বর্তমানে বাংলাদেশে অতীতের যে-কোনও সময়ের তুলনায় উন্নয়নের গতি তীব্র আকার ধারণ করেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এই উন্নয়ন ও উন্নতির গতিমুখ সার্বিক বিবেচনায় সামাজিক সম্পদ বণ্টনব্যবস্থয় অপ্রতিহত বৈষম্য বিদ্যমান থাকার কারণে বিতর্কিত একটি বিষয়ও বটে। জনগণের মধ্যে সম্পদবৈষম্যের অপ্রতিহত আকাশ পাতাল ব্যবধান অধিকমাত্রায় সমাজের শান্তি বিনষ্ট করবে ও অনিবার্য অস্থিরতাকে প্রতিহত করা যাবে না, এমন অভিমত ইতোমধ্যে কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিশেষজ্ঞ দিয়ে রেখেছেন। অপরদিকে দেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে বঙ্গোপসাগরে সামরিক আধিপত্য বিস্তারের সা¤্রাজ্যবাদী তৎপরতা বিদ্যমান আছে, এটাও দেশের জন্য একটা ভয়ঙ্কর বিপদ এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তা আরও ঘনিভূত হয়ে উঠছে। অথচ আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পিতার মতো দেশের সর্বস্তরের মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে বদ্ধপরিকর। গণমাধ্যমে সংবাদ করা হয়েছে “বাংলাদেশকে একটি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করার স্বপ্ন দেখেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে, বিশেষ করে আইসিটি, অবকাঠামো, টেক্সটাইল ও পর্যটন খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমার একটি স্বপ্ন আছে, যা বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষেরও স্বপ্ন। আর তা হলো, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি ট্রিলিয়ন-ডলারের অর্থনীতি এবং একটি স¤পূর্ণ উন্নত স্মার্ট জাতিতে পরিণত করা। তিনি আরও বলেন, স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে তারা সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির জন্য দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণে একটি উচ্চাকাক্সক্ষী প্রচেষ্টা শুরু করেছেন।”
দেশবাসী প্রধানমন্ত্রীর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের একান্ত প্রত্যাশায় অপেক্ষমাণ এবং তাঁর এই স্বপ্নপূরণের অভিযাত্রায় তাঁর সহযাত্রী। কিন্তু স্বপ্নপূরণটা যে খুব একটা সহজ কাজ হবে তা কিন্তু নয়, অবশ্যই অনেক বাঁধাবিপত্তি পেরুতে হবে, পুড়াতে হবে অনেক কাঠখড়। দেশ এখনও অনেকটাই পিছিয়ে আছে, পশ্চাদপদতার সংস্কৃতি এখনও দেশের টুটি টিপে ধরে আছে। প্রকৃতপ্রস্তাবে দেশ কতোটা পিছিয়ে আছে তার হদিস মেলে যখন গণমাধ্যমে “হাসনাবাদ গ্রামে চুরি বৃদ্ধি : পুলিশ সুপার বরাবরে দুই অভিযোগ” শিরোনামে সংবাদ ছাপা হয় এবং সংবাদবিবরণীতে লেখা থাকে, “শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে চুরি সংঘটিত হয়ে আসছে। কিন্তু এসব ঘটনা প্রতিকার করতে না পেরে গ্রামের বাসিন্দা দুই ব্যক্তি পুলিশ সুপার বরাবরে অভিযোগ দিয়েছেন। বুধবার এই দুই অভিযোগ দেন গ্রামের বাসিন্দা মৃত আসক আলীর স্ত্রী আপ্তাবুন নেছা ও ইরশাদ আলীর স্ত্রী জাহানারা বেগম। অভিযোগে আপ্তাবুন নেছা উল্লেখ করেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটায় তার ঘরে রক্ষিত ৭০ মণ ধান, একটি ডিপ কলের মটর, পাইপ, জমিনে পানি নিষ্কাশনের মেশিন, দশটি ভেড়া, পাঁচটি ছাগল চুরি করে নিয়ে যায়। এসময় ঘরে থাকা মানুষকে দেশীয় অস্ত্র দেখিয়ে প্রাণে মারার ভয় দেখায়। তাই তারা প্রতিবাদ করতে পারেননি।” দেশের কেন্দ্র থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত প্রতিটি ইঞ্চিতে সম্পদের মালিকানার ভিত্তিতে গড়ে উঠা ধনী, গরিব ও নিঃস্ব মানুষদের মধ্যে যে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে সেটাকে পরস্পরের সম্পদ কেড়ে খাওয়ার মতো একটি অরাজক অবস্থা ভিন্ন অন্য কোনওভাবে বর্ণনা করা যায় না। এককথায় বলা যায়, সমাজটা আত্মসাতের সমাজে পর্যবসিত হয়ে পড়েছে। যার জন্য চলিতকর্মের পরতে পরতে প্রতিটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক তথা রাজনীতিক-আর্থনীতিক পরিসরে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো অনিয়ম-দুর্নীতির পঙ্কে নাক পর্যন্ত নিমজ্জিত হয়ে আছে। উদাহরণস্বরূপ একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করা যায়। যেখানে স্কুলের তোরণ নির্মাণের জন্যে সরকার অর্থ বরাদ্দ করেছেন সেখানে প্রধান শিক্ষক তোরণ নির্মাণের ব্যয় নির্বাহের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করেছেন। দুর্নীতি দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও গ্রাস করে নিয়েছে। এমতাবস্থায় দেশে “২০৪১ সালের মধ্যে একটি ট্রিলিয়ন-ডলারের অর্থনীতি” প্রতিষ্ঠা করা এবং দেশেকে “একটি স¤পূর্ণ উন্নত স্মার্ট জাতি”র দেশে পরিণত করা চাট্টিখানি কথা নয়। তার জন্যে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর যেমন সাহস আছে তেমনি আছে তাঁর অসীম কর্মোদ্যোগ। আমার তাঁর সঙ্গে আছি এবং থাকবো, স্বপ্নপূরণের স্বপ্ন থেকে কখনওই বিচ্যুত হবো না।