স্টাফ রিপোর্টার ::
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দ-িত যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর পর মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করার কারণে, গুজবের বিরুদ্ধে কথা বলায় সুনামগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন, গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী, প্রগতিশীল ধারার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের লোকজনসহ মুক্তচিন্তকদের হুমকি ধমকি দেওয়া হচ্ছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ এনে হামলার ক্ষেত্রও তৈরি করার চেষ্টা করছে। অনেককে অনলাইনে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাই আতঙ্কে ও নিরাপত্তাহীনতায় আছেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন। এছাড়াও ইস্যুতে ধর্ম অবমাননার গুজব সৃষ্টি করে হামলার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
ভুুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৪ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যুদ্ধাপরাধ মামলায় দ-িত দেলোয়ার হোসেন সাইদী মারা যান। তার মৃত্যুর প্রায় ২০ মিনিট পর ভূমিকম্প হয়। এ ঘটনাকে ইস্যু করে সাইদী অনুসারীরা এই মৃত্যুতে ‘জুলুমের বিরুদ্ধে সাঈদী শেষ নাড়া দিয়ে গেছেন’ বলে প্রচার শুরু করে। অনেকে কাবা শরিফে সাইদীকে দেখা যাচ্ছে বলেও গুজব সৃষ্টি করে প্রচারণা চালায়। এসবের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন একাত্তরে ঘাতকদের হাতে শহীদদের স্মরণ করে গুজবে কান না দিতে সবাইকে অনুরোধ করেন এবং আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী এ মৃত্যুতে শোক জানানোয় তার সমালোচনা করেন। যারা এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন তাদের অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন সাঈদী অনুসারীদের দ্বারা।
জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গঠিত গণজাগরণ মঞ্চের সুনামগঞ্জের সংগঠক, বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক শামস শামীম তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তার এই প্রতিক্রিয়া বিভিন্নজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন। তার ফেইসবুক বন্ধু অর্ণব প্রান্ত তার এই একটি পোস্ট শেয়ার করলে সেখানে Md. Mosssarraf Hossain দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
শাল্লা উপজেলার চাকুয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান প্রীতম দাস এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দেন। তার এই স্ট্যাটাসকে ধর্মের বিরুদ্ধে আখ্যায়িত করে এলাকার বেশ কয়েকজন আক্রমণাত্মক পোস্ট করে নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষদের ক্ষুব্ধ করে তুলে। তারা তার ওপর হামলা চালানোর চেষ্টাও করছে। বিষয়টি শাল্লা থানা পুলিশ, সার্কেল পুলিশ ও পুলিশ সুপারকেও অবগত করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জানা গেছে, একই এলাকার হুমকিদাতা আবু বক্কর, জুনায়েদ, মোহাম্মদ তামিম, এমডি সুইট তালুকদার, হাফিজ আসাদুল্লাহ ওসমানীসহ কয়েকজন তাকে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। তারা ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় আছেন প্রীতম দাস ও তার পরিবার।
গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক পান্না জান্নাতকে নাস্তিক আখ্যায়িত করে তার ছবিতে লাল কালি দিয়ে ক্রসচিহ্ন দিয়ে উত্তেজনাকর পোস্ট দিয়েছেন মোহাম্মদ হাফিজ নামের এক যুবক। তিনি ধর্মীয় গুজব সৃষ্টি করে তার উপর হামলার জন্য প্ররোচিত করেন ওই পোস্টে।
এভাবে জেলার বিভিন্ন এলাকার মুক্তচিন্তক, প্রগতিশীল লেখকসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন হুমকির শিকার হচ্ছেন। সহজ সরল ধর্মপ্রাণ মানুষদের বিভ্রান্ত করে তাদের উপর হামলার জন্য ইন্ধন দিচ্ছে ওই ধর্মান্ধ গোষ্ঠী।
ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও সাংবাদিক প্রীতম দাস বলেন, আমি কোন ধর্ম অবমাননাকর কিছু লিখিনি। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দ-িত একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে দৃষ্টি রেখে একটি ছোট পোস্ট দিয়েছিলাম। এরপরই আমাকে হুমকি ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এলাকার সাধারণ নিরীহ মানুষদের ক্ষুব্ধ করে হামলার প্রচেষ্টা চলছে। আমি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি অবগত করেছি।
শিক্ষক পান্না জান্নাত বলেন, আমি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক লেখা লেখি। এ কারণে আমাকে প্রায়ই অনলাইনে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী হুমকি ধমকি দিচ্ছে। তিনি বলেন, এখন যুদ্ধাপরাধ মামলায় দ-িত সাঈদীর মৃত্যুর পর আমাকে হুমকি দিচ্ছে একটি গোষ্ঠী। আমি এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
জানা গেছে এভাবে জেলার মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার মানুষরা এ ঘটনার পর হুমকির শিকার হচ্ছেন।
দিরাই শাল্লার সার্কেল এএসপি মো. শহিদুল হক বলেন, প্রীতম দাসকে হুমকির বিষয়টি অবগত হওয়ার পরই রাতে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। এখনো পুলিশ আছে। আমরা সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ করেছি। কেউ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘিœত করার চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।