‘লঞ্চঘাট ও মইনপুরে নদীভাঙন প্রতিরোধ কাজ উদ্বোধন’ উদ্ধৃতিচিহ্নে আবদ্ধ এই বাক্যটি দৈনিক সুনামকণ্ঠের (২৯ আগস্ট ২০২৩) একটি সংবাদ শিরোনাম। উদ্বোধন করেছেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। এইরূপ জনহিতকর কাজের জন্য তাঁকে অশেষ ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, “সুরমা নদীর ভাঙন রোধে আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমি শহরের লঞ্চঘাট ও পুলিশ ফাঁড়ির এলাকায় সুরমা নদীর ভাঙন রোধের বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছি। আগে আরও একবার বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছিলাম। ইব্রাহীমপুর গ্রামের নদীভাঙন প্রতিরোধে বালুভর্তি বস্তা ফেলার ব্যবস্থা করেছি। কিছুদিনের মধ্যে আবারও কাজের জন্য পাউবো’র প্রকৌশলীরা ইব্রাহীমপুর গিয়ে নদী ভাঙন রোধে কাজের ম্যাজারমেন্ট তৈরি করবেন। পর্যায়ক্রমে জগন্নাথপুর গ্রামের নদী ভাঙন রোধে বস্তা ফেলা হবে।”
সংসদ সদস্যের এই বক্তব্যের মধ্যে একটি গভীর গোপন কথা লুকিয়ে আছে। সেটি হলো নদীভাঙন কোনও দিনই ঠেকানো যাবে না। নদীভাঙনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিনিয়ত প্রতিরোধের কাজ অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ নদীর ভাঙন রোধের বরাদ্দের ব্যবস্থা, বালু ভর্তি বস্তা ফেলার ব্যবস্থা, নদী ভাঙন রোধে কাজের ম্যাজারমেন্ট তৈরি হরেক রকমের কা-কারখানা চলতেই থাকবে চিরকাল। নদী যতো দিন থাকবে ততো দিন নদীভাঙন নিয়ন্ত্রণে আসবে না। ভাঙন থেকে নদীকে প্রতিহত করা যাবে না, নদীর অব্যাহত অত্যাচার চলতেই থাকবে। অথচ আধুনিক প্রাকৃতিক প্রযুক্তিবিজ্ঞানে ‘নদীশাসন’ বলে একটি কথা আছে। অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক উপায়ে নদীভাঙন রোধ করা কোনও অসম্ভব ব্যাপার নয়। যেমন চিনদেশে মাইলের পর মাইলব্যাপী ভাঙনপ্রবণ দুরন্ত ও ভয়ঙ্কর হুয়াংহু নদীকে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অর্থাৎ নদীশাসন পদ্ধতি অনুসরণ করে চিরদিনের জন্যে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। হুয়াংহু নদীর বিধ্বংসী ও সর্বনাশা রূপকে জনপদহিতৈশী রূপে বদলে দেওয়া হয়েছে।
আমরা নদীভাঙন রোধের ব্যবস্থার বদলে অর্থাৎ নদীর অব্যাহত উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়ার পরিবর্তে চিরদিনের জন্য নদীর উপদ্রব বন্ধ করার উপায় অবলম্বন করার কথা বলছি। আপাতত প্রতিরোধের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতেই হবে, কিন্তু সেটাকে চিরন্তন করে তোলার কোনও মানে হয় না। তারচেয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা বজায় রাখার ভেতরেই নদীকে চিরদিনের জন্য জনপদহিতৈষী করে তোলার ব্যবস্থা নিতে হবে, যে-ব্যবস্থাপ্রদ্ধতিতে নদীভাঙনের কোনও ভয় থাকবে না।