শহীদনূর আহমেদ ::
২০ আগস্ট রবিবার সকাল ৮টা। ধোপাজান-চলতি নদী থেকে পঙ্গপালের মতো বের হচ্ছে পাথরবোঝাই বারকি নৌকা। স্থানীয়রা জানান, এসব অগণিত নৌকা ডলুরার সীমান্ত এলাকা থেকে আসছে। ভোররাত পর্যন্ত পাথর উত্তোলন শেষে নদীপথে এসব পাথর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সুরমা নদীতে। পরে এসব পাথর সুরমা নদীতে থাকা বাল্কহেড ও নদীতীরের বিভিন্ন ক্রাসারমিলে বিক্রি করা হয়।
জানাযায়, আদালত কর্তৃক সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ধোপাজান-চলতি নদীর পাথরমিশ্রিত বালুমহালে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এই সুযোগে স্থানীয় সিন্ডিকেট লুটে নিচ্ছে ধোপাজানের পাথর।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নদীতে পাথর উত্তোলন ও ব্যবসার সাথে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট জড়িত। প্রতিদিন ভোররাতে ধোপাজান নদীতে বারকি নৌকা প্রবেশ করানো হয়। এসব নৌকায় থাকা শ্রমিকরা সনাতন পদ্ধতিতে নদী থেকে অবাধে পাথর উত্তোলন করেন। পাথরবোঝাই নৌকা প্রতি ৫০০-১০০০ টাকা চাঁদা উত্তোলন করে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এসব পাথর নদীপথে নিয়ে গিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছে বিক্রি করেন শ্রমিকরা। এমন অভিনব পাথর সিন্ডিকেট ব্যবসায় স্থানীয় প্রভাবশালী মহল থেকে শুরু করে সুনামগঞ্জ শহরের কয়েকজন ‘রাঘববোয়াল’ জড়িত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে জানাযায়, ধোপাজান-চলতি নদী থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও ব্যবসার নেপথ্যে রয়েছে সদর উপজেলার কাইয়ারগাঁও গ্রামের মকবুল হোসেন ও ওমর আলীর নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা নদীতে নৌকা প্রবেশ ও শ্রমিক দ্বারা পাথর উত্তোলনের কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের মনোনীত লোকেরাই শ্রমিকদের কাছ থেকে পুলিশ-বিজিবি’র নাম ভাঙিয়ে চাঁদা উত্তোলন করে থাকেন। মকবুলগংদের সাথে স্থানীয় বিওপি ও পুলিশের কিছু অসাধু ব্যক্তির যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে আরও জানাযায়, চলতি নদীপথে পাথর নিয়ে সুরমা নদীতে গিয়ে সিন্ডিকেটের নির্দিষ্ট লোকদের কাছে ফুট প্রতি ৯৫-১০০ টাকায় পাথর বিক্রি করা হয়। সরেজমিনে গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বারকি শ্রমিক এই তথ্য জানান। পাথর উত্তোলন ও পরিবহনের ভিডিওসহ শ্রমিকদের বক্তব্য এ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।
এদিকে ধোপাজান-চলতি নদীতে ইজারাবিহীন অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের বিষয় নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সিন্ডিকেটের অবৈধ সুযোগ-সুবিধায় কতিপয় শ্রমিক পাথর উত্তোলন করতে পারলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিক পাথর উত্তোলন করতে না পারায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর উদ্যোগে নদীতে পাথর উত্তোলন ও পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হলেও কর্ণপাত করছে না সিন্ডিকেটের লোকেরা। বিষয়টি নিয়ে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
ধোপাজান-চলতি নদী তীরবর্তী বালাকান্দা গ্রামের বাসিন্দা হিরন মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নদীতে ইজারা বন্ধ। বেআইনিভাবে সংঘবদ্ধ চক্র নদী থেকে পাথর উত্তোলন করছে। প্রতিদিন ভোররাত থেকে দুপুর পর্যন্ত শত শত বারকি নৌকা প্রবেশ করিয়ে পাথর বের করে নেয়া হয়। সিন্ডিকেটের লোকেরা নৌকা প্রতি টাকা আদায় করে। প্রশাসনের লোকেরা এটি দেখেও না দেখার ভান করছে।
সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আলাউর রহমান বলেন, নদী বন্ধ থাকায় হাজার হাজার শ্রমিক বেকার। ইজারাবিহীন নদীতে প্রতিদিন এতো নৌকা ঢুকছে। প্রকাশ্যে পাথর উত্তোলন করা হলেও কেউ বাধা দিচ্ছে না। একদিকে বৃহৎ সংখ্যক মানুষ বেকার, অন্যদিকে অবৈধ সুযোগ দিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এটা মেনে নেয়া যায় না। এটি বন্ধ না হলে এলাকায় বিশৃঙ্খলা হবে। আশা করি প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।
ধোপাজান-চলতি নদীতে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের ব্যাপারে জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাথর উত্তোলনের বিষয়ে আমার জানা নেই। কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবো।