছু মেনে নিতে হয়েছে তাদের। কারণ সোমালিয়ায় আমেরিকার যথেষ্ট প্রভাব আছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা রাজনীতিবিদদের জন্য একটা ধাক্কা ছিল, কারণ সোমালিয়াকে পশ্চিমা সাহায্যের জন্য নির্ভর করতে হয়।
চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, শুক্রবার ঘোষণা এসেছে বাংলাদেশে আমেরিকার নতুন ভিসানীতি প্রয়োগ হবে। যার অর্থ এখন থেকে প্রয়োগ হবে। এই ধরনের কোন ব্যক্তি অ্যাপ্লাই করলে তাকে ভিসা নাও দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দেশটি। তবে এই ঘোষণার সমালোচনা করে তিনি বলেন, বন্ধু দেশ হিসেবে তাদের বুঝার দরকার ছিলো। তারা ঘোষণা না দিয়েও ভিসা না দিতে পারতো। ঘোষণা দিয়ে বিষয়টা পাবলিক করাটা দৃষ্টিকটু, অবন্ধুসুলভ আচরণ। আমাদের সরকার বিরোধীদল কারোর এটি গ্রহণ করা উচিত না, সোচ্চার হওয়া উচিত সবার।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক স¤পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ফজলুল হালিম রানা এটিকে লঘু শাস্তি উল্লেখ করে বলেন, এখন দেখার বিষয় বাংলাদেশ এই ভিসানীতির বিপরীতে করণীয় কী নির্ধারণ করে। এর আগেও একই কারণে নাইজেরিয়া, উগান্ডা, সোমালিয়াকে কেন্দ্র করে ভিসানীতি প্রয়োগ করা হয়েছে। সেসব দেশে কী ঘটেছে? কোথাও কোথাও নির্বাচনের আগে, কোথাও নির্বাচনের পরে ভিসানীতি প্রয়োগ করে আমেরিকা। নাইজেরিয়া, উগান্ডা এই সিদ্ধান্ত তোয়াক্কা করেনি। নাইজেরিয়ার জনগণ যারা আমেরিকায় বাস করে তারা সেখানে বসেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব কথা বলেছে তা ভিসানীতির আওতায় পড়ার মতো হলেও দেশটি কিছুই করতে পারেনি। উগান্ডাতেও তেমন হয়েছে। ফলে এটা তোয়াক্কা না করলেই হয়।
বাংলাদেশের জন্য সেটা অসম্মানজনক কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেকোন রাষ্ট্রের স্ট্যাটাসের জন্য এটা সম্মানহানিকর। যে তিনটি দেশের কথা বলা হচ্ছে তাদের চেয়ে রাষ্ট্রের ব্রান্ডিংয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান উঁচুতে। আবার গ্লোবালি বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের ব্র্যান্ডিং ভ্যালু আছে। নাইজেরিয়া-সোমালিয়া-উগান্ডার কাতারে বাংলাদেশকে নামানো হয়েছে এভাবে না ভেবে আমি মনে করি, যে ভিসানীতি নাইজেরিয়া-উগান্ডার মতো দেশ আমলে নিচ্ছে না, সেটা বাংলাদেশ থোড়াই কেয়ার করবে।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com