নানা সংকটে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতা
স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন শীর্ষক করণীয় বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সচেতন নাগরিকদের প্লাটফর্ম জনউদ্যোগ সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির আয়োজনে বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, হাসপাতালে ৬৬ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ৩১ জন। বাকি অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ ৩৫ ডাক্তারের পদ খালি। মেডিসিন, অর্থোপেডিক্স ও শিশু বিভাগে কেবল ছয় পদের ৬ জন ডাক্তারই আছেন। তবে সার্জারি, গাইনী, নাক কান গলা, বিভাগের দুই জন করে পদ থাকলেও হাসপাতালে আছেন ১ জন করে ডাক্তার। চর্মরোগ, ডেন্টাল সার্জন ও ফিজিশিয়ান বিভাগেও ১ জন করে কর্মরত। সবচেয়ে বেশি পদশূন্য মেডিকেল অফিসার পদে। ৩২ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন ১৬ জন। এছাড়াও হাসপাতালের বিভিন্ন কাজ সামলানোর জন্য ৩৭ জন কর্মচারীর পদ থাকলেও আছেন ২০ জন। রোগ নির্ণয় করার জন্য স্থাপিত ল্যাবে ৪ জনের স্থলে কাজ করছেন ৩ জন। এক্সরে যন্ত্র বিকল হয়ে ১ মাস যাবৎ এক্সরে করা বন্ধ আছে।
হাসপাতালের আইসিইউ নিয়ে বক্তারা বলেন, ১০ শয্যাবিশিষ্ট আইসিইউ ইউনিটের সকল নির্মাণ ও মেশিনারিজ স্থাপন কার্যক্রম শেষ করেছে জেলা গণপূর্ত অফিস। আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের জন্য ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকা বরাদ্দ হয় সরকার থেকে। তার মধ্যে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় আইসিউ ইউনিট। নির্মাণকাজ শেষে বাকি ২৭ লাখ ৯৮ হাজার ৭৩ টাকা সরকারকে ফেরত দেয়া হয়েছে। উদ্বোধনের জন্য ইতোমধ্যে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরও করা হয়েছে। শুধু ডাক্তার ও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এই নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়াও বহির্বিভাগ সেবায় ডাক্তারদের নির্ধারিত সময় উপস্থিত না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই বিভাগে সেবা নিতে সাধারণ রোগীরা সকাল ১০টা থেকে অপেক্ষা করলেও অনেক সময় ডাক্তার আসতে দুপুর ১টা বাজে।
জনউদ্যোগ সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সাইদুর রহমান আসাদ-এর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আনিসুর রহমান, স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. হায়দার চৌধুরী লিটন, শিক্ষাবিদ যোগেশ্বর দাশ, কবি ও লেখক সুখেন্দু সেন, সুনামগঞ্জ মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক পাঞ্চালি চৌধুরী, দৈনিক সুনামকণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক বিজন সেন রায়, দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর সম্পাদক ও প্রকাশক পঙ্কজ কান্তি দে, সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সহসভাপতি অ্যাড. খলিল রহমান, বিশ্বম্ভরপুর সরকারি দিগেন্দ্র বর্মণ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক সবিতা বীর, সুনামগঞ্জ উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, এসইজি সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম মজনু, সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ, সৃজন বিদ্যাপীঠের শিক্ষক কানিজ সুলতানা।
সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, হাসপাতালের দালালচক্রের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি চায় তাহলে আমাদের সহযোগিতা নিতে পারে। আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দালালদের আইনের আওতায় আনতে পারবো। এছাড়াও হাসপাতালের ডাক্তাররা আন্তরিক হলে সেবাগ্রহীতা মানুষ ভালো সেবা পাবেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আনিসুর রহমান বলেন, হাসপাতালের মোট জনবলের অর্ধেকেরও কম রয়েছে। এটি ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও এখন প্রায় ৪১৮ জন ভর্তি রয়েছেন। তবুও এই কম জনবল নিয়ে আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেবার চেষ্টা করছি। দেড়মাস ধরে এক্সরে মেশিনের ব্যাটারি নষ্ট। এটির ব্যাটারি নাকি দেশে পাওয়া যায় না। তাই এক্সরে সেবা প্রদান নিয়ে অনিশ্চিয়তা রয়েছে। আমরা আরেকটি মেশিন আনার চেষ্টা করছি। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের একটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এটিরও খারাপ অবস্থা। হাসপাতাল এলাকায় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। আমি দু’বার ডেকে হাসপাতাল এলাকার ৫টি ভালো অ্যাম্বুলেন্স রাখতে বলেছি। তারা এটি মানছেন না। সব অ্যাম্বুলেন্স তারা হাসপাতাল চত্ত্বরে রাখেন। এটি নিয়ে সবাই আলাপ-আলোচনা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যসেবা মানোন্নয়নে অন্তত ৩ মাসে একবার সবাইকে নিয়ে বসা যায়। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো উঠে আসলে আমার পক্ষে কাজ করা সহজ হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মানব চৌধুরী, সাংবাদিক মোশফিকুর রহমান স্বপন, সোহানুর রহমান সোহান, কামরান আহমেদ, মহিমা মিলি প্রমুখ।