পুঁজির মানবিকতা বিরোধী প্রবণতা থেকে মুক্তি চাই
পত্রিকায় প্রকাশ ‘আধা কেজি মরিচ চুরির অপবাদ’ আরোপ করে এক ‘কলেজ ছাত্রকে ডেকে নিয়ে বর্বর নির্যাতন’। নিপীড়নের শিকারটি ‘সিলেটের এমসি কলেজে মাস্টার্স পড়–য়া’। প্রতিবেদনটি গত সোমবার (৭ আগস্ট ২০২৩) একটি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। এমন চুরির ছোটবড় ঘটনা ঘটছে অহরহ। তুচ্ছ আধা কেজি মরিচ চুরির অভিযোগে একজনকে শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে আর বিরাট অঙ্কেরÑ ২০০ কোটিÑ টাকা তছরুপের জন্যে বোম্বর জ্যাকুলিনকে (একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা) তেমনটা করা হচ্ছে না, যদিও তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আমাদের দেশে এমন কতো হাজার কোটি টাকা চুরি অথবা তছরুপ হচ্ছে, এককথায় দিনে দুপুরে ডাকাতি হচ্ছে কারও কীচ্ছুটি হচ্ছে না, সকলেই চুপটি করে বসে আছে, বরং যারা কীছু একটা করতে পারেন তাঁরা বখরা আদায় করে মজা লুটছেন। অর্থাৎ চুরি, তছরুপ, ডাকাতি, ছিনতাই কিংবা লুট যাই বলুন তাতে কীছু যায় আসে না, বরং এবংবিধ পদ্ধতি কার্যকর থেকেই পুঁজির পুঞ্জিভবন ঘটে চলেছে। বিশ্বব্যাপী পুঁজির দৌরাত্ম্যকে ঠেকানো যাচ্ছে না। পুঁজির আদি অকৃত্রিম মূল উদ্দেশ্য ক্রয়ক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যটি এখন রাজনীতিক ক্ষমতা অর্জনে পর্যবসিত হয়েছে। কোনও কোনও দেশের সা¤্রাজ্যবাদের দালাল রাজনীতিকরা নিজেদের দেশ পর্যন্ত প্রকারান্তরে বিক্রি করে দিতে কসুর করছেন না।
জ্যাঁ ব্যাপতিস্ত সে (১৭৬৭Ñ১৮৩২ একজন ফরাসি অর্থনীতিবিদ, তিনি অর্থনীতির ইতিহাসে উৎপাদনতত্ত্বের একজন জনক বলে স্বীকৃত। সে বলেছেন, “পুঁজি যদি নিজে নিছক চুরি বা বাটপারি নাও হয়, তবু নিজের এই উত্তরাধিকার থেকে পুতঃপবিত্র হতে হলে তার আইন প্রণয়ণের দরকার হয়।” কথাটার একটি তাৎপর্য এই যে, এটি সচেতনজনের মনে ভাবনার উদ্রেক করে এবং ভাবনাটা কীছুটা অগ্রসর হলেই পুঁজির প্রভুত্ব যে পৃথিবীকে যুদ্ধাহত করে ও প্রকৃতিকে নির্মমভাবে ধর্ষণ করে করে ইতোমধ্যে মৃত্যুপথযাত্রী করে তেলেছে চোখের সামনে তার মূর্তনির্দিষ্টরূপ প্রতিভাত হয়। সাম্যাজ্যদখল ও সম্পদলুণ্ঠনের অব্যর্থ উপায় যুদ্ধগুলোর কথা মনে পড়ে। আধ কেজি মরিচ চুরির ঘটনা যতোই তুচ্ছ হোক, সেটা চলমান ইউক্রেনের যুদ্ধ সংঘটনের ঘটনার সঙ্গে একসূত্রে জুড়ে যায়। আধ কেজি মরিচের জন্য একজনকে হয় তো আচ্ছামতো পেটানো হয় আর সম্পদ আহরণের উপায় উৎপন্নের জন্য ইউক্রেনে যুদ্ধ বাঁধিয়ে প্রাণ, মাটি ও আকাশ এককথায় পৃথিবীর ক্ষতি করা হয়। উভয়ক্ষেত্রে সম্পদ অথবা পুঁজিই মুখ্য কারণ। পুঁজির এই প্রবণতা মানবিকতার বিরোধী, এই অভিশপ্ত প্রবণতা থেকে পৃথিবীর মুক্তি চাই।