শহীদনূর আহমেদ ::
নিজের কোনো জায়গা বা ঘর ছিলনা। অন্যের জায়গায় থেকেছেন বছরের পর বছর। জীবনের শেষ বেলায় এসে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন অসহায় বৃদ্ধা।
বলছিলাম সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় আদারবাজারের গুচ্ছগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়া বিধবা সুবই বিবির কথা। ছোট মুদিদোকান দিয়ে আত্মনির্ভরশীতার প্রত্যয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন এই নারী। প্রধানন্ত্রীর ঘর পেয়ে বদলে গেছে সুবই বিবির জীবনের গল্প। স্বামী মনা মিয়া ছোট ছোট বাচ্চা রেখে মারা গেলে অসহায় হয়ে পড়েন তিনি। বছরের পর বছর মানুষের বাড়িতে আশ্রয় থেকেছেন। শহরের বস্তিতে কোনোভাবে দিনাতিপাত করে আসলেও জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে সন্তানরাও কাছে নেই সুবই বিবির। ষাট বয়স বয়সী এই বৃদ্ধার জীবনের শেষবেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে সুখ ধরা দিয়েছে। স্কুল পড়–য়া এক নাতনীকে নিয়ে আশ্রয়ণের ঘরের বারান্দা ছোট্ট দোকান দিয়ে ভালোমতেই চলছে সুবই বিবির সংসার। সুবই বিবির মতো আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আদারবাজার গুচ্ছগ্রামে নতুন ঘর পেয়েছেন ১৯৯টি পরিবার। সুরমা নদীর তীরে সারি সারিভাবে দাঁড়িয়ে থাকা লাল-সবুজের এসব রঙিন ঘর জানান দিচ্ছে উন্নয়ন অগ্রযাত্রার।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সুনামগঞ্জের শাল্লা, ধর্মপাশা ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলাকে ইতোমধ্যে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। জেলার ১২ উপজেলার তালিকাভুক্ত ৮ হাজার ৪৪৬টি পরিবারের মধ্যে ৮০৬১টি পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান করে পুনর্বার্সিত করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৩৮৫টি পরিবারের মধ্যে ঘর বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে এবং সেগুলোর কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভূমিহীন এসব পরিবারের জন্য সেমিপাকা দুই কক্ষ বিশিষ্ট ঘরের সামনে বারান্দা পেছনদিকে রান্নাঘর ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানেটারি ল্যাট্রিন রয়েছে। গুচ্ছগ্রামের ব্যারাকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ প্রদানের পাশাপাশি রয়েছে নিরাপদ সুপেয় পানির ব্যবস্থা। ক্লাস্টারভিত্তিক স্থাপিত প্রকল্প গ্রামগুলোতে সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিনন্দন লে-আউটের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ রাস্তা, কমিউনিটি সেন্টার, পুকুর, খেলারমাঠ, বাজারসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল এসব পরিবার স্থায়ী ঠিকানার পাশাপাশি সরকারের যুগান্তরকারী উদ্যোগের ফলে হাঁসমুরগী পালন, সবজিচাষ, ক্ষুদ্র ব্যবসা, সেলাইসহ বিভিন্ন আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করে নির্বাহ করছে জীবিকা। আদারবাজার গুচ্ছগ্রামের শুধু সুবই বিবি তাদের একজন। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর পেয়ে খুশি সুবই বিবির মতো মনমালা কিংবা আবুল হোসেনের মতো হাজার হাজার পরিবার।
সুবই বিবি (৬০) বলেন, জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। ছোট ছোট বাচ্চা রেখে স্বামী মারা গিয়েছিলেন। মানুষের বাড়িতে থেকে খেয়ে না খেয়ে দুইটি বাচ্চা বড় করেছি। মেয়ে বিয়ে দেয়ার পর ছেলেও বিয়ে করে জীবিকার তাগিদে সিলেটে থাকে। সন্তানরা তাদের পরিবারই চালাতে পারে না। আমি এই বয়সে অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। সরকার আমাকে ঘর দিয়েছে। যা স্বপ্নেও ভাবিনি। স্কুলপড়–য়া এক নাতনী নিয়ে গুচ্ছ গ্রামে থাকি। ছোট্ট একটি দোকান দিয়েছি। তা দিয়ে কোনোভাবে সম্মানের সহিত বেঁচে রয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ।
মনমালা নামের আরেক বিধবা নারী বলেন, আমার দুনিয়াতে কেউ নেই। আমার স্বামী নাই, সন্তান নাই। মানুষের আশ্রয়ে ছিলাম। আজ সরকার আমাকে নতুন ঘর দিয়েছে। আমার নিজের একটা ঠিকানা হয়েছে। শেষ বয়সে নিজের ঘরে মরতে পারবো এইটাই বড় কথা।
আবুল হোসেন নামের আরেক মুদি ব্যবসায়ী বলেন, আমি শহরের বড়পাড়ায় ভাড়া থাকতাম। আমার কোনো সহায় সম্পত্তি নেই। অনেক বছর আগে দুর্ঘটনায় আমি এক পা হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ি। সরকার আমাকের ঘর দিয়েছে। সরকারের দেয়া বাড়িতে থেকে ব্যবসা করছি। আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী চান কোনো মানুষ যাতে গৃহহীন ও ভূমিহীন না থাকে। ইতোমধ্যে জেলার ৩ উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। জেলার ৮০৬১ পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। অবশিষ্ট ঘর বরাদ্দ হয়েগেছে। পুনর্বাসিত এসব পরিবারকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রশাসন সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে। এসব ছিন্নমূল পরিবারের জীবনমান উন্নয়নে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক।