সেই ২০১৭ সালের ঘটনা। প্রাণভয়ে প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে কয়েক দিনের মধ্যে বাংলাদেশে পালিয়ে এলো প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা। মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা কুড়িয়েছিল বাংলাদেশ। সে সময় কক্সবাজার গিয়ে স্বচক্ষে দেখেছি, রোহিঙ্গাদের জন্য স্থানীয়দের দরদ, আবেগ। এমন ঘটনাও অনেক ছিল, নিজের ঘর ছেড়ে দিয়েছেন টেকনাফ ও উখিয়ার অনেক মানুষ। এমন আন্তরিক পরিবেশ আর অভ্যর্থনা, সব হারানো, উদ্বাস্তু সেসব মানুষের কাছে ছিল বিশাল প্রাপ্তি।
কেন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিল বাংলাদেশ?
বাংলাদেশ সরকারের কী মনে ছিল এখনও বোঝা কঠিন। কারণ, ২৫ আগস্ট, ২০১৭ সালের আগের দিন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের নিজ ভূখ-ে ঢুকতে দেয়নি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি। হঠাৎ সেদিন কী এমন হলো সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিলো সরকার? এই প্রশ্নের উত্তর মেলানো খুব কঠিন। কারও কারও ধারণা, বাংলাদেশ সেদিন এসব রোহিঙ্গাকে আশ্রয় না দিলে হাজার হাজার মানুষকে মরতে হতো। আর নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে তাদের আশ্রয় না দিলে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখে পড়তে হতো বাংলাদেশকে। আবার অনেকে বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে পশ্চিমাদের সমালোচনার মুখে হয়তো পড়তো বাংলাদেশ। মিয়ানমারের এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে আশ্রয় দিয়ে সেই পরিস্থিতিও তখন সাময়িকভাবে সামলেছেন ক্ষমতাসীনরা। এসব ভাবনা-ধারণা বা ব্যাখ্যার সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য-প্রমাণ অবশ্য নেই। তারপরও এটা তো সত্য, ওই সময়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আন্তরিকভাবে আশ্রয়, তাদের প্রতি চূড়ান্ত রকমের সহমর্মিতা প্রশংসা কুড়িয়েছিল সবার। আরেকটা বড় কারণ, আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যাগরিষ্ঠই মুসলিম জনগোষ্ঠী। এবং তারা সবাই মিয়ানমার সরকার, দেশটির সামরিক বাহিনীর ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার। ফলে তাদের ওই সময় আশ্রয় না দিলে ইসলামপন্থি দলগুলোর সমালোচনাও হয়তো সইতে হতো বাংলাদেশকে।
সমাধান খোঁজা : শুরুতেই কালক্ষেপণ!
২০১৭-এর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূলত সেখানেই এই সংকটের টেকসই সমাধানের কার্যকর ও বাস্তবায়নযোগ্য রূপরেখা ছিল। যদিও সেই পাঁচ দফার আলোকে পরবর্তীতে সরকার এগোতে পেরেছে কিনা, সে প্রশ্ন তোলার অবকাশ আছে। হঠাৎ করে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী চলে আসায় তাদের ভরণপোষণ তখন বড় চিন্তা হয়ে দাঁড়ায়। সে কাজে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যুক্ত করার ক্ষেত্রে সময় নেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, নাকি আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা- আইওএম, কে মূল অংশীদার হবেন, সে সিদ্ধান্ত নিতেই কেটে যায় অনেকটা সময়। শেষ পর্যন্ত তাতে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাই যুক্ত হয় আনুষ্ঠানিকভাবে।
রোহিঙ্গা সংকট দ্বিপাক্ষিক ইস্যু?
শুরু থেকেই একটা বিষয় পরিষ্কার করে আসছিল বাংলাদেশ। তা হলো, রোহিঙ্গা সংকটের উৎস যেহেতু মিয়ানমারে, তাই এর সমাধানও তাদেরই করতে হবে। সেক্ষেত্রে নিজ দেশে ফেরানো বা প্রত্যাবাসনই যে চূড়ান্ত রাস্তা, তা নিয়ে কোনও দ্বিধা ছিল না ঢাকা’র। যদিও বিষয়টি নিয়ে শুরুতেই দ্বিপাক্ষিক কম চেষ্টা করেনি বাংলাদেশ। ধারণা, মূলত চীনের বুদ্ধিতে সেই পথে হেঁটেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একাধিকবার ঢাকা-নেইপিদো দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর গঠন করা হয়েছিল যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ। হয়েছিল সমঝোতা সই। তালিকা প্রণয়ন ও ঠিকানা যাচাই বাছাই করে দিনক্ষণও নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৮ সালেই। একবার নয়, পিছিয়ে আরও দু’দফা তারিখ ঠিক করা হয়েছিল প্রত্যাবাসনের। অথচ তার কিছুই হয়নি। এমনকি মিয়ানমারের চাওয়া মতো ক্যা¤েপ থাকা রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন করলেও তাদের দেওয়া ঠিকানা যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে অনেকের তথ্যেরই মিল পায়নি মিয়ানমার সরকার। একটা পর্যায়ে কথিত শান্তির নেতা অং সাং সুচি’র পদত্যাগ, গ্রেফতার এবং ফের মিয়ানমারে সামরিক শাসন, তার সঙ্গে যুক্ত হয় ২০২০-২০২২ পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ। একটা পর্যায়ে এই ইস্যুতে ঢাকা-নেইপিদো যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয় যায়। সামরিক সরকারের সঙ্গে নতুন করে রোহিঙ্গার মতো ¯পর্শকাতর ইস্যুতে যোগাযোগ শুরু করাও সহজ কাজ নয় অবশ্য।
চীনের মধ্যস্থতায় সমাধান?
অস্বীকার করার উপায় নেই, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নানা তৎপরতার পরও চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদে কোনও প্রস্তাবই পাস হয়নি। সবার ধারণা ছিল, বেইজিং চাইলেই এই সমস্যার একটা টেকসই সমাধান সম্ভব। শুরু হয় সেই চেষ্টাও। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে বৈঠকে বসেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গঠন করা হয় একটি তিন দেশীয় কমিটি। যদিও তারপর সেই কাজ আর এগোয়নি। কারণ, হিসেবে করোনা সংক্রমণ আর মিয়ানমারে সরকারের পটপরিবর্তনকে দায়ী করা হলেও প্রশ্ন আছে অনেক। যাহোক, করোনা বিদায় নেওয়ার পর আবারও উদ্যোগী হয় চীন। আশ্বস্ত করা হয়, চলতি বছরই শুরু হবে পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসন। শুরুতে সংখ্যাটা হাজারের ঘরে থাকলেও পরে তা এসে দু’তিনশতে ঠেকে। সেজন্য ফিরতে ইচ্ছুক কয়েকজন রোহিঙ্গাকে রাখাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা সরেজমিন সেখানকার পরিস্থিতি দেখে আসেন। কিন্তু সব মিলিয়ে তা সন্তোষজনক তাদের কাছে না হওয়ায় পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসনও শুরু হলো না এখনও। যদিও বাংলাদেশের এখনও আশা, আগামী ডিসেম্বরের আগেই তা শুরু করা সম্ভব।
কমছে বিদেশি সহায়তা: এত রোহিঙ্গার ভরণপোষণ কীভাবে? :
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপট অনেক পাল্টেছে। বেড়েছে শরণার্থীর সংখ্যা। ফলে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের অগ্রাধিকার বদলাচ্ছে। এমন অবস্থায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দিকে দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর নজর অব্যাহত রাখা যে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ, তা স্বীকার করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে কোভিড ও যুদ্ধ পরবর্তী বিশ্ব অর্থনৈতিক বাস্তবতা দিনকে দিন কঠিন হচ্ছে। ফলাফল স্বরূপ, রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণের জন্য প্রতিবছর যে অর্থ সংগ্রহ করা হয়, তা কমছে। জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান বা জেআরপি’তে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি অর্থ সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহায়তা দেয়। রাশিয়া-চীন খুবই সামান্য সহায়তা করে এ কাজে। আর প্রতিবেশী ভারতের তথ্য অবশ্য পাওয়া যায়নি। এমন অবস্থায় কমেছে রোহিঙ্গাদের দৈনিক খাবারের খরচ। যদিও সরকার বলছে, টাকা বরাদ্দ কমলেও ক্যালরি বা খাদ্যমান অটুট আছে এখনও। সব মিলিয়ে বছরে যে এক বিলিয়ন ডলার লাগে রোহিঙ্গাদের থাকা খাওয়ায়, আগামী দিনগুলোতে তাতে কতটা ঘাটতি হয়, আর সেই ঘাটতি কীভাবে পূরণ করা হবে, সেটি বড় চিন্তা।
মিয়ানমারের বারবার উসকানি!
