মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী ::
গত চার বছরেও সংস্কার হয়নি বিভাগীয় শহরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়কটির। অব্যাহত নদী ভাঙন ও সংস্কারের অভাবে ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়ক এখন চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কয়েক মাস পূর্বে ২৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়ক সংস্কারকাজের উদ্বোধনের পর কাজ শুরু হয়েও ভেস্তে যায়।
উপজেলা সদর থেকে বিভাগীয় শহরের যোগাযোগের একমাত্র সড়কটির অবস্থা এখন বেহাল। খানাখন্দে ভরা এই সড়কে প্রতিদিন সিলেট বিভাগীয় শহরের জরুরি প্রয়োজনে যাওয়ার তাগিদে চলাচল করছেন হাজার হাজার যাত্রী। একটু বৃষ্টি হলেই সড়কের গর্তগুলোতে পানি জমে বেহাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এদিকে, বেহাল এই সড়কে নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা। চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রী ও চালকরা। সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে যাত্রীদেরও গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। একই সাথে উপজেলার সাথে যোগাযোগের সবকটা প্রধান সড়কেরও একই অবস্থা। বড় বড় গর্তে পড়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। এছাড়া প্রতিনিয়ত বিকল হচ্ছে যানবাহন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বেহালদশার এই সড়কটিতে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হলেও শুরু হয়নি সংস্কারকাজ। দোয়ারাবাজার-ছাতক যোগাযোগের প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে বর্তমানে দোয়ারাবাজার থেকে বেতুরা পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার সড়কে উঠে গেছে কার্পেটিং। বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে সড়কের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রেফার করা কোনো রোগী জরুরি চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে বিভাগীয় শহরে। এই আট কিলোমিটার সড়কে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগী ও রোগী বহনকারী যানবাহনের।
একই অবস্থা উপজেলার অধিকাংশ অভ্যন্তরীণ সড়কের। উপজেলা সদর ইউনিয়নের লামাসানিয়া দাখিল মাদরাসা সড়ক, শরীফপুর থেকে টেংরাটিলা সড়ক, দোয়ারাবাজার থেকে ছাতক, দোহালিয়াবাজার ভায়া শ্রীপুরবাজার, শ্রীপুরবাজার থেকে কপলাবাজার, বড়কাপন, জলসী, রাধানগর, কৃষ্ণনগর, উষাইরগাঁও, সুরমা ইউনিয়নের শরীফপুর থেকে গিরিশনগর, গিরিশনগর থেকে মহব্বতপুরবাজার, মহব্বতপুরবাজার থেকে কান্দাগাঁও, মহব্বতপুরবাজার থেকে রাবারড্যাম, রাবারড্যাম থেকে চকবাজার, চকবাজার থেকে লিয়াকতগঞ্জ, বোগলাবাজার থেকে বাংলাবাজার – এসব সড়কের অবস্থাও বেহাল।
উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগের বোগলাবাজার থেকে দোয়ারাবাজা সড়ক প্রায় ১৩ কিলোমিটার, বোগলাবাজার থেকে বাগানবাড়ি রিংকু বর্ডার হাটের প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়কের অবস্থাও নাজুক। লক্ষ্মীপুরের সাথে প্রায় ১৫ কিলোমিটার যোগাযোগ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলেই এই সড়কে বড় বড় গর্তে পানি জমে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে পড়লে মোটর সাইকেল অথবা সিএনজি কোনটাই চলেনা। হেঁটেও চলা যায় না।
লিয়াকতগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী সুজন চক্রবর্তী বলেন, আমার বাসা দোয়ারাবাজার সদরে। প্রতিদিন আর বাসায় যেতে পারিনা। সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে সপ্তাহ বা ১৫ দিনে একদিন বাসায় যেতে হয়। বর্ষা হলে সড়ক এতোটাই খারাপ হয়ে ওঠে মোটরসাইকেল বা সিএনজি কোনটাই চলেনা।
এদিকে দোয়ারাবাজার উপজেলা খেয়াঘাট থেকে শ্রীপুর ভায়া কপলাবাজার পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় উঠে গেছে। বেশ কয়েক স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়ে গাড়ি চলাচলের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সিএনজি ড্রাইভার আল আমিন বলেন, উপজেলা খেয়াঘাট থেকে ছাতক, সুনামগঞ্জ, শ্রীপুর, বড়কাপন সবগুলো সড়ক চলাচল অযোগ্য। রাস্তার বেহালদশার কারণে দিনে ২শ টাকাও রুজি করতে পারি না। ৫ বছর ধরেই সড়কগুলোর এমন বেহাল দশা, দেখার কেউ নেই।
উপজেলা সদরের মাঝেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বলেন, বিভাগীয় শহর সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়কটির এখন বেহাল দশা। কয়েক মাস পূর্বে সড়ক সংস্কারকাজের উদ্বোধন হলেও এখনও কোন অগ্রতি নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফ মুর্শেদ মিশু বলছেন, বন্যার আশঙ্কা এবং অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে দোয়ারাবাজার-ছাতক সড়ক সংস্কার কাজ সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেওয়ান তানভীর আশরাফী চৌধুরী বাবু বলেন, বিগত ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার সবকটি সড়ক চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে। ব্রিজ, কালভার্ট ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে দোয়ারাবাজার-ছাতক সড়কের সংস্কারকাজ চলমান রয়েছে এবং অন্যান্য সড়ক এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।