হোসাইন আহমদ ::
শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ব্রিটিশ আমলের পুরাতন ঐতিহ্যবাহী বাজার হচ্ছে পাগলা বাজার। বাজারের উত্তর প্রান্তে মহাসিং নদী। ঐ পাড়ে পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের কাদিপুর গ্রাম। তার পাশে আছে জয়কলস ইউনিয়নের আসামপুর ও পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের বাদুল্লাপুর ও শরিয়তপুর গ্রাম। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই পাগলা বাজার থেকে এই গ্রামগুলোকে পৃথক করে রেখেছে মহাসিং নদী। জয়কলস ইউনিয়নের আসামপুর, পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের কাদিপুর, পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের বাদুল্লাহপুর, শরিয়তপুর, চিকারকান্দি, রনসীসহ অন্যান্য গ্রামের মানুষ আদিকাল থেকে যাতায়াত ও বাজার সওদা করতেন নৌকাযোগে পাগলা বাজারে এসে। এখনও এই এলাকার মানুষজন পাগলা বাজার হয়েই যাতায়ত করেন ও এই বাজারেই কেনাকাটা করেন। মহাসিং নদীতে ব্রিজ না থাকায় চরম দুর্ভোগে চলাচল ও জীবনযাপন করছেন তারা। চলাচলের একমাত্র ভরসা এখন খেয়া নৌকা। এলাকার অসুস্থ রোগী থেকে শুরু করে, বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ ও স্কুল কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়া নৌকায় যাতায়াত করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাগলা বাজারের উত্তরপ্রান্তে বিশাল মাছ বাজার। পাশেই মহাসিং নদী। নদীতে অসংখ্য ছোট-ছোট নৌকা। এই নৌকাযোগেই যাতায়াত করছেন- কাদিপুর ও আসামপুর গ্রামের মানুষ। তার সাথে যাতায়াত করছেন, বাদুল্লাপুর, রনসী, চিকারকান্দি গ্রামের মানুষও। নৌকাগুলো একেবারে লোড করে নৌকার মাঝিরা নৌকাঘাট থেকে ছেড়ে যাচ্ছেন। তার পাশাপাশি রাখা হয়েছে এপাড় ওপাড় করার জন্য আরেকটি খেয়া নৌকা। এই নৌকা দিয়ে নৌকা দিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন কাদিপুর ও আশপাশের মানুষজন। দেখার হাওর থেকে বিভিন্ন এলাকার জেলেরাও ছোট-ছোট মাছ ধরার নৌকায় করে পাগলাবাজারে আসছেন মাছ বিক্রয় করার জন্য। তবে দিনের বেলা এই নৌ-যোগাযোগ থাকলেও রাতের বেলায় কোন নৌকা বা খেয়া নৌকা থাকে না। রাতে এই এলাকার কেউ অসুস্থ হলে মারাত্মকভাবেই দুর্ভোগে পড়তে হয় এই এলাকার মানুষের।
কাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা আমিরুল হক জানান, জন্মের পর থেকেই আমরা খুব কষ্ট করে যাতায়াত করছি। আমাদের বাবা-দাদারাও এই কষ্ট করে গেছেন। এখন ডিজিটালযোগে এসেও আমাদের কষ্টের কোন সমাধান হয়নি। আমাদের বলার কিছু নাই। আমাদের ছেলে মেয়েরা ঠিকমত স্কুল কলেজে যাতায়াত করতে পারে না। রাতে কেউ অসুস্থ হলে এই রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া যায় না। সকালের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এরই মাধ্যে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। কেউ কেউ মারাও যান। এভাবেই আমাদের জীবন চলছে।
কাদিপুর গ্রামের সুজেরা বেগম জানান, আমাদের ছেলে-মেয়েরা ঠিক সময়ে স্কুলে যেতে পারে না। আমাদের খুব কষ্ট করে খেয়া নৌকা দিয়ে নদী পারাপার করতে হয়। একজন মেহমান আমাদের গ্রামে আসতে হয়ে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সেই সাথে কোন গর্ভবতী মহিলার ডেলিভারির সময় হলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া যায় না। আমরা এই নদীতে একটি ব্রিজ চাই। আমাদের নদীর উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে আমাদের ভাগ্যের পরির্বতন হতো।
কাদিপর গ্রামের সমাজসেবী সৈয়দুর রহমান সৈয়দ জানান, এই নদীতে একটি সেতু খুবই প্রয়োজন। দেশের মানুষ যেভাবে স্বপ্ন দেখেছিল পদ্মা সেতুর, তেমনি আমরা এই এলাকার মানুষ হিসাবে আমাদের মহাসিং নদীর পাগলা-কাদিপুর অংশে স্বপ্ন দেখি একটি সেতুর। আর এই স্বপ্নটি দেখিয়েছিলেন আমাদের এলাকার পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি। তিনি আমাদেরকে প্রথম থেকেই বলে আসছেন আমাদের মহাসিং নদীতে সেতু করে দিবেন। আমাদের একটাই দাবি আমরা পাগলা-কাদিপুরে এই সেতুটির বাস্তবায়ন চাই। মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি মহোদয়ের কাছে আমাদের এলাকাবাসীর জোর দাবি এই ব্রিজটি যেন দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আল-নুর তারেক জানান, এই ব্রিজ নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান আছে। আমরা সার্ভে করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে আরেকটি টিম ব্রিজটির ইস্টিমেট তৈরি করবেন। এরপরে এই ব্রিজের টেন্ডার আহ্বান করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আশা করি খুব শীঘ্রই এই ব্রিজটির কাজ শুরু করতে পারবো।