সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
সাত বছর বয়সী শিশু ঝুমা আক্তার। তার জন্ম সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে। এক সড়ক দুর্ঘটনায় ঝুমার মা মারা যান। এরপর থেকে প্রতিরাতে ঘুম থেকে উঠে সাত বছরের ঝুমা মায়ের জন্য কান্নাকাটি করে, মাকে খুঁজতে খুঁজতে ঘুমিয়ে পড়ে।
মা হারানো অসহায় শিশু ঝুমাকে নিয়ে তার দাদি ৮০ বছরের বৃদ্ধা ছায়াতুন নেছার সমস্যার শেষ নেই। সারাদিন মানুষের কাছে হাত পেতে সাহায্য চেয়ে যা পান তা দিয়ে এতিম শিশু ঝুমা ও তার আরও দুই ভাই-বোনকে কোনোমতে দু’মুঠো আহার জোগান। কিন্তু মাঝরাতে ঝুমার কান্নায় তিনি ঘুমাতে পারেন না। এতিম শিশুটিকে নিয়ে তিনি কী করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না।
সম্প্রতি একটা উন্নয়ন প্রকল্পের প্রচারণা চালাতে জামালগঞ্জে যান সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার। সেখানে তার কাছে ভিড়ের মধ্যে সাহায্য চাইতে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সমস্যার কথা জানান ছায়াতুন নেছা।
এ প্রসঙ্গে শামীমা শাহরিয়ার বলেন, একটা উন্নয়ন প্রকল্পের প্রচারে জামালগঞ্জ উপজেলায় যাই। সেখানে দেখা হয় ঝুমার দাদি বৃদ্ধা ছায়াতুন নেছার সাথে। সেই প্রোগ্রামে বৃদ্ধা ছায়াতুন নেছা কাঁদতে কাঁদতে আমাকে জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় ঝুমার মা মারা গেছেন। তার বাবা সোহেল মিয়া একটু পাগল টাইপের মানুষ। ঝুমা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে মাকে খুঁজে আর কান্নাকাটি করে।
শামীমা শাহরিয়ার বলেন, ঘটনাটি শুনে আমি মর্মাহত হই। মিনিটেই কিছু না ভেবেই বললাম আমিই হব ওর মা।
শুক্রবার (১৩ আগস্ট) সুনামগঞ্জ থেকে বিমানে ঢাকায় ফেরার পথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শামীমা শাহরিয়ার ঝুমার সাথে একটা ছবি শেয়ার করেন। ছবির নিচে তিনি লিখেন, ‘প্লেনে বসে ঝুমার বড় বড় চোখ করে চাহনি দেখেই বুঝতে পারছিলাম তার ভেতরের তীব্রতা, হঠাৎ বলে উঠল আমি তোমারে আম্মা ডাকি। এরপরই কান্না, আমি প্লেনের সিট বেল্ট খুলে বুকে নিয়ে বললাম আজ থেকে আমিই তুমার মা। সবাই আমার ঝুমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন তাকে সন্তানের মতো ই মানুষ করতে পারি।’
এমপি শামীমা শাহরিয়ার বলেন, রবিবার (১৩ ই আগস্ট) সকালে তিনি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের সংসদ সদস্য ভবন (ন্যাম ভবন) সংলগ্ন একটা স্কুলে ঝুমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে ঝুমাকে নিজের মেয়ে পরিচয়ে ভর্তি করাতে চান তিনি। স্কুলে ভর্তি করাতে নতুন জন্ম নিবন্ধন কার্ড বানানো প্রয়োজন। এ বিষয়ে স্কুল থেকে ফিরে ঝুমার দাদী ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে কথা বলেছেন এমপি শামীমা।
এমপি শামীমা বলেন, তিনি ঝুমার পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন, ঝুমাকে নিজের মেয়ে হিসেবে বাকিটা জীবন লালন-পালন করতে চান। এ জন্য তাদের অনুমতি প্রয়োজন। ঝুমার পরিবার তাকে সম্মতি দিয়েছে। এরপর তার স্বামী শাহরিয়ার ও অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করতে থাকা দুই ছেলে-মেয়েকে বিষয়টা জানিয়েছেন। তার স্বামী শাহরিয়ার ঝুমাকে নিজের মেয়ে হিসেবে সানন্দে গ্রহণ করেছেন এবং তার ছেলে অনিন্দ শাহরিয়ার এবং মেয়ে পর্শিতা শাহরিয়ার তাদের ছোট বোন হিসেবে আয়ের একটা অংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।