1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:২৮ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

উপসম্পাদকীয় : কোন স্বপ্নই অপূরণীয় থাকবে না

  • আপডেট সময় শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বাংলাদেশের মানুষ সারাজীবন শুনে এসেছে, এদেশ হবে সিঙ্গাপুর। যারা সিঙ্গাপুর দেখেননি তারা ভেবেই নিয়েছেন সেটা নিশ্চয় সুন্দর জায়গা, নাহলে কেনো সবাই সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দিয়ে এদেশটাকে সিঙ্গাপুর বানাতে চায়। অথচ ধারাবাহিক উন্নয়নের হাত ধরে সুন্দর হচ্ছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার আরেকটি পালক যুক্ত হলো পদ্মাসেতু দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরুর মধ্য দিয়ে।
কী হতো এতোদিন? পদ্মাসেতু হওয়ার আগে ভয়ঙ্কর হয়রানির মধ্য দিয়ে পথ পাড়ি দিতো দু’পারের মানুষ। কেবল ফেরির অপেক্ষায় বসে থাকতে হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর নদীর ডুবোচরে আটকে গেলে ভিন্ন বাস্তবতা। কখন ফেরি ভিড়বে তার কোন হিসেব ছিলো না। কিন্তু সময় বদলে গেছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় শত বাধার মুখে পদ্মাসেতু হয়েছে। আজ সেই সেতুর রেল লাইন পেরিয়ে ট্রেনও পার হয়ে ভাঙা গেলো।
মনে পড়ে ১৯৯৮ সালের কথা। তৎকালীন ও বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা জুন ২৩, ১৯৯৮ সালে উত্তরবঙ্গে যোগাযোগ সুবিধার জন্যে বঙ্গবন্ধু সেতু চলাচলের জন্যে উন্মুক্ত করেন। প্রথমদিন ট্রেন চালু হবে কি হবে না সে নিয়ে কী ভীষণ উৎকণ্ঠা ছিল। পরে সেটা সম্ভব হয়েছিল শেখ হাসিনার ঐকান্তিক চেষ্টা ও পরিকল্পনায়। দীর্ঘদিন মূল স্ট্রাকচারে ট্রেন চলাচলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সেতু, সেজন্য আলাদা করে বঙ্গবন্ধু রেলসেতু করার পরিকল্পনা করা হয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে আলোর মুখ দেখছে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু রেলসেতু।
পদ্মা রেলসেতুর কারণে পুরো দেশের সাথে রেল সংযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, আগামী ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন এই রেলপথের উদ্বোধন করবেন। পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রায় ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণ করছে রেলওয়ে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ চালু হচ্ছে।
আগামী বছর জুনে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চালু হওয়ার কথা। উদ্বোধনের এক সপ্তাহ পর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। শুরুতে একটি ট্রেন পরিচালনা করা হবে। প্রকল্প কার্যালয় থেকে ঢাকা-পদ্মা সেতু-রাজবাড়ী রুটে ট্রেন চালানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে রাজশাহী থেকে মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা পর্যন্ত আনার একটি প্রস্তাব রয়েছে। মধুমতী এক্সপ্রেস এখনই সপ্তাহে ছয় দিন রাজশাহী থেকে ফরিদপুরের ভাঙা পর্যন্ত আসে। পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের অধীনে এরই মধ্যে চীন থেকে ১০০ নতুন কোচও কেনা হয়েছে।
এই বিশাল রেলের সংযোগের কাজ যখন শুরু হয়েছিল সেই ১৯৯৮ সালে। বাংলাদেশ তখন উন্নয়নের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে মাত্র। দেশটা ভৌগোলিকভাবে দুই খ-ে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকায় অর্থনৈতিক কর্মকা-ও ব্যাহত হতো। এপারের উন্নয়ন ওপারে পৌঁছাতো না বললেই চলে। সেতু যোগাযোগ নিশ্চিত হওয়ার মধ্য দিয়ে সে এক ব্যাপক সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের দিকে যাত্রা শুরু হয়।
বর্তমানে প্রতিদিন ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে বঙ্গবন্ধু সেতু পারাপার হওয়া সময়ের অপচয় হচ্ছে। পাশাপাশি ঘটছে সিডিউল বিপর্যয়। বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। এমন সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর উপর আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিল। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু রেল সেতুটির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে রেল সেতু প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে জাইকা।
আজ বেশকিছু গণমাধ্যমকর্মীর উপস্থিতিতে যখন রেললাইন ভাঙার পথে রওনা দিয়েছে, তখন মনে পড়ে সেই ষড়যন্ত্রের কথা। যার মাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনূস চেয়েছিলেন পদ্মাসেতু না হোক। বিশ্বব্যাংকের টাকা স্থগিত করার জন্য বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য কী অপচেষ্টাইনা ছিলো তখন।
৩০ জুন ২০১২ বিবিসি বাংলা প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিলো- পদ্মা সেতুতে ঋণ দেবে না বিশ্বব্যাংক। রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মানের জন্য বিশ্ব ব্যাংক যে ১২০ কোটি ডলার ঋণ দিতে চেয়েছিল দুর্নীতির অভিযোগ এনে দীর্ঘ বিতর্কের পর শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক তাদের ঋণ দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তর ওয়াশিংটন থেকে জারী করা এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলে, এই সেতু নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত চলছিল। সেসময় বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা করেনি। তাই এই পদক্ষেপ নিয়েছে ।
এরপর ছিলো অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণে তথ্য হাজির করা। নানাবিধ পরিস্থিতিতে জানা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স¤পৃক্ততা ছিলো এই নেতিবাচক ক্যা¤েপইন সফল করতে। ভুলে গেলে চলবে না, ২০১৩ সালে মাত্র ছয় মাস পরে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছিলো। সেই বিবিসিতেই প্রতিবেদন হয়েছিলো। যার শিরোনাম ছিলো- পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ চায় না বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ সহায়তার অনুরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের কর্মকর্তা মেহরিন মাহবুব বিবিসি বাংলাকে জানান, বৃহ¯পতিবার বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এই মর্মে তাদের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়।
আজকের দিনে এসে এই দুই শিরদাঁড়া সোজা করে রাখা বাংলাদেশের ছবি চোখের সামনে বলে আত্মমর্যাদার গল্প। বলে দেয়,এখন কেবল আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখার দিন নেই, এখন স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com