স্টাফ রিপোর্টার ::
জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অতিক্রম করে তোমরা এখন বড় পরিসর, বড় জায়গায় যাবে। বড় পরিসরে অনেক কিছুই থাকে। সব সময় ভালোটাকেই নিতে হবে, ভালোর সঙ্গে থাকতে হবে।
সুনামগঞ্জে রবিবার প্রথম আলো ও শিখো’র আয়োজনে চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এমন সব পরামর্শ দিয়েছেন অতিথিবৃন্দ।
সুনামগঞ্জে অনুষ্ঠান হয় শহরের জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাসনরাজা মিলনায়তনে। সকাল ১০টায় বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর আগে ৯টা থেকেই শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করেন। মূল অনুষ্ঠান শুরু আগে তারা ক্রেস্ট, নাস্তা গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে আলোচনার সঙ্গে সংগীত, কুইজ, নৃত্য ও কবিতা আবৃত্তির পরিবেশনা ছিল। বন্ধুসভার সদস্যদের পাশাপাশি সংবর্ধিত শিক্ষার্থীরাও এসবে আয়োজনে অংশ নেয়। কুইজ পর্বে বিজয়ীরা পায় বই উপহার। এই পর্বটি পরিচালনা করেন বন্ধুসভার উপদেষ্টা এনাম আহমেদ। মজার মজার প্রশ্ন-উত্তরে পর্বটি শিক্ষার্থীরা বেশ উপভোগ করে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুনামগঞ্জ বন্ধুসভার যুগ্মসাধারণ স¤পাদক তাজকিরা হক তাজিন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সুনামগঞ্জে নিজস্ব প্রতিবেদক খলিল রহমান। অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর পরিমল কান্তি দে, সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সহসভাপতি রুনা শাহিন আরা লেইস, দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর সম্পাদক পঙ্কজ কান্তি দে, সিলেটে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক লেখক-গবেষক সুমনকুমার দাশ, সুনামগঞ্জ বন্ধুসভার উপদেষ্টা রাজু আহমেদ।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে পরিমল কান্তি দে বলেন, স্বপ্ন দেখো, পরিশ্রম করো, সফলতা আসবেই। নিজেকে সময় দাও, পরিবারকে সময় দাও বেশি। তোমরা প্রযুুক্তির সুবিধা অবশ্যই নেবে, তবে সেটার একটা সীমা থাকতে হবে। সারাক্ষণ মোবাইলে ডুবে থাকা যাবে না। সুনাগরিক হতে হবে। জানার পরিসর বাড়াতে হবে। বই, পত্রিকা পড়তে হবে। মনে রাখতে হবে, এই দেশটা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই দেশটা পেয়েছি। তাই দেশকে ভালো বাসতে হবে।
রুনা শাহিন আরা লেইস বলেন, আমাদের এই নতুন প্রজন্মেও কাছে অনেক প্রত্যাশা। আমরা এ রকম সংবর্ধনা পাইনি। এসব আয়োজন প্রেরণা জোগায়। সামনের দুটি বছর আরও গুরুত্বপূর্ণ। নিজের লক্ষ্যপূরণে আরও পরিশ্রম করতে হবে তোমাদের।
সুমনকুমার দাশ বলেন, ভালো মানুষ হবে হবে। জীবনের সব ক্ষেত্রে সততা, স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। অন্যের কোনো ক্ষতি না করা যাবে না। দেশকে ভালোবাসতে হবে। দেশকে ভালোবাসা মানে নিজেকেই ভালোবাসা। প্রথম আলোর সব আয়োজন ভালো কাজে উৎসাহ দেওয়া জন্য। প্রথম আলো সব সময় বাংলাদেশের জয় দেখতে চায়, তরুণ্যের জয় দেখতে চায়।
অনুষ্ঠানে ৪৫ কিলোমাটির দূরের জগন্নাথপুর উপজেলা থেকে আসা শিক্ষার্থী ফেরদৌস আহমদ বলেন, পরীক্ষার আগে থেকে চিন্তা করতাম ভালো ফল করতে হবে। ভালো ফল করতে না পারলে তো প্রথম আলোর অনুষ্ঠানে যেতে পারব না। আজ এসে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। পথের ক্লান্তি মুছে গেছে। সময়টা খুবই ভালো কাটল, আনন্দে কাটল। এ জন্য প্রথম আলো এবং শিখোকে ধন্যবাদ।
সুনমগঞ্জ শহরের সরকারি এসসি বালিকা উচ্চবিদ্যালযের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান মঞ্চে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ‘আমি ডাক্তার হয়ে আম্মুর গলা জড়িয়ে কাঁদতে চাই’ বলেন নুসরাত। সে জানায়, তার আম্মু তার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। তাকে স্কুলে, কোচিংয়ে সবখানে নিয়ে যেতেন। বলেছেন কলেজেও নিয়ে যাবেন।
মেয়েকে নিয়ে জেলার দিরাই উপজেলা থেকে এসেছিলেন শিক্ষক মো. সজিত মিয়া। তিনি বলেন, নিবন্ধন করার পর মেয়েটা এই অনুষ্ঠানের জন্য অপেক্ষায় ছিল। শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজনটি বেশ উপভোগ্য ছিল। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এখন অবারিত সুযোগ। ঘরে বসেই ঢাকার নামিদামি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঠ, পরামর্শ নেওয়া যায়। শিখোসহ অনেক প্রতিষ্ঠান সেটা করে দিচ্ছে। তাই গ্রাম আছি বলে, কেউ যেন হতাশ হয়ো না।
নিয়ম অনুযায়ী অনুষ্ঠানে মাদক, মুখস্থ ও মিথ্যাকে ‘না’ বলেছে শিক্ষার্থীরা। ভালো ছাত্র হওয়ার পাশাপাশি নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে দেশকে সমৃদ্ধ করারও সংকল্প করেছে তারা।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন বন্ধুসভার অদিতি দাস, শাহিদুর রহমান, আবুল হাসনাত, রিতা আচার্য, কৃতী শিক্ষার্থী বিনয় পাল, নৃত্য পরিবেশন করেন শর্মিষ্ঠা চৌধুরী, অন্যা বর্মণ ও কামরুন নাবিহা। সব শেষে বন্ধুসভার সভাপতি প্রদীপ পাল সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানে সমাপনী ঘোষণা করেন।
দেশের ৬৪ জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের উৎসবটি স্পন্সর করেছে বিকাশ। সহযোগিতা করছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।