1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৯ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ধোপাজানে বেপরোয়া পাথরখেকো সিন্ডিকেট : এবার আদালতে তথ্য গোপন করে পাথর লুটের পাঁয়তারা

  • আপডেট সময় সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০২৩

 

স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জের পাথরমিশ্রিত বালুমহাল ধোপাজান-চলতি নদীতে বেপরোয়া পাথরখেকো সিন্ডিকেটের অশুভ অপতৎপরতা থামছে না। ক্রমেই বাড়ছে তাদের দৌরাত্ম্য। তারা নদী থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে টাস্কফোর্স কমিটির মাধ্যমে কৌশলে নিলাম দিয়ে নির্ধারিত সময়ে তা অপসারণ করার নির্দেশনা থাকলেও সেটা মানছেনা। বরং নিলামের কাগজ ব্যবহার করে পাথরের স্তূপ যথাস্থানে রেখেই নতুন করে পাথর তুলে অবৈধভাবে কামিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। এতে সরকার রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি নদীও পড়ছে হুমকিতে। কিন্তু এবার উচ্চ আদালতকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আদালতে তথ্য গোপন করে অনিয়মে জড়িয়েছে সিন্ডিকেটটি। সরকারি নিলামের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে শতভাগ পাথর অপসারণ করার কথা থাকলেও তথ্যগোপন করে নতুনভাবে আরও সময় বাড়িয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেটটি। সম্প্রতি স্থানীয় লোকজনের পক্ষ থেকে গত বুধবার এই লুটতরাজের লাগাম টেনে ধরতে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেছেন সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সাংবাদিক আল হেলাল।
তার আবেদন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টাস্কফোর্স অভিযানের মাধ্যমে গত ২২ মে সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ডলুরা নদীর পাড় ও তালেবের ঘাট এলাকা থেকে প্রকাশ্যে ১ লাখ ৬৪ হাজার ১৭৩ ঘনফুট জব্দকৃত পাথর নিলামে বিক্রয় করে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা প্রশাসন। উন্মুক্ত নিলামে সর্বোচ্চ প্রতি ঘনফুট পাথর ৮৩ টাকা দরে নিলাম পান কাইয়ারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ফারুক মিয়া। জব্দকৃত পাথর সরানোর জন্য ৩০ মে থেকে ৩০ জুন একমাস সময় দেয়া হয়। স্থানীয় বিওপি ক্যাম্প কমান্ডার, সদর উপজেলা ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারীকে পাথর অপসারণে তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রশাসনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩০ দিনের মধ্যে ৭ দিন বন্ধ থাকলেও বাকি ২৩ দিনে নিলামকৃত সকল পাথর (মোট ১ লাখ ৬৪ হাজার ১৭৩ ঘনফুট) সরানো হয়। পাথর সরানোর পর আরও ৬৩ হাজার ৪৩ ফুট পাথর সরানো বাকি রয়েছে উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে সময় বৃদ্ধির আবেদন করেন নিলামগ্রহীতা ফারুক মিয়া। আবেদনের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ পাথর সরানো হয়ে গেছে বলে আবেদনের জবাব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভীন। এদিকে নিলামে পাওয়া সম্পূর্ণ পাথর সরানোর তথ্য গোপন করে সময় বৃদ্ধির জন্য উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন ফারুক মিয়া। রিট পিটিশন দায়েরের প্রেক্ষিতে আদালত আরও ২৫ দিন সময় বৃদ্ধি করেন। তথ্য গোপন করে আদালতের সাথে এমন অভিনব প্রতারণার কৌশল অবলম্বন করে হাইকোর্টের সঙ্গে মিথ্যাচার করে সিন্ডিকেট ফায়দা হাসিলের পাশাপাশি প্রশাসনকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে গত বুধবার আবেদন করেছেন গণমাধ্যমকর্মী আল হেলাল।