স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের কাছ থেকে বিদ্যালয়ের তোরণ ও ক্যাম্পাসে শহিদ মিনার তৈরির জন্য ৩০০ টাকা করে উত্তোলন করছেন প্রধান শিক্ষক। ইতোমধ্যে বেশকিছু ছাত্রী প্রধান শিক্ষক নির্ধারিত টাকা দিয়েও দিয়েছেন। কিন্তু অসহায় অভিভাবকরা প্রতিবাদ করতে পারছেন না। টাকা উত্তোলনের বিষয়টি প্রধান শিক্ষক স্বীকার করেছেন। এটি বিদ্যালয়ের নানা খাতে ব্যয় করা হবে বলে জানান তিনি। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাত থেকে টাকা উত্তোলন করে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। কেবল টিফিন ও ম্যাগাজিন ফান্ডে নামকাওয়াস্তে কিছু টাকা আছে।
সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই বিদ্যালয়ে ১ হাজার ২৫০ জন ছাত্রী পড়াশোনা করে। প্রধান শিক্ষক হাফিজ মশহুদ চৌধুরী নানা ছুতোয় ছাত্রী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করছেন। নানা অনিয়মের প্রতিবাদ করার কারণে তিনি সরকারি চাকুরিজীবী হয়েও বিভিন্ন পেশাজীবীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষোদগার করেন। তার বিরুদ্ধে কয়েক মাস আগে জেলা প্রশাসকের কাছে নালিশ দিয়েছিলেন একটি পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সম্প্রতি তিনি বিদ্যালয়ের প্রায় ১ হাজার ২৫০ জন ছাত্রীকে ৩০০ টাকা করে দেওয়ার নির্দেশনা জারি করেছেন। স্কুলের তোরণ নির্মাণ ও ক্যাম্পাসে শহিদ মিনার নির্মাণের কথা বলে তিনি এই টাকা ছাত্রীদের প্রতি ধার্য্য করেছেন।
এদিকে সুনামগঞ্জ শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রবেশপথে ১০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন তোরণ নির্মাণ করছে শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তর। সরকারি নকশায় সম্পূর্ণ সরকারি খরচে এটি নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক অন্যায়ভাবে এই টাকা উত্তোলনের নির্দেশ দেওয়ার পর বাধ্য হয়ে অভিভাবকরা ৩০০ টাকা করে দিচ্ছেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রীর বাবা জানান, কিছুদিন পরপরই অন্যায়ভাবে বিদ্যালয়ে নানা ছুতোয় টাকা নেওয়া হচ্ছে। আমার সাধ্য থাকলেও অনেকের সাধ্য নেই। কিন্তু কোমলমতি সন্তানের চাপে তারা টাকা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এমন অনিয়ম ও দুর্নীতি আশা করিনা আমরা। কিন্তু প্রতিনিয়ত এটাই হচ্ছে এই স্কুলে।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক হাফিজ মশহুদ চৌধুরী ৩০০ টাকা করে নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ক্যাম্পাসে শহিদ মিনার নেই, তোরনের পাশে গ্যাসলাইনের রাইজার আছে, সেটি সংস্কার করতে হবে আমাদেরকে। এছাড়াও স্কুলের বিদ্যুৎ, কম্পিউটার খাত সংস্কারেও এই টাকা ব্যবহার করা হবে। সরকার এসব সংস্কারে রুটিন মেইনটেনেন্স দেওয়ার পরও কেন টাকা নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার এই খাতে অল্প টাকা দেয়। এই টাকায় পোষায় না। তাই ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নানা কাজ করতে হয়।
সুনামগঞ্জ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমরা স্কুলের সামনে দৃষ্টিনন্দন তোরণ নির্মাণ করে দিচ্ছি। সরকার পুরো বরাদ্দ দিয়েছে। এই খাত দেখিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা উত্তোলন করা অনৈতিক।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হোসাইন মাহমুদ মোজাহিদ বলেন, আমিও শুনেছি উনি ৩০০ টাকা করে নিচ্ছেন। এভাবে তিনি অন্যায়ভাবে ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিতে পারেন না। এই বিষয়টি জরুরিভাবে দেখা হবে।