স্টাফ রিপোর্টার ::
দুষ্টের দমন আর সাধুদের রক্ষার জন্য প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে দ্বাপর যুগে ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রীকৃষ্ণ ধরাধামে আবির্ভূত হয়েছিলেন। দিনটি ছিলো ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথি। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই তিথিটিকে ‘জন্মাষ্টমী’ উৎসব হিসেবে উদযাপন করে থাকেন। বুধবার সারাদেশের ন্যায় সুনামগঞ্জে আনন্দোৎসবের মধ্যে দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব দিবস ‘জন্মাষ্টমী’ উদযাপিত হয়েছে। বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, পূজা অর্চনা, প্রসাদ বিতরণ ও নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
বুধবার সকালে জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে শহরে অনুষ্ঠিত মঙ্গল শোভাযাত্রায় সহ¯্রাধিক কৃষ্ণ অনুরাগী অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রাটি কালীবাড়ি মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এসময় শিশুদের কৃষ্ণরূপ ধারণসহ রঙবেরঙের সাজে সজ্জিত হন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। শোভাযাত্রায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক নোমান বখত পলিন, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর রজত কান্তি সোম মানস, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ স¤পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান পীর, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদে সভাপতি অ্যাডভোকেট বিমান কান্তি রায়, সাধারণ স¤পাদক বিমল বণিক, জেলা জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাড. রাধাকান্ত সূত্রধর, সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ নন্দী, অ্যাড. মলয় চক্রবর্তী রাজু, অ্যাড. বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, গৌরাঙ্গপদ দাস, পৌর কাউন্সিলর চঞ্চল কুমার লোহ প্রমুখ।
অপরদিকে, শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বুধবার বিকেলে আলোচনা সভা, দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রার্থনা, মন্দির সংস্কার ও অসচ্ছল ব্যক্তিদের চেক বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিউর মন্দিরে এই কর্মসূচির আয়োজন করে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট সুনামগঞ্জ জেলা কার্যালয়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর পরিমল কান্তি দে। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ যোগেশ্বর দাস, শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিউর মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ স¤পাদক বিজয় তালুকদার বিজু, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাড. বিমান কান্তি রায়, সাধারণ স¤পাদক বিমল বণিক, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জেলা শাখার সাধারণ স¤পাদক অ্যাড. বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি অ্যাড. গৌরাঙ্গপদ দাস, শান্তিগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জ্যোতিভূষণ তালুকদার ঝন্টু, শহরের কেন্দ্রীয় দুর্গাবাড়ি মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ স¤পাদক সুবিমল চক্রবর্তী চন্দন, পুরোহিত সেবায়িত প্রশিক্ষক নারায়ণ চক্রবর্তী ও অ্যাড. অশোক গোশ্বামী, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ জেলা শাখার সাধারণ স¤পাদক প্রসেনজিৎ নন্দি।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট সুনামগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রবিন আচার্য্য।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন পুরোহিত সেবায়িত প্রশিক্ষক অমিত চক্রবর্তী।
আলোচনা সভা শেষে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা পাঠ করেন নির্মল চক্রবর্তী।
পরে মন্দির সংস্কারকাজের জন্য জেলার বিভিন্ন স্থানের ১৬টি মন্দিরে ৩০ হাজার টাকা করে এবং অসচ্ছল পুরোহিত সেবায়িত ১৫ জনকে ৫ হাজার টাকা করে চেক প্রদান করা হয়।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষাবিদ যোগেশ্বর দাস বলেন, ভগবানের জন্ম হয় না। আবির্ভূত হয়েছেন। সুর ও অসুর দুই প্রকারের মানুষ রয়েছে। যাদের মধ্যে সুর আছে, তারা সমাজে ভাল করে। যাদের মধ্যে অসুর বিরাজমান, তারা সমাজে অনিষ্ঠ করে। এই জন্য অসুরকে বিনাশ করতে ধর্মের কাজ করতে হবে মনোযোগী হয়ে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর পরিমল কান্তি দে বলেন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট আমাদের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তাদের মাধ্যমে শিশুরা শিক্ষা অর্জনের সুযোগ পেয়েছে। ছোট ছোট শিশুদের মনে গীতাপাঠের চর্চা যদি বৃদ্ধি পায়, তবে ভবিষ্যতে ধর্মানুরাগী আরও বাড়বে। তিনি আরও বলেন, শ্লোকের অর্থ বুঝে যদি গীতাপাঠ করি, তখন মনে আরও আনন্দ পাওয়া যায়। গীতাপাঠে আমরা শান্তি উপলব্ধি করি। আমাদের প্রত্যেককে ধর্মীয় প্রাচীন পুস্তক সম্বন্ধে ধারণা নিতে হবে। সকল শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষায় এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।