1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

৯ মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতি বছরই আমাদের জীবন, সম্পদ ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান এসব দুর্যোগের অন্যতম কারণ। নতুন করে এ খাতায় নাম লিখিয়েছে ভূমিকম্প। সাম্প্রতিক সময়ে হালকা ও মাঝারি ধরনের ভূকম্পন অনুভূত হলেও একসময় এ অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। এজন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে বলেছেন তারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত পার্বত্য এলাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মণিপুর, মিজোরাম, মিয়ানমারের পার্বত্য এলাকাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া, কিশোরগঞ্জের হাওর দিয়ে মেঘনা নদী হয়ে বঙ্গোপসাগর ও আন্দামানের পাশ দিয়ে দক্ষিণে যদি একটি রেখা কল্পনা করা যায়, এলাকাটি হচ্ছে দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল। এ দুটি প্লেটের মধ্যে পূর্বে অবস্থিত বার্মা প্লেট, পশ্চিমে অবস্থিত ইন্ডিয়ান প্লেট। এর সংযোগস্থলের উপরের ভাগটি অর্থাৎ সুনামগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে পূর্বে মণিপুর, মিজোরাম পর্যন্ত অঞ্চলটি ‘লকড’ হয়ে আছে। অর্থাৎ এখানে শক্তি জমা হয়ে আছে। কী পরিমাণ শক্তি জমা হয়ে আছে- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তিসম্পন্ন ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার মতো শক্তি জমা হয়ে আছে। যেকোনো সময় এ শক্তি বের হয়ে আসতে পারে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত (১৭ সেপ্টেম্বর) ১০টি হালকা ও মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে দেশে। এতে জানমালের তেমন ক্ষতি না হলেও বড় ধরনের ভূমিকম্পের আভাস পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ মো. মমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ, বাংলাদেশের আশপাশ দিয়ে তিনটি টেকটোনিক প্লেট গেছে। এগুলোর সংযোগস্থল আমাদের সীমান্তের আশেপাশে। যেমন- আমাদের উত্তরে হিমালয় পড়েছে ইউরেশিয়ান প্লেটে। আমাদের অবস্থান ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটে। আর আমাদের পূর্বে হচ্ছে বার্মার মাইক্রো প্লেট। এ তিনটি প্লেটই আমাদের কানেক্টেড এবং সক্রিয়। প্লেটগুলোর মুভমেন্ট আছে। এগুলো প্রতি বছরে পাঁচ সেন্টিমিটার বা ৫০ মিলিমিটার মুভমেন্ট করে। তার মানে, প্রতি বছর আমরা পাঁচ সেন্টিমিটার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মুভমেন্ট করছি। একইভাবে পুরো পৃথিবীও মুভ করছে।
তিনি বলেন, পৃথিবীর মুভমেন্ট তিনটি ক্রাইটেরিয়ায় স¤পন্ন হচ্ছে। প্রথমটি হলো- কনভারজেন্ট মুভমেন্ট, অর্থাৎ দুটি প্লেট একই দিকে পরিচালিত হয়ে পর¯পর সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। দ্বিতীয়টি হলো- একটি প্লেট একদিকে এবং অপরটি বিপরীত দিকে মুভ করছে। এটিকে বলে ডাইভারজেন্ট মুভমেন্ট। তৃতীয়টি হলো- ল্যাটেরাল মুভমেন্ট, অর্থাৎ যদি কোনো একটি প্লেট স্টাবল থাকে এবং অপরটি মুভ করে। এ তিন ক্রাইটেরিয়ায় পৃথিবী মুভ করছে।
