‘জগন্নাথপুরে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ, অভিযুক্ত গ্রেফতার।’ পত্রিকায় এবংবিধ সংবাদশিরোনাম ছাপা হওয়ার পর বোধ করি বিস্তারিত কীছু বলার দরকার নেই। বিষয়টা অতি পুরনো। সেই ইলিয়াড ও ওডিসির মহাকাব্যিক যুগ থেকে শুরু করে এখনও এমন ঘটনা অবধি চলছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতিচর্চার ফাঁকে ঘরেবাইরে, এমনকি প্রকাশ্য রাস্তায় পর্যন্ত দেদার ঘটে চলেছে, নির্বিবাদে। প্রতিরোধের যে কোনও নিয়মব্যবস্থা কিংবা আইন প্রণীত হয়নি এমনও নয়। ধর্মবিধানসহ রাষ্ট্রীয় আইন তৈরি হয়েছে। ইসলামে তো পূর্ণবয়স্ক নারীপুরুষ নির্বিশেষে বিবাহিতদের জন্য বিবাহবহির্ভূত যৌনসংষর্ঘের অপরাধে অর্থাৎ নিহিতার্থে ধর্ষণের অপরাধীকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পোঁতে পাথর ছোঁড়ে হত্যার বিধান রাখা হয়েছে এবং অপরদিকে রাষ্ট্রীয় আইন তো আছেই। কিন্তু ধর্ষণজনিত অপরাধে ইসলাম নির্ধারিত শাস্তি ‘রজম’ আমাদের দেশে সচরাচর উপেক্ষিত হয়ে আসছে এবং এখনও হচ্ছে এবং কোনও কোনও চিন্তাবিদ মনে করছেন এটা অত্যন্ত বর্বরোচিত একটি ব্যবস্থা, আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটা চলতে পারে না, কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো ধর্ষণ প্রতিরোধের কোনও যথাযথ বিধানও তাঁরা দিতে পারছেন না। আমরা বর্বরোচিত কোনও বিধানের বলয়ে আটকে থাকতে চাই না কিন্তু সেই সঙ্গে ধর্ষণের অপরাধীরা শাস্তি এড়িয়ে পার পেয়ে যাক, এটাও আমাদের কাম্য নয় বা হতে পারে না। আমার বর্বরতার আজুহাতে এবংবিধ প্রতিকারহীন সমালোচনার পক্ষপাতী নই। ধর্ষণ ঘটনার প্রতিকারের বিষয়ে সকলেই জানেন যে, এখানে রাষ্ট্রীয় আইন যথাযথ উপায়ে কার্যকর হয় না এবং ক্ষেত্রবিশেষে একেবারেই উপেক্ষা করা হয়। অপরদিকে দেশে আদালতের বিচারে ধর্ষণের অপরাধীর মৃত্যুদ-াদেশ একেবারেই হচ্ছে না এমনও নয়। মাঝে মাঝেই হচ্ছে এবং আমরা সাধারণ মানুষেরা আশ্বস্ত হচ্ছি। কিন্তু অর্থ-পেশী ও সামাজিক-রাজনীতিক প্রভাবের বদৌলতে এক শ্রেণির লোকেরা ধর্ষণের শাস্তিকে এড়িয়ে যেতে পারছে। তাই বোধ করি ধর্ষণ একবারে থামছে না।
এমতাবস্থায় ধর্ষণ প্রতিরোধে সমাজসচেতনতা বৃদ্ধির চেয়ে আইনের প্রয়োগকে আরও অধিক কার্যকর ও কার্যকরকরণে নিষ্ঠাবান হতে হবে। বিদগ্ধমহলের ধারণা, আইন প্রয়োগের কার্যকারিতা থেকেই ক্রমে সমাজসচেতনতা সৃষ্টি হবে। অর্থাৎ আইন প্রয়োগে আরও যথাযথ ও কঠোর হতে হবে। তদন্ত, প্রেফতার, অভিযোগ দায়ের, সাক্ষ্যগ্রহণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে কার্যকরভাবে আরও কঠোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনের প্রতি প্রশ্নহীন ও একান্ত একনিষ্ঠতা বজায় রাখতে হবে। ধর্ষণের ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য দরকার হলে আইনের নবায়নও করা যেতে পারে।