মধ্যনগর প্রতিনিধি ::
মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের রূপনগর গ্রামের আলমগীর হোসেন (১৯) নামের এক তরুণকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে ওই তরুণের মা মমতা বেগম (৫৫) বাদী হয়ে গত শুক্রবার রাতে চারজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৭/৮জনকে আসামি করে মধ্যনগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে মধ্যনগর থানা পুলিশ।
ওই তরুণের পরিবার, এলাকাবাসী ও মধ্যনগর থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের রূপনগর গ্রামের মৃত জামাল উদ্দিনের ছেলে আলমগীর হোসেন। তিনি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছিলেন। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে আর লেখাপড়া করেননি। চলতি বছরের ১৭জুন বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে তিনি উপজেলার বাকাতলা গ্রামের সামনের সড়কে ঘুরতে গিয়ে নিখোঁজ হন। নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় ওই তরুণের বড়ভাই জাহাঙ্গীর মিয়া গত ১৯ জুন রাতে মধ্যনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। গত ২৫জুন সকালে বাংলাদেশ সীমানা থেকে ভারতের তিন কিলোমিটার অভ্যন্তরে মেঘালয় রাজ্যের রংঢংগা এলাকার জঙ্গলে এক তরুণের মৃতদেহ পড়ে থাকার সন্ধান পায় তাঁর পরিবারের স্বজনরা। সেখান থেকে ছবি পাঠালে এটি নিখোঁজ আলমগীর হোসেনের লাশ বলে শনাক্ত করেন তারা। পরে গত ২৭ জুন সন্ধ্যায় ভারতের দক্ষিণ পশ্চিম খাসিয়া হিল জেলার নকলাং থানা পুলিশের সঙ্গে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মধ্যনগর উপজেলার সীমান্তবর্তী কাইতারকোণা নামক স্থান দিয়ে ওই তরুণের লাশটি মধ্যনগর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তরুণের লাশটি ওইদিনই ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
এই মৃত্যুটি রহস্যজন ও পরিকল্পিত হত্যাকা- মনে হওয়ায় আলমগীর হোসেনের মা মমতা বেগম (৫৫) বাদী হয়ে গত ১০জুলাই ধর্মপাশা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চারজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৭/৮জনকে আসামি করে একটি মামলার আবেদন করেন। আদালত তদন্ত করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মধ্যনগর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে গত শুক্রবার এই মামলাটি থানায় রুজু করে মধ্যনগর থানা পুলিশ। ওইদিন মধ্যরাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজন এজাহারভুক্ত আসামির মধ্যে উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের রূপনগর গ্রামের সুয়েল মিয়া (৩০) ও একই ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের জাহিদ হাসান ওরফে লালচান (৩৬) ও ইছামারী গ্রামের আঃ হক (৩২) ও রূপনগর গ্রামের জয়নাল হক (৩৪)কে গ্রেপ্তার করা হয়। রবিবার সকাল ১০টার দিকে ওই চারজনকে আদালতে সোপর্দ করে লালচান ও জয়নালকে ৭দিনের জন্য রিমান্ডে নেয়ার জন্য আবেদন করা হয়। আদালত একদিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করে। অপর দুজন আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদুল হক বলেন, আলমগীর হোসেন ও জাহিদ হাসান ওরফে লাল চান দুজন সৎভাই। স¤পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে তরুণ আলমগীর হোসেন (১৯)কে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আদালতে ১৬৪ধারা জবানবন্দীতে আসামি সুয়েল মিয়া ও আব্দুল হক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।