বিশেষ প্রতিনিধি ::
যুদ্ধাপরাধ মামলায় দণ্ডিত সদ্য প্রয়াত জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুতে জামায়াত-শিবিরের ভাষায় শোক প্রকাশ করেছেন সুনামগঞ্জের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক পদবীধারী নেতৃবৃন্দ। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের ত্যাগী, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আদর্শিক নেতাকর্মীরা। গত ১৪ বছরে আদর্শিক নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে ‘নব্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী’দের কাছে টানা ও মূল্যায়ন করায় দলে আদর্শিক নেতাকর্মীদের সংখ্যা কমছে বলে মনে করেন তারা।
অন্যদিকে যারা যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলেছেন তাদেরকে হুমকি-ধমকিও দিয়েছে কিছু নেতাকর্মী। বিব্রতকর এমন ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের আদর্শিক নেতাকর্মী অনেককেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
গত ১৪ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান দ-িত জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী। তার মৃত্যুর পর অনুসারীরা মৃত্যুর সঙ্গে ভূমিকম্পকে সামনে নিয়ে এসে গুজব ছড়াতে থাকে। এসময় ভূমিকম্পের সঙ্গে এই মৃত্যুর কোন সম্পর্ক নেই, এসব গুজব এবং একাত্তরে শহিদদের স্মরণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করায় আওয়ামী লীগের খোদ পদবীধারী অনেকেই হুমকি-ধমকি দিয়েছে। অনেকে সাঈদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে মায়াকান্না দেখিয়েছে।
দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর পর সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাজিবুল করিম সাদ্দাম তার আইডি থেকে স্টেটাস দেন ‘একটি তারকার বিদায়।’ পরদিন ছাতক উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে সাঈদীর মৃত্যুতে প্রকাশ্যে শোকপ্রকাশ করে খোদ আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেন।
তাহিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবুল বাশার সাঈদীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন। দোয়ারাবাজার উপজেলা যুবলীগ নেতা শাহপরান শাহ ফেসবুকে সাঈদীর মৃত্যুর পরপরই লিখেন ‘জমিনের ভূমিকম্পের সাথে সাথে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই হৃদয়েও ভূমিকম্প হয়ে যাচ্ছে’। জেলা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক নূর আহমদ রুবেল সাঈদীর মৃত্যুতে তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে শোকপ্রকাশ করে স্ট্যাটাস দেন। ছাতক উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিপলু আহমদ তার ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট দিয়ে শোকপ্রকাশ করে সাঈদীর জন্য জান্নাতুল ফেরদৌস কামনা করেন।
এভাবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান কমিটির অনেক পদবীধারী নেতা শুধু শোকই জানাননি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ‘মহামানব’ হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন। এছাড়াও সাবেক পদবীধারী কিছু নেতাও এভাবে শোক জানিয়েছেন।
তাদের এমন কা-ে দলের পদবীধারী আদর্শিক নেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে মনের দুঃখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুবের আহমদ একজন দ-িত যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুতে দলীয় অনেক দলীয় নেতাকর্মী শোক জানানোয় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আদর্শিক নেতাকর্মীর সংকট চলছে। এ থেকে উত্তরণ পেতে হলে এবং আওয়ামী লীগকে তার আদর্শিক পথে নিয়ে যেতে হলে নেতৃত্ব বাছাইয়ে সচেতন হতে হবে। না হলে এভাবে দল বিব্রতকর হবে এবং প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দীপঙ্কর কান্তি দে বলেন, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী একজন দ-িত যুদ্ধাপরাধী। তার পক্ষে বা কোন যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে আমাদের দলের কারোই আদর্শিকভাবে অবস্থান নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। যারা তার মৃত্যুর পর এসব করেছে তাদের তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে আমরা কেন্দ্রে পাঠাবো ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। যা আমাদের জন্য বিব্রতকর। যারা এ কাজটি করেছে আমরা তাদের তালিকা করছি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।