মো. সাজ্জাদ হোসেন শাহ্ ::
দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ৩ শুল্ক স্টেশন তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী (বীরেন্দ্রনগর)। এ তিন শুল্ক স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে আমদানিকৃত কোটি কোটি টাকার কয়লা ও চুনাপাথর নৌপথে দেশের নানা প্রান্তে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু গত দু’তিন মাস ধরে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে সরকারি খাস কালেকশন ও বিআইডব্লিউটিএ’র নামে উপজেলার পাটলাই নদীতে স্থানীয় দুটি সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্র প্রতিটি ১২০-৩০০টন কয়লা ও চুনাপাথর পরিবহনকারী বাল্কহেড নৌকা থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করছে। শুধু তাই নয় তাদের দাবিকৃত টাকা পরিশোধ না করলে নৌকা আটকে রাখাসহ নৌশ্রমিকদের মারধর করা হয়।
গত কয়েকদিন ধরে আমদানিকারক, নৌ মালিক ও ইজারাদারের লোকজন একাধিকবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেও কোন ধরনের সমাধান না হওয়ায় গত শনিবার সকাল থেকে তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপ এক জরুরি সভা ডেকে টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তিন শুল্ক স্টেশনে অনির্দিষ্টকালের জন্য কয়লা-চুনাপাথর বিক্রি ও পরিবহন বন্ধ ঘোষণা করেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের পাটলাই নদীর মন্দিয়াতা গ্রামের সামনে বিআইডব্লিউটি-এর নামে টোল আদায় করছে তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাটের বাসিন্দা মেসার্স সোহাগ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. রতন মিয়ার লোক উপজেলার তরং গ্রামের বদর উদ্দিনের ছেলে স¤্রাট আকবর, একই গ্রামের আলী আমজাদ আখঞ্জীর ছেলে হোসেন আখঞ্জী।
অপরদিকে সরকারি খাস কালেকশনের নামে পাটলাই নদীর ডাম্পেরবাজার ও শ্রীপুর বাজার সংলগ্ন এলাকা থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। শ্রীপুর বাজারে চাঁদা আদায়কারি উপজেলার মন্দিয়াতা গ্রামের মৃত তোতা মিয়ার ছেলে জেলা শ্রমিকলীগের সহ-সভাপতি মতিউর রহমান মতি, সাজিনুরের ছেলে জিলানী, শাহিন মিয়া ও তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের সূর্য্যরেগাঁও গ্রামের প্রদীপ দাস।
চারাগাঁও শুল্ক স্টেশনের কয়লা ব্যবসায়ী কাজী মিজানুর রহমান বলেন, বিআইডব্লিউটি’র নামে নৌকাপ্রতি থেকে ১৫-২০ হাজার টাকা দাবি করে চাঁদাবাজরা। এছাড়া খাস কালেকশনের নামেও নৌকা থেকে ১০-১১ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের লোকজন। এদের যন্ত্রণায় আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি।
ফরিদপুরগামী নৌকার চালক আশরাফ মিয়া বলেন, বিআইডব্লিউটিএ এবং খাস কালেকশনের লোকজন তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে আমাদের নৌকা আটকেরাখাসহ নৌকায় থাকা শ্রমিকদের মারপিটও করে।
এদিকে তিন শুল্ক স্টেশনে কয়লা-চুনাপাথর বিক্রি ও পরিবহন বন্ধ হওয়ায় উপজেলার পাটলাই নদীর ডাম্পেরবাজার ও মন্দিয়াতা গ্রামের সামনে শত শত কয়লা ও চুনাপাথরবাহী নৌকা অলস সময় পার করছে। এতে করে নৌ-মালিক, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদেরকে চরম দুর্ভোগ ও লোকসান গুনতে হচ্ছে।
তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সচিব রাজেশ তালুকদার বলেন, অনেক ব্যবসায়ী তাকে পাটলাই নদীতে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়টি জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমদানিকারক গ্রুপের নেতৃবৃন্দ আলোচনা করে গত শনিবার থেকে উপজেলার তিন শুল্ক স্টেশনে কয়লা-চুনাপাথর বিক্রি ও পরিবহন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন।
জানতে চাইলে খাস কালেকশন আদায়কারী মতিউর রহমান মতি অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমরা এখানে কিছুই না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের লোকজন এখানে থাকেন। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করি।
সোহাগ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রতন মিয়া বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায় করবো কোনো। প্রতি টন কয়লা ও চুনাপাথর থেকে ৩৪ টাকা টোল আদায়ের নিয়ম থাকলেও আমরা আদায় করছি ২৫ টাকা করে।
তাহিরপুর থানার ওসি সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, বিষয়টি মৌখিকভাবে জেনেছি। তবে এ বিষয়ে কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।