এ আবহাওয়াবিদ বলেন, নেপালে যেমন ইউরেশিয়ান প্লেট আর আমাদের ইন্ডিয়ান প্লেট (বাংলাদেশ যে প্লেটে অবস্থান করছে)। দুটি প্লেটের কনভারজেন্ট মুভমেন্ট বিদ্যমান। কনভারজেন্ট মুভমেন্ট হওয়ায় একটি প্লেট আরেকটি প্লেটের দিকে মুভ করছে এবং একটি প্লেট গ্রাজুয়ালি রাইজিং করছে। অর্থাৎ হিমালয়ের যে উচ্চতা, যেটি গত বছর যা ছিল তার চেয়ে একটু হলেও বেড়েছে। এজন্য যখন প্লেট মুভ করে এবং কোনো কারণে যদি ওখানে মুভমেন্ট কম হয় বা মুভমেন্ট না হয় তখনই সেখানে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। দেখা যায়, আমাদের প্লেট বাউন্ডারির লাইনগুলোতে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ হচ্ছে। অনেক বিজ্ঞানী বলেন, সংঘর্ষের ফলে যদি এনার্জি রিলিজ হয়, তাহলে ভালো। আর যদি এনার্জি রিলিজ না হয়, যদি সেখানে প্লেট বাউন্ডারি থাকে তাহলে এটি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, পরে যখন সেখান থেকে বড় ধরনের এনার্জি রিলিজ হয় তখন ভূমিকম্পের মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। আমাদের আশপাশে সক্রিয় তিনটি প্লেটের কারণে বলতে পারি যে, আমরা প্রবল ভূমিক¤প ঝুঁকির মধ্যে আছি, এটি নিশ্চিত।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে শুধু বাংলাদেশ ঝুঁকিতে আছে, বিষয়টি সেরকম নয়। পুরো পৃথিবীই ঝুঁকির মধ্যে আছে। সারা পৃথিবীতে অনেকগুলো প্লেট আছে। যেমন- ইউরেশিয়ান প্লেটটি ইউরোপ জুড়ে বিস্তৃত, এটি নেপাল পর্যন্ত চলে এসেছে। আমরা ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটে অবস্থিত। এটি অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ ও তৎসংলগ্ন মহাসাগর হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতীয় উপমহাদেশ ও তৎসংলগ্ন জলভাগ পর্যন্ত প্রসারিত। পুরো প্লেটই মুভ করছে। ফলে বলা যায়, পুরো পৃথিবীই ভূমিক¤প ঝুঁকিতে রয়েছে।
ভূমিক¤েপর ঝুঁকিতে বাংলাদেশ রয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতীতের ঘটনা থেকে বলা যায় যে, যেখানে প্লেট বাউন্ডারি লাইন থাকবে অর্থাৎ দুটি প্লেটের সংযোগস্থল থাকবে, তার আশেপাশে বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বেশি। যেহেতু বাংলাদেশ প্লেট বাউন্ডারির খুবই কাছাকাছি (বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে ১০০ বা ১২০ কিলোমিটারের মধ্যে প্লেট বাউন্ডারি অবস্থিত) অবস্থান করছে, সুতরাং আমরা অবশ্যই ঝুঁকির মধ্যে আছি। অতীতেও এ অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিক¤প হয়েছে। যেহেতু পৃথিবী মুভ করে এনার্জি গেইন করে এবং প্লেট বাউন্ডারি দিয়েই এনার্জি রিলিজ করে, সেজন্য বলা যায় বাংলাদেশেও বড় ধরনের ভূমিক¤প হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
সাবেক আবহাওয়া বিজ্ঞানী আব্দুল মান্নান বলেন, এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পের প্রেডিকশন দেওয়ার মতো কোনো পদ্ধতি/প্রক্রিয়া আবিষ্কার হয়নি। যেহেতু এটি পৃথিবীর ইন্টারনাল বিহেভিয়ার এবং ইন্টারনালি লেট মুভমেন্ট এনার্জি রিলিজের মাধ্যমে এক প্লেট থেকে অন্য প্লেটে এনার্জি বিনিময় হয় বা কোনো কারণে যখন শক্তির পরিবর্তন হয়, তখনই ভূমিকম্পের মতো ঘটনা ঘটে। পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগ কিন্তু ইউনিফর্মলি সৃষ্ট নয়। এখানে ননউনিফর্মিটি আছে এবং সে কারণেই পৃথিবীর সব জায়গা সমানভাবে গঠিত হয় না। যেমন- জাপানে প্রতিনিয়ত ভূমিক¤প হয়। কিন্তু বাংলাদেশ বা এমন অনেক অঞ্চল আছে যেখানে সেভাবে ভূমিকম্প হয় না।
