1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:০৫ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

আত্মপ্রত্যয়ী প্রধানমন্ত্রী, বার্তা সুস্পষ্ট : মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

  • আপডেট সময় শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

গত ২২ থেকে ২৪ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের স্ট্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে ব্রিকসের ১৫তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। তাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমন্ত্রিত হয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সম্মেলন শেষে দেশে ফিরে ২৯ আগস্ট গণভবনে সংবাদ সম্মেলন ডেকে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার লিখিত বর্ণনা দেন। শেখ হাসিনা যতবারই বিদেশে যান, ফিরে এসে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাঁর বিদেশ সফরের অভিজ্ঞতাই শুধু নয়, দেশের রাজনীতি এবং সাংবাদিকদের আগ্রহের বিভিন্ন প্রশ্নের সাবলীল উত্তর দিয়ে থাকেন। সে কারণেই তাঁর সংবাদ সম্মেলনের প্রতি শুধু সাংবাদিকদেরই নয়, রাজনীতিসচেতন সব মহলেরই আগ্রহ থাকে।
লিখিত বক্তব্যের পর তিনি সাংবাদিকদের যেসব প্রশ্নের উত্তর দেন, তাতে দেশের বিভিন্ন খবর তাঁর নখদর্পণে কতটা রয়েছে তা যেমন বোঝা যায়, শ্রোতাদেরও জানার সুযোগ হয়। আগের কোনো সরকারপ্রধানই সংবাদ সম্মেলনের এমন মর্যাদা তৈরি করতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। তাঁর কোনো কোনো কথা কারও পছন্দ না হলেও স্বীকার করতেই হবে, তিনি আত্মপ্রত্যয়ী ও সাবলীলভাবে শুধু প্রশ্নেরই উত্তর দেন না, অনেক কিছুই বলেন, যা শুনে তাঁর চিন্তাভাবনা ও কর্মযজ্ঞের ওপর ধারণাও পাওয়া যায়।
ব্রিকস সম্মেলন নিয়ে বাংলাদেশে অনেক আলোচনা-সমালোচনা শোনা গেছে। বাংলাদেশ ব্রিকসের সদস্য হতে যাচ্ছে- এমন ধারণা তৈরিও করা হয়েছিল। কিন্তু তা না হওয়ায় বিরোধীরা সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করছে। প্রকৃত অবস্থান না জেনেই এ নিয়ে প্রচার-অপপ্রচার চালাতে দেখা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বেশ আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গেই বলেছেন, এখনই সদস্যপদ পেতে হবে, সে ধরনের কোনো চিন্তা আমাদের মাথায় ছিল না, সেই ধরনের চেষ্টাও আমরা করিনি। চাইলে পাব না, সেই অবস্থাটা নেই। আমরা কাউকে বলতে যাইনি আমাকে এখনই সদস্য করেন। তিনি বরং জোর দিয়েছিলেন নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ব্যাপারে। সেটি অর্জিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে অনেক কিছুই পরিষ্কার হওয়ার কথা। তিনি নিজ মুখে না বললেও বোদ্ধারা বুঝে নিতে পারেন যে এই মুহূর্তে ব্রিকসের সদস্যপদ বাংলাদেশের জন্য ভূরাজনৈতিকভাবে সুফল বয়ে আনত নাকি সমালোচনার জন্ম দিত। যদিও ব্রিকস কোনো সামরিক বা পরাশক্তির জোট নয়। এটি একটি অর্থনৈতিক সংস্থা, তথাপিও পশ্চিমা বিশ্ব এই সংস্থার সঙ্গে চীন ও রাশিয়া যুক্ত থাকার কারণে এর উত্থানকে মোটেও সুনজরে দেখছে না। ফলে বাংলাদেশ ভূরাজনৈতিক অবস্থানের কথা বিবেচনা করে আপাতত শুধু ব্যাংকের অংশীদারত্ব লাভ করাটাকেই সুবিধাজনক মনে করছে। তা ছাড়া সরকারবিরোধী শক্তিও পশ্চিমা দুনিয়াকে বোঝাতে চাইত যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে চীন-রাশিয়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে ফেলার ব্যাপারে উদ্যোগী ছিলেন বলেই এমনটি ঘটেছে। এর মাধ্যমে তারা পশ্চিমা দুনিয়াকে আরও বেশি শেখ হাসিনাবিরোধী অবস্থানে চিত্রায়িত করার চেষ্টাই করত।
শেখ হাসিনা দীর্ঘ রাজনীতির পোড় খাওয়া মানুষ। তিনি গত কয়েক মাসের রাজনৈতিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এই মুহূর্তে ব্রিকসে কতটুকু যুক্ত থাকা বা না থাকা উচিত, সেটি না বোঝার কথা নয়। তাঁর শত্রু-মিত্র কারা, তা-ও তিনি খুব ভালো করেই জানেন। সে কারণেই তিনি চাইলে বাংলাদেশ সদস্য হতে পারত না এমনটি নয় – স্পষ্ট ভাষায় যে বার্তাটি দিলেন, তা অনেকের আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে যেন ঠান্ডা পানি ঢেলে দিয়েছে।
