স্টাফ রিপোর্টার ::
শুধু শিক্ষা নয়- সুশিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়। এ জন্য প্রয়োজন শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো। পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়া নয়, প্রাথমিক পর্যায় থেকেই বিনয়, শিষ্টাচার, সৌন্দর্যবোধ, নৈতিক চেতনায় সমৃদ্ধ হয়ে আত্মিক বিকাশ লাভ শিক্ষার মৌলিক বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত। সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় রোধে সচেতনতামূলক সভায় এসব কথা বলেন কবি ও লেখক সুখেন্দু সেন।
মঙ্গলবার দুপুরে শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে সচেতন নাগরিকদের প্লাটফর্ম জনউদ্যোগ সুনামগঞ্জ জেলা কমিটি এই সভার আয়োজন করে।
সভায় বক্তারা বলেন, একমুখি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে জাপান বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাতেও এশিয়ার দেশ জাপানকে অনুকরণ করা উচিত। একজন শিক্ষক শুধু বিদ্যালয়ের শিক্ষকই নন, তিনি হবেন সমাজের একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। শিশু তরুণদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত করে তাদের সুকুমারবৃত্তিগুলি জাগ্রত করে মানবসেবা, সমাজসেবায় অনুপ্রাণিত করা যেতে পারে। দেশ ও সমাজের আদর্শবান ও আলোকিত ব্যক্তিত্বদেরকে শিশু-কিশোরদের সামনে উপস্থাপন করাও শিক্ষক ও অভিভাবকদের নৈতিক দায়িত্ব।
শিক্ষাবিদ পরিমল কান্তি দে বলেন, উপযুক্ত শিক্ষার অভাব নৈতিকতার অবক্ষয়ের আরেকটি কারণ। আজকাল শিক্ষা বলতে অনেকেই বুঝেন পরীক্ষা এবং ডিগ্রি অর্জন। জীবনে উন্নতি বলতে বুঝেন কাড়িকাড়ি টাকা ও প্রতিপত্তি। ফলে শিক্ষার মাঝে খুঁজে পাওয়া যায় না মহত্তর কোনো জীবনবোধ। ফলে আমাদের শিশুরা বড় হচ্ছে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা, বিরোধ ও বিদ্বেষের মধ্য দিয়ে। সেখানে শিশুরা পারস্পরিক সহমর্মিতা, অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া বিষয়ক কোনো নৈতিক শিক্ষা লাভ করতে পারছে না। শিক্ষার হার বাড়লেও সুশিক্ষায় সুশিক্ষিতের হার নি¤œমুখী।
সুনামগঞ্জ জনউদ্যোগের আহ্বায়ক রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহিদুল ইসলাম খান, জেলা প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি নির্মল ভট্টাচার্য, জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য্য, জেলা উদীচীর সহসভাপতি সঞ্চিতা চৌধুরী, বিশ্বম্ভরপুর সরকারি দিগেন্দ্র বর্মণ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক সবিতা বীর, সৃজন বিদ্যাপীঠের শিক্ষক কানিজ সুলতানা, সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক অনুপ নারায়ণ তালুকদার।
অনুষ্ঠানে শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে বক্তারা বলেন, সামাজিক অবক্ষয়ের জন্য সোস্যাল মিডিয়া বহুলাংশে দায়ী। দেশে ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় এবং হাতে হাতে এন্ড্রয়েডফোন থাকায় বাস্তব সমাজের বিপরীতে আরেকটি ভার্চুয়েল সমাজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। প্রয়োজনীয় শিক্ষার অভাব এবং ব্যবহার সম্পর্কে উপযুক্ত জ্ঞান অর্জনের আগেই হাতে হাতে ইন্টারনেট পৌঁছে যাওয়ার ফলে এর ভালো দিকগুলির পরিবর্তে খারাপ দিকগুলিই বেশি প্রকাশ পাচ্ছে। এর ফলে অনলাইনে যৌন হয়রানিসহ, সহিংসতা, অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নানা ধরনের ভিডিও গেমের আসক্তিতে শিশুকিশোরদের প্রকৃত সৃষ্টিশীলতা বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক ভিডিও গেম তরুণদেরকে আত্মঘাতী হতেও প্ররোচিত করে। এসব রোধে শিক্ষার্থীদের সচেতন হতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষক ও অভিভাবকদের কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।
এসময় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তরে পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, বিদ্যালয়ের ১০০ মিটারের ভেতরে থাকা দোকানে তামাকজাত দ্রব্য, সিগারেট বিক্রি করতে পারবে না। কোনো দোকানি এসব বিক্রি করলে শিক্ষার্থীরা তার শিক্ষকের সহযোগিতায় প্রশাসনকে জানাতে হবে। প্রশাসন দোকানির বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। এছাড়াও পৌরশহরে কিছু সড়কে নাগরিক ভোগান্তি কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন বলে শিক্ষার্থীদের জানান তিনি।
সভাটি সঞ্চালনা করেন সুনামগঞ্জ জনউদ্যোগের সদস্য সচিব সাইদুর রহমান আসাদ। শুরুতেই ‘সামাজিক অবক্ষয় রোধে সচেতনতা’ শিরোনামে প্রবন্ধ পাঠ করেন তিনি। প্রবন্ধটি লিখেছেন কবি ও লেখক সুখেন্দু সেন।