তিনি বলেন, অতীতে বাংলাদেশের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব দিকে ব্যাপক ভূমিকম্প হয়েছে। তার মানে, আমরা ভূমিকম্প এরিয়ার মধ্যেই আছি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঘন ঘন ভূকম্পন হচ্ছে কেন? যেহেতু এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা, এখানে বছরের কোনো এক সময় বা অতীতেও ভূমিকম্পের প্রবণতা ছিল, এখনও অতীতের মতো ভূমিকম্প প্রবণতা রয়ে গেছে। যেহেতু বাংলাদেশ ঝুঁকিতে আছে, সেহেতু বাংলাদেশের উচিত হলো অতীতের রেকর্ডগুলো আমলে নিয়ে যতটা সম্ভব সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কারণ, এটি এমন একটি দুর্যোগ, যেটির কোনো পূর্বাভাস নেই। ভূমিকম্প মোকাবিলার জন্য আমাদের নিজেদেরই সতর্ক থাকতে হবে।
আব্দুল মান্নান বলেন, টেকটোনিক প্লেটগুলো থাকার কারণে পৃথিবীর সব স্থান কিন্তু মুভ করছে। তবে, এ মুভমেন্টটা আমরা ফিজিক্যালি দেখি না। কিন্তু প্র্যাকটিক্যালি প্রতি বছর কিছু মিলিমিটার এটি মুভ করছে। সেই মুভমেন্টের কারণে বাংলাদেশও এখন দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে। পৃথিবীর সব অঞ্চলই নিজস্ব প্লেটগুলোর মুভমেন্টের কারণে স্থানান্তরিত হচ্ছে। এ মুভমেন্টের প্রক্রিয়া বিজ্ঞানীরা শনাক্ত করেছেন। কাজেই নতুন কোনো এলাকায় ভূমিকম্প যে হবে না, সেরকম কোনো নিরাপত্তা আমরা পাচ্ছি না। এ নিরাপত্তা না থাকার কারণে যেসব অঞ্চল আমরা এ মুহূর্তে নিরাপদ ভেবেছিলাম, সেসব এলাকা নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে বলা যায়, ভূমিকম্প মাসে তিনবার কেন, দিনেও তিনবার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বিজ্ঞানীরা এখনও এ প্রাকৃতিক দুর্যোগকে নিজেদের কব্জায় আনতে পারেনি। পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো এখনও কোনো দেশের বিজ্ঞানীরা মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে পারেনি। সেজন্য আমাদের সবার উচিত সার্বিকভাবে প্রস্তুত থাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভূতত্ত্ব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ভূতত্ত্ববিদ ও খ্যাতনামা ভূবিজ্ঞানী এবং বর্তমানে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ভূতাত্ত্বিক গঠন অনুযায়ী বাংলাদেশ তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। বাংলাদেশের উত্তরে ইউরেশিয়ান প্লেট, পশ্চিমে ইন্ডিয়ান প্লেট এবং পূর্বে হচ্ছে বার্মা প্লেট। তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। ইন্ডিয়ান ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। সেটি হচ্ছে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের হাওর হয়ে মেঘনা নদীর পূর্ব পর্যন্ত বিস্তৃত। যদি সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের হাওরটা দেখেন, তাহলে দেখবেন যে এটি উত্তর-দক্ষিণে প্রলম্বিত এবং মেঘনা নদীতে এসে পড়েছে। এটি দিয়ে যদি একটি কাল্পনিক রেখা টানেন তাহলে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মেঘনা নদী হয়ে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান দিয়ে বার্মা ও ইন্ডিয়ান প্লেটের সংযোগ ঘটেছে। অন্যদিকে, এটির পূর্বে বার্মা প্লেট এবং পশ্চিমে ইন্ডিয়ান প্লেট অবস্থিত। ইন্ডিয়ান প্লেট সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও মেঘনা নদীর লাইন বরাবর বার্মা থেকে নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। যখন একটি প্লেট আরেকটি প্লেটের নিচে তলিয়ে যায় তখন আমরা বলি সাবডাকশন জোন। এ সাবডাকশন জোন সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন পর্যন্ত বিস্তৃত।
