1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪৫ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

কী বলছেন আসিফ নজরুল! কেন বলছেন? : কঙ্কা কণিষ্কা

  • আপডেট সময় রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর পর আবার আলোচনায় এসেছেন আসিফ নজরুল। বিভিন্ন টকশো এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি বলার চেষ্টা করেছেন সাঈদীর বিচর প্রক্রিয়া ঠিক ছিল না। তিনি বলছেন না বলতে বাধ্য হচ্ছেন এনিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে। তবে আপাতত আমরা বলি তিনি বলছেন। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে কত লোক কত কি বলে, তাহলে তার বলা নিয়ে বিস্ময় কেন? আসলে এই বলা শুধু নয়, আসিফ নজরুল নিজেই একটা বিস্ময়। ইদানিং তিনি সরকারবিরোধী প্রোপাগা-ার গতি বাড়িয়েছেন।
ভালই ছিলেন আসিফ। করে কেটে খাচ্ছিলেন। এর মধ্যে চলছিল তার নানা অ্যাজন্ডো বাস্তবায়ন। বেশকিছু দিন পাত্তা ছিল না বাজারে। সাঈদীর মরে গিয়েই গোলটা বাধালো। কারণ এই সাঈদীকে প্রথম বড় করে গণমাধ্যমে এনেছিলেন আসিফ। সাঈদী ভক্তরা এজন্য তাকে অভিস¤পাত করছিলেন। এরকম রিপোর্টের জন্যে অন্য কোন সাংবাদিক হলে হয়তো বুক চিতিয়ে বলতো আমিই সেই। কিন্তু কেবলা বদলের কারণে আসিফ সাহেব সেটা বলতে পারছেন না। তাই কথা নিয়ে নানা দিকে ঘুরপাক খাচ্ছিলেন।
তিনি যাই খান আমার আপত্তি নেই। তিনি যখন বলেন ওটা আমার মতামত ছিল না। রিপোর্ট ছিল। এখন সাঈদী ভক্তদের রোষে পড়তে চাচ্ছিলেন না। কিন্তু তিনি বুঝলেন না। রিপোর্ট করেই তিনি সাঈদীকে বেশি বিপদে ফেলেছেন। কারণ মতামত সত্য বা মিথ্য হয় না। এটা কারও মত। কেউ একমত হতে পারে নাও পারে। কিন্তু রিপোর্ট সত্য হতে হবে। এখন ভক্তদের খুশি করতে আসিফের বলা দরকার ছিল “আমার রিপোর্ট মিথ্যা ছিল” তা তিনি বলেন নি।
অবশ্য ইদানিং আসিফের কথা বলার যে অবস্থা, তাতে যেকোন সময় আসিফ বলে ফেলতে পারেন আমার রিপোর্টটি মিথ্যা ছিল। আরেকটু নাটকীয় করে লিখতে পারেন “শাহরিয়ার ভাই যেভাবে আমাকে রিপোর্টটি করিয়েছিলেন” অবাক হওয়ার কিছু নেই। যদিও এখনও কেউ কেউ অবাক হতে পারেন। এই লেখাটি মূলত তাদের জন্যে। ইদানিং তার এক লেখায ড. ইউনূসের যে বন্দনা দেখলাম। তাতে তাকে চিনিয়ে দেয়া ছাড়া উপায় কী? বলা কী যায়! তিনি কখন তার পরিবার নিয়ে ইউএস অ্যাম্বেসির বারান্দায় ঠাঁই নেন।
আমাদের গণমাধ্যমগুলো বলছে, আসিফকে চিনতে যেতে হবে ১৯৯৩ সালে। দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারেরর জন্যে গণআদালত গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। ৮ই ফেব্রুয়ারি ক্যান্সার চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখে তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশ ফিরেছেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। কারণ সারাদেশ থেকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সদস্যরা যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শেষে রিপোর্ট ঢাকা পাঠিয়েছেন। কিন্তু তিন মাসেও গণআদালতের তদন্ত রিপোর্ট হয়নি। এই রিপোর্টের খসড়া তৈরির দায়িত্ব ছিল আসিফের উপর। সব কাগজপত্র ছিল তার কাছে। কেউ তাকে খুঁজে পাচ্ছিলো না, একেকবার একেক কথা বলে দেরি করছিলেন আসিফ, ঘুরাচ্ছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্তদের। জাহানারা ইমাম আমেরিকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেশ কয়েকবার চিঠি লিখলেও কোনো কাজ হয়নি। তড়িঘড়ি করে দেশে ফিরেই তিনি দেখা করেন আসিফের সঙ্গে। আসিফ তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের আইন অনুষদের একজন শিক্ষক এবং গণআদালতের যুগ্ম-আহ্বায়ক।
জাহানারা ইমাম এয়ারপোর্টে নেমে সরাসরি দেখা করেতে যান আসিফের বাসায়। আসিফ বলেছিল “আম্মা, তুমি কোন চিন্তা করো না। আমি ১০ দিনের মধ্যে সব কাজ শেষ করে রিপোর্ট তোমার হাতে তুলে দেবো”। নিশ্চিন্ত হয়ে ফিরে গিয়েছিলেন জাহানারা ইমাম।
