শহীদনূর আহমেদ ::
দ্রব্যমূল্য ও পরিবহনের যন্ত্রাংশের দাম বৃদ্ধিসহ ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের দোহাই দিয়ে জেলার প্রতিটি অভ্যন্তরীণ সড়কে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়া বৃদ্ধি করেছে পরিবহন শ্রমিক ও মালিক সংগঠন। এছাড়াও নির্ধারিত ভাড়ার বাইরেও নিজেদের মতো করে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। পথিমধ্যে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে চালকদের সাথে বাকবিত-ায় জড়িয়ে পড়ছেন অনেক যাত্রী। অতিরিক্ত হারে ভাড়া বৃদ্ধিকে ‘প্রহসন’ বলছেন যাত্রীসাধারণ। তাদের দাবি সরকারিভাবে ভাড়া নির্ধারণ ও যাত্রী হয়রানি বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তবে বর্তমান বাজারের সাথে ভারসাম্য বজায় রাখতে অভ্যন্তরীণ সড়কপথে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, সাচনা-সুনামগঞ্জ সড়কে নীতিমালা ছাড়াই চলছে কয়েক শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকসা। চালকরা তাদের ইচ্ছে মতো ভাড়া নির্ধারণ ও আদায় করছেন। কোথায় কত ভাড়া, কতজন যাত্রী পরিবহন করা যাবে তা সিএনজি চালকরাই নির্ধারণ করে থাকেন। টুকের বাজার থেকে সুনামগঞ্জ শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মাত্র ৫ কিলোমিটার সড়কে এতোদিন পর্যন্ত জনপ্রতি ৩০ টাকা ভাড়া আদায় করা হতো। স্থানীয় যাত্রীদের আন্দোলনে ৫ টাকা কমিয়ে এখন ২৫ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এতোটুকু রাস্তায় এই পরিমাণ ভাড়া আদায়কে অন্যায্য বলছেন সাধারণ যাত্রীরা।
পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে দিরাই রাস্তা পর্যন্ত এতোদিন ভাড়া ছিল ২০ টাকা। কিছুদিন যাবৎ কোনো কারণ ছাড়াই ১০ টাকা বাড়িয়ে জনপ্রতি নেয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। সুনামগঞ্জ থেকে পাগলাবাজার পর্যন্ত সিএনজি ভাড়া এতোদিন ৩০ টাকা হলেও এখন নেয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। সুনামগঞ্জ পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে দিরাই বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ৭০ টাকা ভাড়া হলেও বর্তমানে জনপ্রতি ১০০ টাকা নির্ধারণ করেছে ড্রাইভার্স ইউনিয়ন। কোনো কোনো সময় যাত্রীদের জিম্মি করে ১২০ টাকা আদায় করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে কম দূরত্বে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত হারে ভাড়া আদায়ের অভিযোগও রয়েছে।
সরেজমিনে জানাযায়, সুনামগঞ্জ-সাচনা, সুনামগঞ্জ-দিরাই, দিরাই-শ্যামারচর, সুনামগঞ্জ-পাগলা, সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার-কাটাখালিসহ জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কপথে বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে যাত্রী আনা নেওয়া করছেন সিএনজি চালকরা। প্রায়ই প্রতিটি পয়েন্টেই সিএনজি স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। এসব স্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রী আনা নেওয়া করা হচ্ছে। প্রতিটি স্ট্যান্ডের কমিটি যে ভাড়া নির্ধারণ করছে সেই ভাড়াই দিতে হচ্ছে যাত্রীদের।
ভোক্তভোগী যাত্রীরা জানান, সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে সিএনজি ভাড়া। চালকদের কাছে তারা অনেকটাই জিম্মি হয়ে পড়েছেন। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর সরকার তেলচালিত গাড়ির ভাড়া বাড়িয়েছে। সিএনজিচালিত গাড়ির ভাড়া না বাড়ালেও সিএনজির ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে চালকরা।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নিজাম উদ্দিন বলেন, সিএনজি চালকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। দূরত্বের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। যে যেমন পারছে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে। কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। আজ ৫ টাকা কাল ১০ টাকা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ভাড়া নিয়ে প্রায়ই যাত্রীদের সাথে ঝগড়াঝাটি করতে হয় সাধারণ যাত্রীদের।
সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের সমাজকর্মী আরশ নোমান বলেন, আমরা কাকে ভোগান্তির কথা বলবো। দীর্ঘদিন ধরে সাচনা-সুনামগঞ্জ সড়কে ভাড়ার বিষয়ে স্থানীয়রা আন্দোলন করছেন। কিন্তু কে শুনে কার কথা। এতোদিন শহর থেকে টুকেরবাজার পর্যন্ত ৩০ টাকা নেয়া হতো। এখন জনপ্রতি নেয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। মাত্র ৫ কিলোমিটার সড়ক পথে এই ভাড়া এক ধরনের প্রহসন। আমরা চাই সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এই ব্যাপারটি দেখবেন।
সুনামগঞ্জ জেলা অটোরিকশা মিশুক ও ট্যাঙ্কার ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সভাপতি মো. সুরত আলী বলেন, বর্তমান বাজারে সবকিছুর দাম বেড়েছে। গাড়ির পার্টসের দাম বেড়েছে। এক সময়ে একটি টায়ার ১২০০ ছিল এখন সেটি ৩৫০০ টাকা। বর্তমান বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে আঞ্চলিক সড়কের সাথে মিল রেখে অভ্যন্তরীণ সড়কে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ সড়কে ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে সুনামগঞ্জ বিআরটিএ’র মোটরযান পরিদর্শক সফিকুল ইসলাম রাসেল বলেন, কিলোমিটার প্রতি ভাড়া নির্ধারণ, মিটার স্থাপন ও খাঁচা নির্মাণসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে বাংলাদেশে শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিএনজির নীতিমালা করা হয়েছে। মহানগর পর্যায়ে নীতিমালা থাকলেও সুনামগঞ্জে এ ধরনের কোন নীতিমালা নেই। নীতিমালা না থাকায় আমাদের বেশি কিছু করার থাকে না। সাধারণত যাত্রীদের সাথে চুক্তিভিত্তিকভাবে ভাড়া নির্ধারণ করে থাকে চালকরা। তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ আমাদের কাছ আসলে আমরা পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের বিষয়টি অবগত করি। এছাড়া বেশি কিছু করার নেই। অভ্যন্তরীণ সড়কে নীতিমালার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন বলে জানান তিনি।