একদিকে অন্য দেশের প্রায় বারো লাখ লোকের ভরণপোষণ, অন্যদিকে প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি। হুমকির মুখে পড়েছে কক্সবাজারের স্থানীয়দের জীবন জীবিকা বেঁচে থাকা। এরমধ্যে একের পর এক অপেশাদার আচরণ করেছে মিয়ানমার। অন্তত তিন দফা তারা আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে পাওয়া গেছে মিয়ানমারের স্থল মাইন। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনকে অন্তত দু’দফা নিজেদের মানচিত্রে দেখিয়েছে নেইপিদো। পরে ঢাকার কঠোর অবস্থানে তা সংশোধন করতেও বাধ্য হয়েছে তারা। আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একাধিক সদস্যকে ধরে নিয়ে যাওয়ার মতো দুঃসাহসও দেখিয়েছে তারা। প্রাণও গেছে বিজিবি’র নায়েক মিজানের। সামরিক বাহিনী শাসিত দেশটির এসব আচরণ তীব্র “উসকানিমূলক”। যদিও এখন পর্যন্ত সেই উসকানিতে পা দেয়নি বাংলাদেশ।
রোহিঙ্গা সংকট : কেবল বাংলাদেশের ঝুঁকি?
গত দু’তিন বছরে রোহিঙ্গা ক্যা¤েপ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা- বেড়েছে কয়েকগুণ। সন্ধ্যার পর মিয়ানমারের বিভিন্ন উগ্রপন্থি গ্রুপের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। এছাড়া অভ্যন্তরীণ কোন্দল, মাদক ব্যবসা, নারী ও শিশু পাচারের মতো ঘটনাও ঘটছে। বেশ কয়েকটি সংঘর্ষে প্রাণও গেছে অনেক রোহিঙ্গার। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, রোহিঙ্গা ক্যা¤পগুলো নাকি জঙ্গিদের আখড়া! একথা তো সত্যি, চোখের সামনে মা-বোন-স্ত্রীকে নির্যাতিত হতে দেখা, প্রিয়জনের মৃত্যু, রাষ্ট্র-পরিচয়বিহীন উদ্বাস্তু হয়ে থাকা, এসব মানুষকে সহজেই বিপথে পরিচালনা করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক কোনও চক্র যে তাদের নিয়ে তেমন চক্রান্ত করছে না তার নিশ্চয়তা কি? তাই যদি হয় তবে কেবল বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী ভারত-চীন-মিয়ানমারের পরিস্থিতিও যে অস্থির হয়ে উঠবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য দেশেও বাড়তে পারে অস্থিরতা। প্রশ্ন হলো, এসব ঝুঁকির কথা বন্ধুরাষ্ট্রগুলোকে কতটা বোঝাতে পারছে, পেরেছে বা পারবে বাংলাদেশ?
বিচার হবে তো?
