হোসাইন আহমদ ::
শান্তিগঞ্জে এক লাখ টাকায় বিক্রি করা শিশু সন্তানকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত শিশুটির পিতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার শিশুটিকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাতে পুলিশের বিশেষ অভিযান চালিয়ে মকবুল হাসান নামের দেড় বছরের শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত রোববার বিকেলে বিক্রি হওয়া শিশু মাকবুলের মা মাফিয়া বেগমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিশুটির বাবা সালেনুর (৩০) ও তার সঙ্গী মনফর আলীকে (৪৫) আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শিশু মাকবুল হাসানকে উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গ্রেপ্তারকৃতদের মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিচারিক আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গত রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) শান্তিগঞ্জ থানায় ভিকটিমের মা মাফিয়া বেগমের অভিযোগের ভিত্তিতে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (জগন্নাথপুর সার্কেল) শুভাশীষ ধরের দিকনির্দেশনায় ও শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সার্বিক সহযোগিতায় তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশের উপ পুলিশ পরিদর্শক মোহন রায়ের নেতৃত্বে সঙ্গীয় অফিসার ফোর্সের সহায়তায় ছাতক, জগন্নাথপুর, জামলাগঞ্জ থানা এলাকা ও ঢাকার নরসিংদী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে আটক করেন এবং ভিকটিমকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো ভিকটিমের পিতা জামালগঞ্জ থানা এলাকার মল্লিকপুর গ্রামের সাবা উদ্দিনের ছেলে সালে নুর (৩০), শান্তিগঞ্জের বাবনিয়া গ্রামের মৃত আশক আলীর ছেলে মনফর আলী (৪৫), জগন্নাথপুর থানা এলাকার কাজিরগাঁও গ্রামের মৃত দারিছ মিয়ার ছেলে রমাই মিয়া (৫৫) ও নরসিংদী থানা এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা ও সুনামগঞ্জ সদর থানা এলাকার ভাড়াটিয়া হাছন নগর এলাকার মৃত রফিক আলমের মেয়ে লাকি আক্তার (৩৮)।
পুলিশ ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মাফিয়া বেগম ও তার স্বামী সালেনুরের মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল। এক পর্যায়ে মাফিয়া বেগমকে তার দুই শিশুপত্রসহ শ্বশুরবাড়ি শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের বাবনিয়া গ্রামে পাঠিয়ে দেয় সালেনুর। এক মাস পূর্বে অভিযুক্ত সালে নুর তার শ্বশুরবাড়িতে আসে এবং স্ত্রী ও পুত্রদেরকে নিয়ে যেতে চায়। এ সময় তার স্ত্রী মাফিয়া বেগম যেতে না চাইলে, সে তার বৃদ্ধ মায়ের অসুস্থতার কথা বলে দুই ছেলে সাথে নিয়ে যায়। কিছুদিন পর সালেনুর তার শ্বশুর বাড়ি আসে। এ সময় মাফিয়া বেগম তার দুই ছেলের কথা জিজ্ঞেস করেন। তখন সালে নূর মিয়া জানায়, দুই ছেলে তার গ্রামের বাড়িতে আছে। মাফিয়া বেগম তার ছেলেদের সেখান থেকে নিয়ে আসার জন্য বলেন। তখন সালে নূর মিয়া জানায়, তার ছেলেরা তার দাদীর সাথে ঢাকা শহরে আছে। মাফিয়া বেগম তার শাশুড়ির সাথে কথা বলে জানতে পারেন যে, তার বড় ছেলে রাব্বি হাসান তার কাছে আছে। তখন মাফিয়া বেগম সালে নূর মিয়াকে তার ছোট ছেলে মকবুল হাসানের কথা জিজ্ঞেস করলে সে টালবাহানা করতে থাকে। তার কথাবার্তায় মাফিয়া বেগমের সন্দেহ হলে তিনি তার আত্মীয় স্বজনকে সাথে নিয়ে সালেনুরকে বার বার ছেলের কথা জিজ্ঞেস করেন। একপর্যায়ে সালে নুর মিয়া জানায়, মনফর আলী ও রমাই মিয়ার সহায়তায় লাকি আক্তারের কাছে এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে তার শিশুপুত্র মকবুল হাসানকে বিক্রি করে দিয়েছে। এ ঘটনায় শান্তিগঞ্জ থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১২ অনুযায়ী মামলা দায়ের করেন ভিকটিম শিশু মকবুলের মা মাফিয়া বেগম। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শুভাশীষ ধরের (জগন্নাথপুর সার্কেল) নির্দেশে শান্তিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. খালেদ চৌধুরীর দিকনির্দেশনায় মামলা দায়েরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে নরসিংদী জেলা থেকে ভিকটিম শিশু মকবুলকে উদ্ধারসহ আসামিদের গ্রেপ্তার করেন এসআই মোহন রায়।
শান্তিগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী জানান, শিশু বিক্রির অভিযোগের ঘটনায় ভিকটিমের মা মাফিয়া বেগম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ছাতক, জগন্নাথপুর, জামলাগঞ্জ থানা এলাকা ও ঢাকার নরসিংদী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৪জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।