কমিশনের সাথে কথা বলে স্বাধীনতার ২২তম বার্ষিকী এবং গণআদালতের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২৬ মার্চ, ১৯৯৪ সালে গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করার ঘোষণা দেন। কিন্তু আসিফ গণআদালতের প্রতিবেদন জমা না দিয়ে চিঠি লিখেছিলেন জাহানারা ইমামকে। চিঠিতে বলেন, তার নিজের মা আসিফের ভবিষ্যৎ ও ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে এসব কাজে জড়াতে নিষেধ করেছেন। প্রায় চার মাস বিভিন্ন বাহানায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখে, পুরো গণআদালতের তদন্ত কমিশনকে পথে বসিয়ে দেয় তিনি। শেষ মুহূর্তে তার কাছে তদন্ত কমিশনের মাঠ পর্যায়ের সব রিপোর্ট ফেরত আনতে লোক পাঠান শহীদ জননী জাহানারা ইমাম।
তখন আসিফ আরও বলেন, “আমার কমনওয়েলথ স্কলারশিপ পাবার সম্ভাবনা আছে। আইন বিভাগের চেয়ারম্যান বলেছেন, এইসব কাজে যুক্ত থাকলে আমি স্কলারশিপ পাবো না। আপনাদের মতো সাহস আমার নেই। আমি ক্যারিয়ারের কথা ভাবি। এবার স্কলারশিপ হাতছাড়া হলে আবার কবে পাবো তার কোন ঠিক নাই। আমি আম্মার (শহীদ জননী জাহানারা ইমাম) কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবো।”
এরপরে আসিফ নজরুল আর কোনোদিন শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সাথে সাক্ষাৎ করেননি। তার ক্ষমা চাইবার কথা শুনে জাহানারা ইমাম বলেছিলেন, “ওর মতো ছেলের মুখ আমি দেখতে চাই না। ওকে বারণ করে দিবি আমার বাসায় যেন না আসে।”
এই ঘটনার পর অনেকেই বলেছিলেন আসিফ নজরুলের সঙ্গে শুরু থেকেই যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্ক ছিল। সে আসলে ছিল যুদ্ধাপরাধীদের চর। এসবের আরও প্রমাণ পাওয়ার যায়। যেমন ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে মীর কাশেম আলীর বুদ্ধিজীবী কেনার মিশনে আসিফ আছে কি না, সেই সন্দেহ ঘনীভূত হয় কালের কণ্ঠ পত্রিকার ২৭ আগস্ট ২০১০ তারিখের প্রতিবেদনে।
সেদিন জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর আমির রফিকুল ইসলামের গ্রেফতারের একটি খবর প্রকাশিত হয়। জামায়াতের আমির রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে নানান কাগজপত্র থেকে গণমাধ্যমগুলো জামায়াতের এক নীল নকশার চিত্র প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে ঘন ঘন সেমিনার করতে হবে, যারা সরাসরি জামায়াতের রাজনীতি করেন না, এরকম লোকদের এসব সেমিনারে হাজির করতে হবে। সেই তালিকায় যাদের নাম ছিল তাদের মধ্যে আসিফ নজরুলের নাম অন্যতম।
বিএনপি সরকার গণআদালত গঠনের কারণে ২৪ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেয়। আসিফ নজরুলও সেই মামলার আসামি ছিলেন। অন্যসব আসামি সরকারি হয়রানির শিকার হলেও আসিফ নজরুল সেই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে লন্ডনে পাড়ি জমান। গণতদন্ত কমিশনের সংশ্লিষ্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সূত্র থেকে জানা যায়, প্রকৃতপক্ষে তাকে স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছিল গণতদন্ত কমিশনের সকল গোপন তথ্য তৎকালীন বিএনপি সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার শর্তে। তিনি কাজটি করেছিলেন।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আলোচনায় আসিফ নজরুল তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। সে হামলার পর কেন মিছিল করা হল, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং ঘটনাকে সাজানো নাটক বলতেও দ্বিধা করেননি। এমন কী মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ যে লাঠি চার্জ করে, তা নিয়েও তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে, সরকার আর কী-ই-বা করতে পারত লাঠিচার্জ ছাড়া। এখনও তিনি বিভিন্ন টিভি টকশোতে জামায়াত-বিএনপির পক্ষ নিয়ে মিথ্যাচার করছেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com