এই সংবাদ পাঠ করার পর যৎকিঞ্চিৎ বিবেকসম্পন্ন মানুষের তরফেও বিব্রতবোধ করা ছাড়া কোনও গতি নেই। এই বেগতিকতার কোনও পরিমাপ ও পরিসীমা নেই। জাতির হৃদয় থেকে পতাকার উপর এ এক অন্তহীন রক্তক্ষরণের প্রতিরূপÑ কলঙ্ক লেপনের চলমান যজ্ঞ। তাত্ত্বিকরা যাকে পুরুষতান্ত্রিকতা নামে অভিহিত করেছেন। সমাজের সর্বস্তরে প্রচলিত এই পুরুষতান্ত্রিকতার প্রতিরোধ চাই। এই রক্তক্ষরণ কখনও তীব্র হচ্ছে কখনও কীছুটা স্থিমিত কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যেও স্তব্ধ হচ্ছে না। ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি লেখার শিরোনাম ছিল, ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন বেশি বিএনপি-জায়াত আমলেই’। এই প্রবন্ধের শুরুতেই লেখা হয়েছে, “পূর্ণিমা রাণী শীলের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। ২০০১ সালে পূর্ণিমার বয়স মাত্র তেরো বছর। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সে। গ্রামের ৮-১০টি কিশোরীর মতো উচ্ছল চঞ্চল প্রাণে বেড়ে উঠছিল। কিন্তু ১৩ বছর বয়সে, ২০০১ সালের ৮ অক্টোবর তার জীবনে নেমে আসে কালো অন্ধকার। তছনছ করে দেয় তার তারুণ্যে ভরা জীবনকে। সেই রাতে পূর্ণিমার বাড়িতে হামলা চালায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এরপর পূর্ণিমা আর তার মা’কে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির পাশের একটি ক্ষেতে। পনেরো থেকে বিশজন বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার ধর্ষণ করে কিশোরী পূর্ণিমাকে। মায়ের সামনেই মেয়ের ছোট্ট শরীরটার ওপর অত্যাচার চালিয়েছিল নরপিশাচের দল। কান্না করতে করতে পশুগুলোর কাছে মিনতি করছিলেন মা। বলছিলেন, “বাবারা, আমার মেয়েটা ছোট তোমরা একজন একজন করে এসো, নইলে ও মরে যাবে।” ১৩ শব্দের বাক্যে একজন মায়ের আকুতি কী আমরা ভুলে গেছি।” এরপর লেখক দু’টি দলধর্ষণের বা সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার উল্লেখ করেছেন। এই ধর্ষণের ঘটনাগুলোর সঙ্গে রাজনীতির নেতারা জড়িত। একটিতে তো ২০০ নারীকে ধর্ষণের ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, এই ধর্ষিতাদের মধ্যে ৮ বছরের মেয়েসহ ৭০ বছরের বুড়ি পর্যন্ত ছিলেন।
তারপর ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদশিরোনাম, ‘চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ’। সংবাদবিরণীতে লেখা হয়েছে, “চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেছে এক বখাটে। নির্যাতিত ওই ছাত্রীকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে মামলা না করার জন্য হতদরিদ্র পরিবারকে চাপ দিচ্ছে বখাটের পরিবার ও স্বজনরা।”
প্রতিষ্ঠিত সমাজসংস্থিতির পরিসরে আত্মসাতের প্রক্রিয়া উজ্জীবিত রাখতে অত্যাচার নিপীড়ন চলছে চলবে, রাজনীতির বিভিন্ন রূপে-রূপান্তরে তার আবির্ভাব ঘটবে, বিজ্ঞজনেরা তার নাম দেবেন কাঠামোগত সহিংসতা। এমনসব সহিংসতার কা-কারখানা অর্থাৎ সহিংসতার প্রপঞ্চটি যখন সম্পদ আত্মসাতের পরিসর ছাড়িয়ে ধর্ষণ থেকে দলধর্ষণে পর্যবসিত হয় তখন সত্যিকার অর্থেই সভ্যতার কলঙ্কিত মুখ দেখে একাধারে বিস্মিত ও বিব্রত হতে হয়। এই ধর্ষণের এবং এই বিব্রত হওয়া থেকে আপাতত রক্ষা পাওয়ার একটাই পথ আছে আর সেটা হলো রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে প্রতিকারের অব্যর্থ ব্যবস্থা করা। অব্যর্থ এই অর্থে যে, সামাজিক-রাজনীতিক কোনও অজুহাতেই বা কোনও জাগতিক স্বার্থদ্ধোরের কল্যাণে অর্থাৎ কোনওরূপ অনিয়ম-দুর্নীতির অবলম্বন করার কারণে ধর্ষণের প্রতিকার করার ক্ষেত্রে কোনও বতিক্রম হবে না।