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যে অত্যাচার- নিপীড়ন-নির্যাতন হয়েছে সেটাকে “জাতিগত নিধন” বলে আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ। অনেক পরে হলেও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সেই মামলা নিয়ে গেছে গাম্বিয়া। বিচারকাজও চলছে। এই মামলার কৌঁসুলিরা একাধিকবার বাংলাদেশ ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। নানা কারণে সেই মামলার খরচ জোগাড়ও কঠিন হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। ধারণা, বিচার হলেও তাতে সময় লাগবে অনেক। কত বছর লাগবে, তা বোঝাও কঠিন। যখন রায় হবে, তখন এই অপরাধীরা আদৌ বেঁচে থাকে কিনা, তাও একটা বড় প্রশ্ন। তবু বিচারের অপেক্ষায় রোহিঙ্গারা। আশা, একদিন হত্যা-ধর্ষণ-লুট, তাদের দেশান্তরী হওয়ার বিচার হবেই।
রোহিঙ্গারা ফিরতে চান?
সবচেয়ে বড় যে প্রশ্ন, বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারা কি আসলে দেশে ফিরতে চান? অনেকের সঙ্গেই কথা বলে মনে হয়েছে, বেশিরভাগ রোহিঙ্গাই তা চান। ক্যা¤েপর ছোট্ট ঘরে বাপ দাদা’র ভিটেমাটি ফেলে থাকতে চান না তারা। কিন্তু তারা যে ফিরবেন, সেখানে গিয়ে নিজের বাড়িও না থাকুক, অন্তত জমিটা পাবেন তো? গেলে আগে যে সেনাবাহিনী নির্যাতন নিপীড়ন করেছে, তারা আবারও একই কাজ করবে না তো? মিয়ানমারের রাখাইনে গেলে তাদের আবারও বন্ধ ক্যা¤েপই থাকতে হবে না তো? এ রকম অসংখ্য প্রশ্নের জবাব নেই বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের কাছে। এসব প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর পেতে চান তারা। আর এর প্রায় সবগুলোই নিশ্চিত করতে পারেন মূলত মিয়ানমার সরকার।
তাহলে সমাধান?
আগস্ট ২০১৭-আগস্ট ২০২৩। সাত বছরের মাথায় এসেও বহুমুখী এই সংকটের সমাধান তো হয়নি, কবে নাগাদ হবে, কীভাবে হবে- তার কোনও রূপরেখাও সামনে নেই। এ অবস্থায় রাখাইনে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন যে সবচেয়ে জরুরি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের জোর করে যে ফেরত পাঠানোর সুযোগ নেই, তাও জানা। বাংলাদেশ সরকারও বারবার তা স্পষ্ট করেছে। এমন অবস্থায় মিয়ানমার সরকারের ওপর কার্যকর রাজনৈতিক চাপ ছাড়া প্রত্যাবাসন শুরু সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমাদের অনেক নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তাতে মিয়ানমার খুব বেশি ঘাবড়ায়নি। আবার এও তো সত্য, জার্মানি ছাড়া আর কোনও দেশ রোহিঙ্গা নিধনের দায়ে মিয়ানমারে বিনিয়োগ বন্ধ করেনি। বরং অনেক দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বিনিয়োগ সেখানে বেড়েই চলেছে। কাজেই রোহিঙ্গা সংকট, এর ভয়াবহতা, আঞ্চলিক নিরাপত্তায় প্রভাব এসব কিছু যথাযথভাবে বিশ্বস¤প্রদায়কে বোঝানোর তৎপরতা আরও জোরদার করতে হবে বাংলাদেশকে। পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিকভাবেও মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। বাড়তি কাজ হিসেবে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে তৎপরতা বাড়ানো জরুরি। যতদিন প্রত্যাবাসন না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত ক্যা¤েপর ভেতরে বাইরে গোয়েন্দা তৎপরতা ও নিরাপত্তা উদ্যোগ বাড়ানোও জরুরি। ভাসানচরের মতো কক্সবাজারের ক্যা¤পগুলোতে যতটা সম্ভব কর্মসৃজন প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরি। তবে মিয়ানমার সরকারের চূড়ান্ত রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া এই সংকটের টেকসই কোনও সমাধানই সম্ভব নয়। আর সেই সদিচ্ছা কখন, কতটা জাগ্রত হবে, তা নির্ভর করছে কতটা আন্তর্জাতিক চাপে মিয়ানমার পড়ে, তার ওপর। [সংকলিত]
লেখক: বিশেষ প্রতিনিধি, যমুনা টেলিভিশন