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নিলামে জব্দকৃত সম্পূর্ণ পাথর নিলামগ্রহীতা ফারুক মিয়া ও সুনামগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ভূমি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেনের যৌথ স্বাক্ষরে যথাসময়ের মধ্যেই অপসারণ করা হয়েছে মর্মে প্রশাসনের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এরপরেও অন্যায়ভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসক বরাবরে সম্পূর্ণ পাথরের মধ্যে ১ লাখ ১ হাজার ১৩০ ঘনফুট পাথর অপসারণ করেছেন দাবি করে আরও ২৫ দিন সময় বৃদ্ধির জন্য গেল দুই জুলাই আবেদন করেন। এই আবেদনের রিসিভ কপি উচ্চ আদালতে দাখিল ও তথ্য গোপনের অপরাধ করে আদালত কর্তৃক আরও ২৫ দিনের সময় বৃদ্ধির আদেশ পান ফারুক মিয়া।
জানা যায়, এই অন্যায় কাজে অর্থাৎ বালু-পাথর লুটের উৎসবে কেবল ফারুক মিয়া নয়। সুনামগঞ্জ শহরের একটি বড় সিন্ডিকেট কাজ করছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিলামের পাথর বিক্রয়ের সময় বাড়িয়ে বালু-পাথরখেকো এই সিন্ডিকেট এখানে বোমা মেশিন চালিয়ে বালু-পাথর উত্তোলন করে ধোপাজান নদীকে বিপন্ন করে তুলেছে। তাদের লাগাম টেনে ধরতে বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও স্মারকলিপিতে অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মানুষ।
আবেদনের ব্যাপারে জানতে চাইলে সাংবাদিক আল হেলাল বলেন, এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে ধোপাজান চলতি নদীতে অবৈধ পাথর ব্যবসার সাথে জড়িত। এরা একদিকে নিজেদের লোক দিয়ে নদী থেকে পাথর তুলে পাড়ে স্তূপ করে রাখে, অন্যদিকে নিলামে অংশগ্রহণ করে পাথর অপসারণের বৈধতা নেয়। গেল নিলামে যে সময়সীমা ছিল তার মধ্যে সকল পাথর সরিয়েছেন ইজারাদার। অথচ আদালতে এই তথ্য গোপন করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নতুন করে পাথর উত্তোলনের পাঁয়তারা করা হচ্ছে। নিলামে নদীর পূর্ব পাড়ের পাথর অপসারণের অনুমতি পেলে ইজারাদার রাতের আঁধারে পশ্চিম পাড়ের স্তূপকৃত পাথর পাচার করেছেন। এখন নতুন করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাথর লুটপাটের পাঁয়তারা করা হচ্ছে। আদালতকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মূলত সিন্ডিকেট নদী থেকে আরো অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের ফন্দি আঁটছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জনস্বার্থে আমি অভিযোগটি করেছি।
নিলামগ্রহিতা ফারুক মিয়া অবশ্য বলেছেন, আমার আরও প্রায় ৬০ হাজার ঘনফুটের উপরে পাথর নেওয়ার বাকি রয়েছে। এনিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করায় আদালত আরও ২৫ দিন সময় বাড়িয়েছেন। আদালতে তথ্য গোপনে বিষয়ে কিছু বলতে চাননি তিনি।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভীন বলেন, নিলাম গ্রহিতা উচ্চ আদালতের আদেশের আগে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করলে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সকল পাথর সরানো হয়ে গেছে বলে তাদের আবেদন গ্রহণ করা হয়নি। পাথর সরানোর তথ্য তশীলদার লিপিবদ্ধ করেছেন। এই তথ্য গোপন করে আদালতে গিয়ে রিট পিটিশন করে ২৫ দিনের সময় বাড়ানো’র আদেশ নিয়ে এসেছেন ফারুক মিয়া। আদালত আদেশ দেয়ার আগে প্রশাসনের কাছে কিছু জানতে চাননি। আদালত আদেশ দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু সংশ্লিষ্ট এলাকায় আর কোনো পাথর নেই। এ বিষয়ে কি করণীয় তা ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বললেন, রিট দায়েরের পর উচ্চ আদালতের এমন একটি আদেশ হয়েছে শুনেছি। আমরা এখনো পূর্ণাঙ্গ আদেশ হাতে পাইনি। আদেশ পেলে দেখবো কোন গ্রাউন্ডে সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com