দ্বিতীয় যে বিষয়টি সাংবাদিকেরা জানতে চেয়েছিলেন তা হচ্ছে ড. ইউনূসের পক্ষে ১৬০ জন বিদেশির খোলা চিঠি প্রসঙ্গে। এই প্রশ্নের উত্তরেও তিনি যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তা নিয়ে কূটতর্ক করার কিছু নেই। বরং বিবৃতিদাতারা যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় স¤পর্কে অজ্ঞ, সেটাই ফুটে উঠেছে। এ ব্যাপারে তাঁরা ওয়াকিবহাল থাকলে তাঁদের পক্ষে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বিপক্ষে সরকারপ্রধানের অবস্থান নেওয়ার কোনো সুপারিশ তাঁরা করতেন কি না, তাতে সন্দেহ রয়েছে। বিবৃতিটি যে ড. ইউনূসের পক্ষে কুড়িয়ে আনা একটি চিঠি, তা ¯পষ্ট। ড. ইউনূস তাঁদের সঠিক তথ্য না দিয়ে সরকার তাঁর প্রতি অন্যায় করছে বলে ধারণা দিয়েছেন।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতা ব্যক্তিদের প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করেছেন, তাঁরা যেন কোনো বিশিষ্ট আইনজীবী অথবা বিশেষজ্ঞকে অথবা তাঁদের মধ্যে কেউ একজন এসে সমস্ত তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে দেখেন। তাহলেই স্পষ্ট হবে এর সঙ্গে সরকারের আদৌ কোনো স¤পর্ক আছে কি না। প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানে বিবৃতিদাতারা ইতিবাচক সাড়া দেবেন কি?
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে যে মামলা করা হয়েছে, তা করেছেন ১৮ জন শ্রমিক, যাঁরা তাঁদের পাওনা মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। এটি আইএলও কনভেনশন নীতির বাইরের কোনো বিষয় নয়। সরকার এ মামলা করেনি, সুতরাং সরকারপ্রধানকে হস্তক্ষেপ করার ব্যাপারে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি কতটা আইনসিদ্ধ হয়েছে, সেই প্রশ্ন তিনি তুলেছেন। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারেও শুধু তাঁর নয়, বরং বাংলাদেশের মর্যাদাকর অবস্থানের কথা ¯পষ্ট করেছেন। দেশের অভ্যন্তরেও যাঁরা বিবৃতি দিয়েছেন, তাঁদের এখন বিষয়টি খুঁটিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হতে পারে।
ড. ইউনূসের ব্যাপারে প্রায় ১৭-১৮ বছর যাবৎ দেশে জনমত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে আছে। এই বিভক্তি অনেকটা রাজনৈতিক রূপ নিয়েছে। তিনি যখন নোবেল পুরস্কার পান, তখন গোটা দেশ আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিল। কিন্তু সামরিক সমর্থিত স্বঘোষিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাঁর ব্যাপারে মোহ অনেকেরই কাটতে থাকে। তা ছাড়া তিনি আইন-আদালতে লড়াই করে এ পর্যন্ত জিতে আসতে পারেননি। দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে অসম্মানিত বা উপেক্ষা করা যে যায় না, তা তিনি নিজেও বোঝেন। সে জন্যই তাঁকে ১২ কোটি টাকা ট্যাক্স দিতে হয়েছে। এমন ঘটনা তো কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।
বিশ্বের বরেণ্য ব্যক্তিদের খোলা চিঠি এবং এর জবাবদানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সর্বোচ্চ আদালত এবং দেশের সম্মানের পক্ষেই অবস্থান ¯পষ্ট করেছেন। এখন বিবৃতিদাতারা বুঝে নিতে পারেন তাঁরা ঠিক, নাকি ভুল করেছেন।
ব্রিকসে বিভিন্ন নেতার সঙ্গে তাঁর দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতি বিভিন্ন দেশের আগ্রহ অনেক বেড়েছে। আফ্রিকায় বিনিয়োগের ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, আপাতত যাঁরা বিদেশে অবস্থান করছেন, তাঁরা যদি সেই সব সুযোগ গ্রহণ করেন, তা তাঁরা করতে পারেন। কিন্তু দেশ থেকে ডলার নিয়ে কোনো দেশে বিনিয়োগ করার সময় এখন নয়। এখন যেহেতু অর্থনৈতিক চাপ রয়েছে, তাই নিজেদের দেশেই বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাড়িয়ে আগে দেশের চাহিদা পূরণ করা দরকার। বাজারে সিন্ডিকেটের প্রভাব নিয়েও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে নিজেদের উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপারেই সবাইকে গুরুত্ব দিতে আহ্বান জানান। সিন্ডিকেটের বিষয়টিও তিনি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
সর্বজনীন পেনশন স্কিম স¤পর্কে নানা ধরনের অপপ্রচার চলছে। এমনকি এই অর্থ দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ফান্ড তৈরি করবে- এমন অপপ্রচারও একটি গোষ্ঠী চালাচ্ছে। এ নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, এটা তো ¯পষ্ট করেই বলা আছে। আর এই টাকা নিয়ে ইলেকশন ফান্ড করতে হবে, আওয়ামী লীগ তো ওই রকম দৈন্যে পড়েনি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, বিদেশে বাংলাদেশের প্রশংসা হচ্ছে, কীভাবে উন্নয়ন করা হচ্ছে, তা জানতে চাওয়া হচ্ছে। অথচ দেশে এ নিয়ে অনেকেই পরশ্রীকাতরতায় ভুগছেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, কে কী বলল না বলল, সেটা নিয়ে আমি কমই চিন্তা করি। আমার মাথায় আমার বাংলাদেশ আছে। বাংলাদেশের মানুষ আছে। তাদের কল্যাণে কী করব, সেটাই চিন্তা করি।
‘কিছুদিনের মধ্যেই দেশে সরকার পড়ে যাবে, অন্য সরকার চলে আসবে’ – বিরোধী দলের কারও কারও এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী কোনো উত্তর দেননি। বরং সংবাদ সম্মেলনের পুরো সময়ে তাঁকে সাবলীল, সাহসী ও আত্মপ্রত্যয়ী মনে হয়েছে।
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com