বিশেষ প্রতিনিধি ::
সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজ থেকে সাংবাদিকদের বিষোদগার করে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়ে দুর্নীতির প্রামাণ্য অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে সংবাদপ্রকাশের জের ধরে তিনি এই স্টেটাস দিয়েছেন। তবে স্ট্যাটাসের পক্ষে তিনি কোন প্রমাণ দিতে পারেননি। বরং ক্ষেপে গিয়ে যাচ্ছেতাই বুলি আওড়িয়েছেন বলে মনে করছেন সুধীজন।
সুনামগঞ্জ সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজ মো. মাশহুদ চৌধুরী সম্প্রতি সাংবাদিকদের বেয়াদব, কুলাঙ্গার, ভূখা- নাঙ্গা, জামায়াত প্রেমিক ও পত্রিকাকে টিস্যু পেপার উল্লেখ করে ফেসবুকে বিদ্যালয়ের পেজ থেকে স্ট্যাটাস দেন। বিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজে করা পোস্টটি তিনি আবার তার ব্যক্তিগত আইডি থেকেও শেয়ার করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি নিজে লিখে বিদ্যালয়ের পেজ থেকে পোস্টটি শেয়ার করেছেন।
অভিভাবক ও সুধীজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের শিক্ষাঙ্গনের সবচেয়ে বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক হাফিজ মো. মাশহুদ চৌধুরী। গত কয়েক বছর ধরে তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি, ভর্তি বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়, অভিভাবকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এসব সংবাদ প্রকাশের জের ধরে তিনি সব সময় ফেসবুকে সাংবাদিকদের গালমন্দ দিয়ে লেখালেখি করেন। এর প্রতিকার চেয়ে ইতিপূর্বে মৌখিকভাবে গণমাধ্যমকর্মীরা জেলা প্রশাসক ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীর কাছে অভিযোগ জানালেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রশাসন এ ক্ষেত্রে উদাসীনতা প্রদর্শন করায় সাংবাদিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি সাড়ে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দে সরকারি সতীশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তোরণ নির্মাণ করার কাজ করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। সরকারি বরাদ্দ থাকার পরেও সকল শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে তোরণ নির্মাণের জন্য টাকা উত্তোলন করেন প্রধান শিক্ষক। এনিয়ে অভিভাবকরাও ক্ষোভ জানান। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সংবাদ প্রকাশের পর বিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজ থেকে সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে পোস্ট করেন তিনি। ঐতিহ্যবাহী সরকারি বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষকের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করে সকল অনিয়মের তদন্তের দাবি জানান গণমাধ্যমকর্মীরা। উল্লেখ্য এর আগেও অতিরিক্ত টাকা নিয়ে ছাত্রীদের তিনি ফিরত দিয়েছিলেন। এভাবে বিভিন্ন সময় তিনি বিভিন্ন খাতের নামে টাকা উত্তোলন করছেন নিয়ম বহির্ভূতভাবে।
আরটিভি ও দৈনিক আমাদের সময়ের সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি বিন্দু তালুকদার বলেন, একটি স্বনামধন্য ও প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজ থেকে ঢালাওভাবে গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে কটাক্ষ ও আক্রমণাত্মক কথাবার্তা প্রচার করা মোটেও কাম্য নয়। গণমাধ্যম বা গণমাধ্যমকর্মীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে প্রেস কাউন্সিল বা প্রচলিত আইনে প্রতিকার না চেয়ে এভাবে বিষোদগার করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে অপপ্রচারের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে আশা করি।
দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর সম্পাদক ও প্রকাশক পঙ্কজ কান্তি দে বলেন, এই প্রতিষ্ঠান প্রধানকে নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে আর্থিক দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। সংবাদ প্রকাশের পর অন্যায়ভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা তিনি ফেরতও দিয়েছেন। সম্প্রতি ফটক নির্মাণের কথা বলে আবার নির্লজ্জভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে টিফিনের টাকা আত্মসাতের অভিযোগও আছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য না দিয়ে সাংবাদিকদের গালিগালাজ করে কী ম্যাসেজ দিতে চান তিনি। আসলে তার লজ্জা শরম কম, এজন্য এমন করতে পারছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে যাবেন।
বিটিভির সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিক কমিটি’র (টিআইবি) সভাপতি অ্যাড. আইনুল ইসলাম বাবলু বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা কোনো অবস্থাতেই গালিগালাজ করে পোস্ট দিতে পারেন না। সংবাদে ভুল থাকলে আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে।
দৈনিক সুনামকণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক বিজন সেন রায় বলেন, প্রকাশিত সংবাদে ভুল থাকলে তিনি প্রতিবাদ বা আইনি পদক্ষেপ নিতে পারতেন। তিনি সেটা না করে বিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজ ব্যবহার করে অকথ্য ভাষায় সাংবাদিকদের গালিগালাজ করেছেন। যা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের কাজ হতে পারে না। এরকম হলে শিক্ষকদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা কমে যাবে। বিষয়টির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
সময় টিভির স্টাফ রিপোর্টার ও সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক হিমাদ্রী শেখর ভদ্র মিঠু বলেন, কোনও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ওই শিক্ষকের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। কিন্তু তা না করে তিনি বারবার ফেসবুকে ঢালাওভাবে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে খিস্তিখেউড় করছেন। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে আমরা এসব আশা করিনা।
সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজ মো. মশহুদ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে সুনামগঞ্জের কোন সাংবাদিকের সাথে তিনি কথা বলতে চান না বলে মন্তব্য করেন। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পেজ থেকে গালিগালাজ করে প্রতিষ্ঠান প্রধান এরকম পোস্ট দিতে পারেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পারি বলেই দিয়েছি”।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, এটা উনার ব্যক্তিগত স্ট্যাটাস। এর দায়-দায়িত্ব আমার নয়। আমরা আমাদের মতো করে ব্যবস্থা নেব।