1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৭:১২ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সুখাইড়ে নানকার বিদ্রোহ : শাহ কামাল

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৩

সুখাইড়ে নানকার বিদ্রোহের একশত বছর পার হয়েছে। কিন্তু মানুষের মনে আজও প্রশ্ন- নানকার বিদ্রোহে অন্যতম নেতৃত্বদানকারী ব্রজবাসি দাস বনবাস গিয়েছিলেন, নাকি জমিদারদের হত্যার শিকার হয়েছিলেন?
১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট সিলেট অঞ্চলে জমিদারদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে নানকাররা যে বিদ্রোহ করেছিল তাই নানকার বিদ্রোহ নামে ইতিহাসে খ্যাত। অজয় ভট্টাচার্য-এর “নানকার বিদ্রোহ” নামক বইটির তথ্য মতে, নানকার বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল ১৯২২ সালে এবং সেই বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল বর্তমানে সুনামগঞ্জ জেলার ধরমপাশা উপজেলার সুখাইড় গ্রাম থেকে। এই বিদ্রোহের প্রধান যে ব্যক্তিটির নাম পাওয়া যায় তার নাম ব্রজবাসি। সুখাইড়ে নানকার বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ব্রজবাসি দাস। এই বিদ্রোহের পর ব্রজবাসির আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। কেউ বলে, জমিদাররা ব্রজবাসীকে জীবন্ত পুঁতে ফেলেছিল; কেউ আবার বলে, ব্রজবাসি খাসিয়া পাহাড়ের পথে দেশ ছেড়ে চলেগিয়েছিলেন। যাবারকালে নাকি একথাও বলে গিয়েছিলেন যে, জমিদারের বশ্যতা স্বীকার করা থেকে পাহাড়-জঙ্গলে গিয়ে বাঘ-ভালুকের সাথে লড়াই করে মরাও ভাল।
তৎকালীন গ্রামের আরও কিছু কিছু মানুষের সন্ধান নাকি পাওয়া যায়নি। অনেকে মনে করেন, তাদের নিয়ে ব্রজবাসী সত্যি সত্যি পাহাড়ে চলে গিয়েছিলেন।
নানকার শব্দটি এসেছে নান শব্দ থেকে। নান শব্দটি এই অঞ্চলের কোন প্রাকৃত শব্দ নয় উর্দু অথবা ফার্সি শব্দ। সুতরাং ভাষাগত বিবেচনায় বলা যায় পাঠান-মোঘল আমল থেকে শুরু করে রাজকীয় প্রভাবের সাথে সাথে সারা ভারতে বিস্তার লাভ করে এই নানকার প্রথা।
নান শব্দের অর্থ রুটি, আর এই রুটি বা খাবারের বিনিময়ে বা জমির ভোগস্বত্ব প্রদানের মাধ্যমে যে প্রজাদের রাখা হত তারাই ছিল নানকার প্রজা। এই নানকার প্রজারা ছিল মালিকের তথা জমিদারদের হুকুমদাস। শুধু প্রজাই নয় তাদের স্ত্রী-সন্তানরাও বংশানুক্রমে জমিদারদের দাস হতো। জমিদারদের ‘হাঁকে-ডাকে’ নানকারকে সশরীরে উপস্থিত থেকে জমিদারদের আদেশ মতো কাজ করে দিতে সে বাধ্য থাকতো।
সুখাইড় গ্রামের নানকার-প্রজারা সর্বপ্রথম ১৯২২ থেকে ১৯২৩ সালে বিদ্রোহ করেন। স্থানীয় একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই বিদ্রোহের সূচনা হয়। কোন একদিন এক লম্পট জামিদারের নজর পড়ে এক রমণীর উপর। লম্পট জমিদার সেই রমণীকে জমিদারের নিকট আসার জন্য ডাক পাঠায়। কিন্তু সেই রমণী জামিদারদের ডাকে চিরাচরিত প্রথামতো ছুটে না এসে বরং জমিদারদের লোকদের কড়া করে দু’কথা শুনিয়ে দেন। খবর শুনে জমিদার রাগান্বিত হয়। জমিদার তার দলবল নিয়ে নানকার সেই রমণীর বাড়িতে আক্রমণ করে। রমণীটি প্রতিরোধের চেষ্টা করে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। জমিদার রমণীকে ধরে টেনে-হিঁচড়ে এনে আটক করে রাখে।
জমিদাররা এমনটি প্রায়শই করে থাকত কারো কোন প্রতিবাদ করার উপায় ছিল না। কিন্তু সেদিন জমিদারদের এই ন্যাক্কারজনক প্রথা বা নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে সুখাইড়ের নানকার প্রজারা একযোগে জমিদার বাড়িতে চড়াও হয়ে সেই বন্দী নারীকে উদ্ধার করে আনেন। জমিদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাইলে নানকার প্রজারা জমিদারদের বিরুদ্ধে একযোগে প্রতিরোধের আওয়াজ তুলেন।
জমিদার বাড়িতে যাতায়াত, কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়ে তারা ভিটা জমি আগলে বসে রইলেন। তখন জমিদাররা নিজ গ্রামে একেবারে কোণঠাসা হয়ে দূরবর্তী গ্রামে আত্মীয়-স্বজনের নিকট সাহায্য নিতে হাত বাড়ালো এবং পার্শ্ববর্তী জমিদারদের সহযোগিতা নিয়ে নানকার প্রজাদের উপর অত্যাচার আরো বাড়িয়ে দেয়। নানকার প্রজারাও বুঝতে পারে যে, তাদের ক্ষেত্র অনেক সীমিত। তাই তারা গোপনে গোপনে পার্শ্ববর্তী এলাকা তৎকালীন সুনামগঞ্জ মহকুমার গৌরারং এবং সিলেট মহকুমার বোয়ালজুর এলাকার নানকারদের সাথে যোগাযোগ করে নানকারদের আন্দোলন আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় যেমন বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, বড়লেখা, কুলাউড়া, বালাগঞ্জে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে এবং সেই আন্দোলনের নেতৃত্বদেন কমেরেড অজয় ভট্টাচার্য। অজয় ভট্টাচার্য সিলেটে ঐতিহাসিক নানকার বিদ্রোহে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সিলেটে নানকার বিদ্রোহের প্রাণকেন্দ্র ছিল লাউতা বাহাদুরপুর এবং সেখানে ৪৫ সদস্যবিশিষ্ট নানকার আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা কমিটির স¤পাদক ছিলেন তিনি।
১৯২২ সালে শুরু হয়ে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত এই সংগ্রাম স্থায়ী হয়। যেসব ঐতিহাসিক আন্দোলনের ফলে ইংরেজ সরকার ভারত ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল সেসব আন্দোলনের মধ্যে নানকার বিদ্রোহ ছিল উল্লেখযোগ্য একটি। অবশেষে ১৯৪৯ সালে ১৮ আগস্ট তৎকালীন পাকিস্থানি মুসলিম লীগ সরকারের ইপিআর, পুলিশ এবং জমিদারদের লাঠিয়ালবাহিনীর সাথে সিলেট বিয়ানীবাজার এলাকার নানকাররা যুদ্ধকালীন সয়য়ে জমিদারদের সশস্ত্র হামলায় ৬ জন নানকার নিহত হন। যার ফলে ১৯৫০ সালে জামিদারি প্রথার বিলুপ্তি ঘটে।
[লেখক : শাহ কামাল, সদস্য, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, সুনামগঞ্জ জেলা সংসদ এবং সদস্য, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন জাতীয় পরিষদ]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com