‘আমাদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো দুর্নীতির আখড়া হয়ে পড়েছে, ঢালাওভাবে এমন কথা বলা কীছুতেই সমীচীন হবে না।’ এমন অভিমত যে-কেউ পোষণ করতেই পারেন। কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন কার্যক্রম যখন জনদৃষ্টিতে অপকর্মের উদাহরণ হয়ে উঠে সংশ্লিষ্টদের বৈধ আয়বহির্ভূত উপার্জনের বহরব্যাপকতাকে ক্রমাগত স্ফীত করে তোলে, তখন বোধ করি ‘বিদ্যালয়গুলো দুর্নীতির আখড়া হয়ে পড়েছে না’ বলার আর কোনও যুক্তি থাকে না, বরং অনায়াসে প্রমাণিত হয় যে, শিক্ষায়তনগুলো আর অতীতের মতো ততোটা নির্মল নয়। সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সম্পর্কে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “সম্প্রতি সাড়ে দশ লাখ টাকা বরাদ্দে সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ দ্যিালয়ের প্রধান ফটকে তোরণ নির্মাণ করার কাজ করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। সরকারি বরাদ্দ থাকার পরেও সকল শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে তোরণ নির্মাণের জন্য টাকা [চাঁদা !] উত্তোলন করেন প্রধান শিক্ষক। এ নিয়ে অভিভাবকরাও ক্ষোভ জানান। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সংবাদ প্রকাশের পর বিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজ থেকে সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে পোস্ট করেন তিনি।”
এ প্রেক্ষিতে বিদগ্ধমহলের অভিমত এই যে, নিজের দুর্নীতিমূলক (শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে তোরণ নির্মাণের জন্য টাকা [চাঁদা !] উত্তোলন) আচরণের দ্বারা প্রমাণিত এই প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিরোধ করা চাই, সমাজকে আরও বেশি পরিমাণে দুর্নীতিগ্রস্ত করে না তোলার প্রয়োজনে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও স্বজন যাঁরা আছেন তাঁদের পক্ষ থেকে এমন প্রধান শিক্ষককে প্রতিরোধ করা একটি নৈতিক দায়িত্ব। কারণ মানুষ হওয়ার লক্ষ্যে কোনও পিতামাতার পক্ষে তাঁদের সন্তানকে দুর্নীতিগ্রস্ত কোনও শিক্ষকের কাছে বিদ্যার্থী করে পাঠানোর কোরও যৌক্তিকতা নেই। এই শিক্ষার্থীকে সততার আদর্শপাঠ থেকে বঞ্চিত করার সামিল। আর তা করতে গেলে তাঁরা (শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও স্বজনরা) কেবল শিক্ষকের করা এই দুর্নীতির অংশিদার হয়েই পড়বেন না, প্রকারান্তরে শিক্ষার্থীদেরকেও দুর্নীতিগ্রস্ত করে তোলবেন এবং এই দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরাই একদিন এই রাষ্ট্র-সমাজ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে এবং সমাজটা তখন আরও বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে। এবংবিধ পরিস্থিতির উদ্ভবের জন্য কেবল শিক্ষার্থীদের অভিভাবকই দায়ী থাকবেন এমনটি নয়, বরং বৃহত্তর সমাজ ও প্রশাসনকেও তার দায়ভার নিতে হবে। সে দায় থেকে সমাজের কারও রেহাই নেই।
অভিজ্ঞমহলের ধারণা “সকল শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে তোরণ নির্মাণের জন্য টাকা [চাঁদা !] উত্তোলন করে” প্রধান শিক্ষক হাফিজ মো. মাশহুদ চৌধুরী তাঁর স্বপদের (প্রধান শিক্ষক) দায়িত্ব পালন করার যোগ্যতা হারিয়েছেন এবং এই পদ থেকে স্ব-উদ্যোগে অব্যাহতি নেওয়াই এখন তাঁর পক্ষে যথাযথ উপায় ও একমাত্র করণীয়। আর যদি তিনি তা না করেন তবে তাঁর জন্য অধিক উত্তম কাজ হবে জনসমক্ষে এই প্রমাণ উপস্থিত করা যে, তিনি আইন বহির্ভূত উপায়ে কিংবা কোনও নিয়ম ভঙ্গ না করে, যাকে বলে, প্রতারণার মাধ্যমে ৩০০ টাকা করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গ্রহণ করেন নি। তাঁকে বুঝতে হবে, সাংবাদিকদের ফেসবুকে গালাগাল করে নিজের করা অপকর্ম মুছে ফেলা যাবে না। যদি লজ্জাশরমের মাথা না খেয়ে থাকেন তবে পদত্যাগ করুন অথবা নিজের সততা প্রমাণ করুন। ভুলে গেলে চলবে না যে, অপরকে অসৎ বলে গালাগাল দিয়ে নিজের করা অসততাকে সততায় পর্যবসিত করা যায় না।