যে কোন রাষ্ট্রই তার ভালো দিকগুলো তুলে ধরতে চাইবে। এতে দোষের কিছু নেই। উন্নত অনেক রাষ্ট্র নিজের দেশকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে বিলিয়ন ডলার খরচ করে। কিছু দিন আগে এ এফ পি তে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনটির মূল কথা ছিলো বাংলাদেশের প্রশংসা করে বেশ কিছু লেখক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কলাম লিখেছেন, এই কলাম নিয়ে তাদের সমস্যা নেই, তাদের সমস্যা এর মধ্যে দুই তিনজনের পরিচয় তারা পায় নি। আবার এর মধ্যে কয়েকজনের নাকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন না। এই রিপোর্টি যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে করা হয়েছে তা বললে খুব বেশি ভুল হবে না, কারণ কলামে কি লেখা তা নিয়ে আলোচনা না করে তার লেখকদের খুঁজে বের করার প্রয়াস নিশ্চয়ই সাধারণ কোন সাংবাদিক করবে না, আর বিশ্বে হাজারও গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ থাকা সত্তেও এমন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা এ এফ পির মতো নিউজ এজেন্সিকে প্রশ্নের মুখোমুখি ফেলে দেয়।
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে বহু কাল আগে থেকে ছদ্মনামে লেখালেখি করে আসছেন কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ অনেকেই, বাংলাদেশে এই প্রবণতা অনেক বেশি, ষাট-সত্তর দশকের অনেক কবি সাংবাদিক ছদ্মনামে লেখালেখি করতেন, ভানুসিংহ, নুরু, ধূমকেতু, মজলুম আদিবসহ নানান নামে লিখতেন রবীন্দ্র নজরুলরা, ছদ্মনামে লেখাটা দোষের কিছু না, লেখক কেন ছদ্মনামে লিখছেন এটা নিয়ে প্রশ্ন করাটাই এক ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি করে, যুগে যুগে যারা ছদ্মনামে লিখে আসছেন তাদের নিয়ে তো কোন প্রশ্ন হয় না। তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়নের কথা বিশ্ববাসীকে জানালে কেন কিছু কিছু মানুষের গাত্র দাহ হয়?
ঐ অনুসন্ধান রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ঐ সকল লেখকরা নাকি গুজব ছড়িয়েছেন, কিন্তু কোথাও কোন কোন তথ্যগুলো গুজব তা স্পষ্ট করা হয় নি। বাংলাদেশে যে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে তা গুজবের কিছু নেই, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে, এটা যে কেউ বিশ্বাস করবে। আর বাংলাদেশের বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনীতিক স¤পর্ক নিয়ে কলামে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানেও ভুল কোন তথ্য দেয়া হয় নি। বাংলাদেশের সংবিধানে বলা আছে সকল দেশের সাথেই বন্ধুত্বপূর্ণ স¤পর্ক বজায় রাখবে, কারো সাথে বৈরিতা নয়, সে নীতি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সফলভাবে মেনে চলছে। একই সাথে চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যের সাথে ভালো স¤পর্ক বজায় রাখা সহজ কাজ নয়, কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দুর্বোধ্য কাজটি সহজেই করে যাচ্ছেন। তাহলে এএফপি’র রিপোর্টে শুধু লেখকের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে যা অপ্রাসঙ্গিক ও পক্ষপাতমূলক এবং নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি কুচক্রি মহলের কাজ। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে- তারা একজন লেখকের ইমেইলে যোগাযোগ করেছেন এবং উত্তর ও মিলেছে, যেখানে লেখক স্পষ্ট করে লিখেছেন ব্যক্তিগত কারণে উনি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন যা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা, এ নিয়ে জল ঘোলা করার কিছু নেই। মূল কথা, বাংলাদেশে উন্নয়ন, গণতন্ত্র চলমান থাকুক তা একটা বিশেষ মহল চায় না।
একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা চায় বাংলাদেশ আবারো স্বৈরশাসকের যুগে ফিরে যাক, দুর্নীতিতে চ্যা¤িপয়ন হউক আবারও, একটা সময় বাংলাদেশ বলতে অনুন্নত, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আগুন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের আশ্রয়স্থল হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পরিগণিত হতো, কিন্তু এখন বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ও গণতন্ত্র বজায় রাখতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। বিশ্ব গণমাধ্যমে এমন বিষয় নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করাকে সন্দেহের চোখে দেখতে সমস্যা নেই। এর পেছনে একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী কাজ করছে দীর্ঘদিন থেকে, যার প্রমাণ আমরা অতীতে দেখেছি, বাংলাদেশকে বিদেশিদের কাছে ব্যার্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে, এই রিপোর্টি তারই অংশ বিশেষ, এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এরকম উদ্দেশ্য প্রণোদিত রিপোর্ট আরো প্রকাশিত হলে আমরা মোটেও অবাক হবো না, তবে এমন উদ্দেশ্য প্রণোদিত রিপোর্ট সাংবাদিকতার নীতি নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
আমাদের আরো সচেতন হতে হবে, এমন উদ্দেশ্য প্রণোদিত রিপোর্ট নিয়ে আমাদের দেশের একটা মহল ও সংবাদমাধ্যম বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করছে, কিন্তু প্রশ্ন হলো যে বিষয়টা সত্য তা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে এত বাধা কেন? কারা এই বাধা তৈরি করছে, তাদের চিহ্নিত করা উচিত, একাত্তরে যেমন একদল বিরোধিতা করেছিলো সে রকম একটা অংশ এখনও সক্রিয়, সরকারের উচিত হবে এদেরকে অতিদ্রুত চিহ্নিত করা এবং জনমনে আতঙ্ক ছড়ানোর দায়ে ব্যবস্থা নেয়া। সমাজের জাগ্রত বিবেকেরা যদি একটি দেশের উন্নয়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তাহলে আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে হবে।
লেখক: সাইফুল ইসলাম, প্রভাষক, লোক প্রশাসন বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।