1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

বালি উত্তোলনে ভাঙছে যাদুকাটার পাড়

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৩

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
একই ঘরে গরু আর পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে বসবাস করছেন রুবিনা আক্তার। তাহিরপুর উপজেলায় হাওরবেষ্টিত এ গ্রামের মানুষের প্রধান জীবিকা মাছ শিকার। তবে হাওর এলাকায় ইজারাদারের দাপটে কিছুটা অগোচরে মাছ ধরতে হয় তাদের। ছোট মাছ বিক্রি করে দিনে এক-দেড়শ টাকার বেশি আয় হয় না রুবিনাদের। কিন্তু সীমিত আয় দিয়েই বর্ষাকালের ছয় মাস তাদের ভিটামাটি রক্ষায় পানির সঙ্গে লড়াই করতে হয়।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে স্থানীয় বাসিন্দা আলী নূর বলেন, ভাঙন ঠেকাতে এ গ্রামের প্রায় ১০০ ঘরে প্রতি বছর ১৫-২০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। বাঁশ, মাটি-বালির বস্তা আর বনঘাস দিয়ে তিন স্তরের প্রাকৃতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হয়। তাই সীমিত আয়ের প্রায় দুই হাজার বাসিন্দার এ গ্রামকে ধার-কর্য করে হলেও আলাদা একটি বাজেট রাখতে হয়।
হাওর থেকে বছর দুয়েক আগে ব্যাপক হারে বালি উত্তোলনের কারণে ভাঙনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে নি¤œ আয়ের এসব মানুষকে। এখনো সেখানে বালি তোলার পাইপ দেখা যায়। যদিও এলাকাটি থেকে বালি তোলা শেষ।
অবৈধভাবে বালি উত্তোলনকারীদের নজর এখন তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীপারে। এখানে দীর্ঘদিন থেকে নদীর পাড় কেটে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর। কিন্তু সা¤প্রতিক সময়ে প্রকাশ্যে ড্রেজার, বোমা মেশিন দিয়ে নদীর পাড় কাটা হচ্ছে। এতে ভেঙে যাচ্ছে স্থানীয়দের বসতবাড়ি। আর এসবের প্রতিবাদ করলে বালি উত্তোলনকারীরা মারধর এবং মামলার হুমকি দেয় বলে জানান তারা।
এখানকার ঘাগটিয়া আদর্শ গ্রামের গৃহিণী রাজিনা বেগম বলেন, নদীর পাড় কাটতে কাটতে তারা আমার বাড়ির উঠান কাটা শুরু করেছে। আমি বাধা দিলে আমার ওপর হামলা করে এবং আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। এখনো তাদের পাড় কাটা চলছেই। যেকোনো মুহূর্তে আমার বাড়িটা নদীগর্ভে চলে যাবে। বসতভিটা রক্ষায় সবার সহযোগিতাও চান তিনি।
এদিকে যাদুকাটা নদীর পাড় কাটা বন্ধ করে ঘাগটিয়া গ্রামসহ ২০টি গ্রাম রক্ষার দাবিতে গত শুক্রবার বিকালে যাদুকাটা নদীর তীরে প্রতিবাদ সমাবেশ করে এলাকাবাসী। ঘাগটিয়া গ্রামবাসীর আয়োজনে এবং পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে ঘাগটিয়া গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের ভুক্তভোগী মানুষ যোগ দেয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাদাঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দীন বলেন, স্বাধীনতার পর কখনো এ নদীতে ড্রেজার দেখা যায়নি। আর গত ৪০ বছরের ইতিহাসে কখনো নদীর পাড় কাটা হয়নি। অথচ স্থানীয় জনপ্রতিধিদের মাধ্যমে এখন বালি তোলা হচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য কোনো দিন এসব এলাকা দেখতেও যাননি। এসব কীসের আলামত সে প্রশ্ন রাখেন তিনি। থানা থেকে এখানে আসতে ১৫ মিনিট লাগে উল্লেখ করে অভিযান গতিশীল হলে এসব বন্ধ হতো বলে জানান এ চেয়ারম্যান। একটি বালিবাহী নৌকা পূর্ণ করতে ২ ঘণ্টা সময় লাগে। এসব নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে বলেও জানান নিজাম উদ্দীন।
বিষয়গুলো নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, লিজ নিয়েই বালি তোলা হচ্ছে। এলাকাবাসী না দিলে কোন বাহাদুর আছে, বালি তুলে নিয়ে যাবে প্রশ্ন রাখেন তিনি। টাকার জন্য স্থানীয়রা নিজেরা নিজেরাই বালি তুলছে বলে মন্তব্য করে তাদের নদীর মাঝখান থেকে বালি তোলার নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানান মোয়াজ্জেম। এতে নদীর নাব্য বৃদ্ধি পেয়ে লাভ হবে বলে যুক্তি দেন তিনি। এসব নিয়ে বোঝানোর জন্য তিনি কয়েকবার নদীর তীরে গিয়েছিলেন। তবে এলকাবাসীর বিরুদ্ধে মারধর বা হামলার হুমকির বিষয়ে কোনো অভিযোগ শোনেননি তিনি। এমব নিয়ে প্রশাসনকে জিজ্ঞেস করতে বলেন স্থানীয় এ সংসদ সদস্য।
এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, নদীর পাড় কাটার কারণে এ এলাকার পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতির সম্মুখীন। এ অপকর্ম বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর, হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশের ২০১০ সালের বালুমহাল আইনে বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা-বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালি বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এছাড়া সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালি ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ, যা অমান্য করলে দুই বছরের জেলসহ জারিমানার বিধান রয়েছে।
এ ধরনের অবৈধ তৎপরতা থামাতে প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, এখানে আগে থেকেই একটি সংঘবদ্ধ চক্র অবৈধভাবে এসব কাজ করছে। তারা প্রভাবশালী বলেও জানান তিনি। আর প্রতিবাদ করতে গেলে স্থানীয়দের হয়রানি হওয়ার বিষয়টিও শিকার করেন। তবে পাহারা দেয়া সম্ভব না জানিয়ে স্থানীয়দের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এসব প্রতিহতে স¤পৃক্ত করার কথা জানান। বালি উত্তোলনের খবর পেলে নিয়মিতভাবে অভিযান চলছে বলেও জানান ইউএনও।
জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক জোট আইপিসিসির বিজ্ঞানী ড. আতিক রহমান বলেন, নানাভাবে মাটির মধ্যে বালির একটি স্তর তৈরি হয়। এখন নিচ থেকে বা পাশ থেকে যদি এ বালি তুলে নেয়া হয়, তাহলে স্তরটি ভেঙে যায়। আর সিস্টেম ভেঙে পড়ায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়। বালি ব্যবসায়ীরা তো ব্যবসার জন্য বেশি বেশি বালি তোলেন কিন্তু এতে মানুষের বাড়ি, কৃষিজমি ভাঙনের মুখে পড়ে। – বণিক বার্তা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com