হাসান বশির ::
তাহিরপুরের বড়ছড়া, বাগলী চারাগাঁও শুল্ক স্টেশন থেকে পাথর, যাদুকাটা বালু মহাল থেকে সংগ্রহকৃত বালুবাহী নৌকা থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র নাম ভাঙিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। প্রতিদিন নৌ শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার রক্তি নদী ও আবুয়া নদী থেকে ফতেপুর ইউনিয়নের রঙ্গিয়ারচর ব্রিজের নিচ দিয়ে চলাচলকারী নৌকা থেকে দিনে-দুপুরে এই চাঁদাবাজি চলছে। চাঁদা দিতে রাজি না হলে নৌকায় থাকা শ্রমিকদের লাঞ্ছিত এবং মারধর করে চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা। ফলে ব্যবসা পরিচালনায় ক্ষতিগ্রস্তসহ নিরাপদভাবে পাথর ও বালু পরিবহনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের মাঝে।
এদিকে বালুবাহী নৌকা থেকে চাঁদা আদায় বন্ধের দাবি জানিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেছেন বাদাঘাট স্টেশন ক্রাশার মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেড, বাদাঘাট তাহিরপুর সুনামগঞ্জ সমিতিসহ মালবাহী নৌযান শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের নেতৃবৃন্দ।
গতকাল বুধবার (৯ আগস্ট) জেলা প্রশাসক বরাবরে দায়েরকৃত অভিযোগ থেকে জানাযায়, তাহিরপুরের বড়ছড়া, বাগলী চারাগাঁও শুল্ক স্টেশন থেকে পাথর, যাদুকাটা বালু মহাল থেকে বালু ক্রয় করে নৌপথে পরিবহনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হয়ে থাকে। নৌকাভর্তি পাথর-বালু বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের রক্তিনদী রঙ্গিারচর নদী এলাকায় এসে পৌঁছলে একটি চক্র বিআইডব্লিউটিএ’র নামে প্রতি নৌকা/বাল্কহেড থেকে প্রতি ঘন ফুট এলসি পাথর পরিবহনের জন্য ২ টাকা ৫০ পয়সা ও বালি থেকে এক টাকা হারে প্রায় প্রতি নৌকা থেকে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন করছে। চাঁদা না দেওয়ায় নৌকার মাঝিগণ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ফতেপুর-রঙ্গিয়ারচর এলাকায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জেটি থাকলেও দুর্লভপুর থেকে আনোয়ারপুর পর্যন্ত কোথাও বালু উঠা-নামা করা হয় না। বিআইডব্লিউটিএ-এর নামে চক্রটি প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। নৌযান মাঝিদের হয়রানি ও চাঁদাবাজি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন মালবাহী নৌযান শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।
এদিকে, মিয়ারচর বালুপাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল গণি বলেন, প্রতিফুটে প্রতি নৌকা/বাল্কহেড থেকে প্রতি ঘন ফুট এলসি পাথর পরিবহনের জন্য ২ টাকা ৫০ পয়সা ও বালি থেকে এক টাকা হারে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন করছে। চাঁদা না দেওয়ায় নৌকার মাঝিগণ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন। চলন্ত নৌকা থেকে চাঁদাবাজি বন্ধে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি।
বালিজুড়ি মিনি ক্রাশার সমিতির সাধারণ স¤পাদক তফাজ্জল হোসেন, তারিপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউপির ঘাগড়াগ্রামের কামাল হোসেন একই অভিযোগ তুলেন।
বাদাঘাট স্টোন ক্রাশার সমবায় সমিতির সাধারণ স¤পাদক অলি ইসলাম বলেন, এ চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে ধর্মঘট ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবো।
যাদুকাটা বালু ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সমিতির সভাপতি আব্দুস সাহিদ বলেন, যাদুকাটা নদীতে বালু উত্তোলন করা হয়। রক্তি নদীর ফতেপুর এলাকায় বালু পরিবহনকারী নৌযান থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র নামে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্রটি। ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। চাঁদাবাজদের কবল থেকে পরিত্রাণ পেতে আমরা প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ কামনা করছি।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সফর উদ্দিন বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র নামে বালু-পাথরবাহী নৌযান থেকে প্রকাশ্যে চাঁদা নিচ্ছে একটি চক্র – এমন একটি অভিযোগপত্র দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এখানে কোন জেটি ছিল না। আমরা বিষয়টি বিভিন্ন সভা সেমিনারে আলোচনার পর নতুন করে একটি জেটি নাকি স্থাপন হয়েছে। তবে মালামাল উঠা-নামার কোন কাজ এখানে হচ্ছে না।
এদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা যায়, আশুগঞ্জ-ভৈরব বাজার নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার আবুয়া ও রক্তি নদীর সংযোগস্থল হতে লাউড়েরগড় পর্যন্ত এলাকায় উভয় তীরের নৌ-যানের উঠানামাকৃত মালামালের জন্য শুল্ক চার্জ আদায় করতে ইজারা প্রদান করা হয়েছে। ইজারা শর্তে চলন্ত অবস্থায় নৌযান হতে শুল্ক আদায় না করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুর্লভপুর থেকে লাউড়েরগড় পর্যন্ত কোথাও বালু উঠানামা হয় না। যাদুকাটা নদীর মাঝখান থেকে শ্রমিকরা বালু উত্তোলন করে নদীর মাঝখানেই নৌকা লোড করেন। যেখানে নির্দিষ্ট সীমানার কোথাও বালু লোড-আনলোড হয় না। কিন্তু চলন্ত নৌযান থেকে অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন চলছে বেপরোয়াভাবে।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র সুনামগঞ্জ উপ-পরিচালক সুব্রত রায় জানান, ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা এ ঘাট ইজারা হয়েছে। ৩৪ টাকা ৫০ পয়সা প্রতি মেট্রিক টনে পাথর থেকে টোল আদায় করা যাবে। বালু থেকে ২৫ পয়সা প্রতি বর্গফুটে। চলন্ত নৌকা থেকে টোল নেওয়ার নিয়ম নেই। নৌযানের উঠা-নামাকৃত মালামালের জন্য শুল্ক আদায় হয়ে থাকে। বিআইডব্লিউটিএ’র নামে চাঁদা তোলা হচ্ছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি দেখবো।