বিশেষ প্রতিনিধি ::
জাতিরাষ্ট্রের জন্মদাতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিভৃতে হৃদয় গহনে ধারণ করেন এমন ভক্ত-অনুরাগী এখনো বাংলার আনাচে কানাচে দেখতে পাওয়া যায়। ক্ষমতা ও আলোচনার বাইরে থাকা এমন ভক্তদের খোঁজ খবর রাখেনা কেউ। তারাও এসবের ধার ধারেন না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এমন এক বিরল ভক্ত আছেন সুনামগঞ্জ শহরে। তার নাম মো. ইসমাইল মিয়া (৬৬)। অবসরপ্রাপ্ত কারারক্ষী তিনি। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে অর্থকষ্টে দিন কাটে তাঁর। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি কখনো। এখনো মিছিলে, রাজপথে বঙ্গবন্ধুর নামে অনুষ্ঠান হলে ছুটে আসেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কথা মানুষের মধ্যে প্রচার করছেন।
ইসমাইল মিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে রচিত গান শুনলে নীরবে অশ্রু ফেলেন। বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করে নীরবে কাঁদেন। আগস্ট মাসে যখন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নির্মমতার কথা পত্রপত্রিকা ও টিভিতে প্রচার হয় তখন তিনি ডুকরে কেঁদে ওঠেন। অভিশাপ দেন ঘাতকদের। আশপাশের যারা তাকে চিনেন সবাই তাকে বঙ্গবন্ধুপ্রেমী ইসমাইল নামে চিনেন।
কেউ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করলে তেড়ে যান ইসমাইল। শুধু চোখের জল ফেলেই তিনি বসে থাকেননি তার বড়ছেলের নামও রেখেছেন বঙ্গবন্ধুর আদরের ছোটপুত্র শহিদ শেখ রাসেলের নামে। অভাব-অনটনে দিন কাটা এই মানুষটি নীরবে নিভৃতে ধারণ করছেন তার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মানুষ বঙ্গবন্ধুকে।
সুনামগঞ্জ শহরের আফতাবনগরের মৃত সরবদী মিয়া ও কাতিক বিবি দম্পতির দুই ছেলের ছোট ছেলে ইসমাইল। এখন তার বয়স ৬৬। ২০০১ সালে অক্ষমতাজনিত কারণে কারারক্ষী থেকে অবসর নেন।
স্কুলে পড়ার সময়ই বঙ্গবন্ধুর নাম শুনে, তার দেশপ্রেমের কথা শুনে আদর্শ ও প্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে হৃদয়ে ছবি আঁকেন ইসমাইল। আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মসূচিতে শহরের বিভিন্ন স্থানে ছুটে যেতেন। নেতাদের মুখ থেকে বঙ্গবন্ধুর কথা শুনে অনুপ্রাণিত হতেন। পরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মদেওয়ায় তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বেড়ে যায়। ১৯৭৫ সনে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যার খবর শুনে তরুণ ইসমাইল মিয়া কান্নাকাটি করেন। সেই যে কান্না শুরু করেছিলেন এখনো বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে তিনি কাঁদেন।
বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখার স্মৃতিও আছে ইসমাইল মিয়ার। স্বাধীনতার পরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুনামগঞ্জে এসেছিলেন। শহরের কুদরিখালি (বিজিবি গেইট) সেতুর রাস্তায় স্টেজে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই ভরাট কণ্ঠের ভাষণ এখনো কানে বাজে। বিশালদেহী, উচ্চকণ্ঠী শেখ মুজিবুর রহমানের সেই দিনের ছবি তার চোখে ভাসে।
ইসমাইল মিয়া জানান, বঙ্গবন্ধুর ওই অনুষ্ঠানে বহু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। সারা শহরজুড়ে ছিল মানুষের মিছিল। তিনি স্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছিলেন। একাত্তরের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন।
ইসমাইল মিয়া ১৯৭৫ সনের পর থেকে আগস্ট মাস আসলে ব্যথাতুর হন। বিশেষ করে যখন মাইকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো হয় তখন তিনি চোখের জল ধরে রাখতে পারেন না। পত্র-পত্রিকা ও টিভিতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ১৫ আগস্টের বিশেষ প্রতিবেদন দেখে তিনি ভারাক্রান্ত হন। নীরবে চোখের জল ফেলেন। বঙ্গবন্ধুর নিষ্পাপ ছোট ছেলে শেখ রাসেলের মুখ ভাসে। ঘাতকরা কিভাবে একজন অবুঝ শিশুর প্রতিও এমন অমানবিক হয়েছিল সেটা ভেবে আতকে ওঠেন। অভিশাপ দেন ঘাতকদের।
ইসমাইল মিয়া বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। তিনি জাতি ও রাষ্ট্রের জন্মদাতা। তাকে কিভাবে সপরিবারে নির্মমভাবে খুন করতে পারলো ঘাতকরা। এই ঘাতকদের মধ্যে যারা এখনো বেঁচে আছে, পলাতক জীবন যাপন করছে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক এটাই আমার একমাত্র চাওয়া। বঙ্গবন্ধুকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে ধারণ করতে হলে স্বাধীনতার চেতনায় আমাদের পথ চলতে হবে। তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়াতে হবে। তাঁকে সাহস ও শক্তি জোগাতে হবে।