তিনি বলেন, পৃথিবীর যত বড় বড় ভূমিকম্প সবগুলোই এ সাবডাকশন জোনে সংঘটিত হয়েছে। জাপান, চিলি, আলাস্কায় বড় বড় ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে। সেখানে যে ভূতাত্ত্বিক কাঠামো (সাবডাকশন জোন), একই কাঠামো আমাদের বাংলাদেশে অবস্থিত। সাবডাকশন জোনের ভূমিক¤প খুবই ক্ষতিকারক। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আমাদের সাবডাকশন জোন এবং এর আশপাশের অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে। সেই ভূমিক¤পগুলো ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন ঘটিয়েছে, নদী-নালার গতিপথের পরিবর্তন এনেছে। ১৭৬২ সালের আসাম ভূমিকম্পের ফলে ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যমুনা নদীর দিয়ে চলে যায়। আগে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়েই এ নদের বেশির ভাগ পানি প্রবাহিত হতো।
এ বিশেষজ্ঞ বলেন, বড় বড় ভূমিকম্প ভূপৃষ্ঠকে কোথাও উঁচু করে দেয়, আবার কোথাও নিচু করে দেয়। যেমন- চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল সৃষ্ট হয়েছে ভূমিকম্পের মাধ্যমে। দুটি প্লেটের পর¯পরমুখী সংঘর্ষ হলেই পাহাড়ের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া, জনবসতিও স্থানান্তর করে ভূমিকম্প। বাংলাদেশের ইতিহাসে এগুলো আছে। অতীতে বাংলাদেশে বড় বড় ভূমিক¤প হয়েছে, এটি নিশ্চিত। যেমন- ১৭৮৭ সালের ভূমিক¤প ব্রহ্মপুত্র নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে দেয়। ১৮৯৭ সালে গ্রেট ইন্ডিয়া ভূমিকম্প এক হাজার ৬২৭ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া, ১৭৬২ সালের ভূমিক¤প হয়েছিল সাবডাকশন জোনে। টেকনাফ থেকে মিয়ানমারে সেই ভূমিক¤প সংঘটিত হয়েছিল। যেটির মাত্রা ছিল ৮.৫ এর বেশি। সেই ভূমিক¤েপ মিয়ানমারের চিদুয়া আইল্যান্ড ৬ মিটার ওপরে উঠে আসে। ১৭৬২ সালের আগে সেন্টমার্টিন আইল্যান্ডের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। এটি ছিল ডুবন্ত দ্বীপ। ভাটার সময় কিছুটা জেগে উঠত এবং জোয়ারে ডুবে যেত। ওই ভূমিকম্প সেন্টমার্টিন দ্বীপ তিন মিটার ওপরে উঠে আসে। ওই একই ভূমিকম্প সীতাকু-ের পাহাড়ে কাদা-বালির উৎগীরণ হয়।
তনি বলেন, আমাদের এ এলাকায় বিশেষ করে বাংলাদেশের পূর্বপ্রান্তে অতীতে বড় বড় ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছিল। সেই ভূমিকম্পন ভূমির গঠনের পরিবর্তন, নদীনালার গতিপথের পরিবর্তন, জনপদের ওপর প্রভাব সৃষ্টি করে। আমাদের এ অঞ্চলের সাবডাকশন জোনে অতীতে ৮ মাত্রার অধিক পরিমাণে ভূমিক¤প সংঘটিত হয়েছিল। ফলেই ভূপৃষ্ঠসহ নদীনালা ও জনবসতির পরিবর্তন হয়েছে।
সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, আমরা কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গে ২০০৩ সাল থেকে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। যেহেতু বাংলাদেশ তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত এবং প্লেটগুলোর ত্রিমাত্রিক গতি নির্ণয় করার জন্য আমরা জিপিএস স্থাপন করি। এর মাধ্যমে আমরা ১৪ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্লেটের গতির পরিমাপ নির্ণয় করি। প্রতিটি প্লেট এক স্থান থেকে আরেক স্থানে প্রতি বছর সরে যাচ্ছে। প্লেটগুলো কোন দিকে যাচ্ছে, দুটি প্লেটের সংযোগ বা পর¯পরমুখী যে গতি এবং সাবডাকশন জোনে প্রতি বছর কী পরিমাণ শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে, সেটিও আমরা পরিমাণ করি। এগুলো পরিমাপ করে আমরা ২০১৬ সালে প্রতিবেদন প্রকাশ করি।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সিলেট থেকে কক্সবাজার অঞ্চলে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তিস¤পন্ন ভূমিক¤প সংঘটিত হওয়ার মতো শক্তি জমা হয়ে আছে। যেকোনো সময় এ শক্তি বের হয়ে আসতে পারে। এ শক্তি একবারে বের হতে পারে আবার ধীরে ধীরেও বের হতে পারে। তবে, পৃথিবীর বিভিন্ন সাবডাকশন জোনে যেসব ভূমিক¤প হয়েছে, সেগুলো থেকে ৬৫ থেকে ৮০ ভাগ শক্তি একবারে বের হয়েছে। বাকিটা ধীরে ধীরে বের হতে থাকে। একই রকম অবস্থা আমাদের এখানে বিরাজ করছে। এর আগে, ৮০০ থেকে এক হাজার বছর আগে কুমিল্লার ময়নামতিতে ভূমিকম্পের মাধ্যমে প্লেটগুলো জমাটবাঁধা শক্তি বের করেছিল। এরপরই নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করে এ অবস্থায় এসেছে। তার মানে, গত এক হাজার বছর ধরে শক্তি জমা হতে হতে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার মতো শক্তি জমা হয়েছে। এ শক্তিই যেকোনো সময় বের হয়ে আসতে পারে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত সিলেট, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জসহ দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে ভূমিকম্প হয়েছে। ভূমিক¤পগুলো হয়েছে সাবডাকশন জোনের মধ্যে। এগুলোই বড় ভূমিক¤প হওয়ার আলামত। বড় ভূমিক¤প আজ হতে পার, কালও হতে পারে, আবার ৫০ বছর পরেও হতে পারে।
বড় ভূমিকম্প রাজধানী ঢাকায় কেমন প্রভাব পড়তে পারে— এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকা হচ্ছে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কেন্দ্রবিন্দু। এখান থেকে ভূমিকম্পের উৎস ৫০ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে হলেও ঢাকাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, ঢাকাতে সবচেয়ে বেশি জনগণের বাস। এখানে অপরিকল্পিত, অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণ এবং ভূমিকম্পের বিষয়ে মানুষদের মধ্যে চরম সচেতনতার অভাব রয়েছে। এ শহরের মানুষ জানে না ভূমিকম্পের সময় কী করতে হবে বা আগে কী কী প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। তারা এটিও জানে না যে ভূমিকম্পের সময় মানুষ কীভাবে নিরাপদে অবস্থান করবে। সরকারেরও এ বিষয়ে প্রস্তুতির অভাব রয়েছে।
তিনি বলেন, সামনে যেহেতু বড় ভূমিক¤প আমাদের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে এবং যেকোনো সময় এটি সংঘটিত হবে, সেহেতু অপরিকল্পিত এ নগরায়ণ ও জনবসতির মধ্যেই আমাদের নিরাপদ থাকতে হবে। এজন্য আমাদের কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। আমরা ইচ্ছা করলেই কম অর্থ ব্যয় করে এটি করতে পারি। ব্যাপক জনগণকে সচেতন করতে হবে। – ঢাকা পোস্ট

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com