শাল্লা উপজেলার বাহাড়া ইউনিয়নের মেঘনাপাড় গ্রামের ঘটনা। ঘটনাটি ধর্ষণচেষ্টার। ভুক্তভোগী মহিলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় অভিযোগ করেছেন। মহিলার স্বামী অন্যের বাড়িতে কাজ করেÑ অন্যথায় হাওরে মাছ ধরেÑ জীবননির্বাহ করেন। হতদরিদ্র এই মহিলাকে উত্ত্যক্ত করেন এই একই গ্রামের একজন সাবেক ইউপি সদস্য। বিষয়টি গ্রামের গণ্যমান্যজনকেও জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রতিকার মেলেনি। বরং অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ইউপি সদস্য আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন এবং গত বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট ২০২৩) ভোর রাতে মহিলার স্বামীর অনুপস্থিতির সুযোগে ঘরে ঢুকে মহিলার উপর চড়াও হয়ে ধর্ষণ করার চেষ্টা চালান। মহিলার চিৎকার চেচামেচিতে লোকজন এগিয়ে এলে ইউপি সদস্যটি চম্পট দেন। এ ঘটনার পরে যথারীতি আপসের প্রস্তাব উঠে এবং থানায় অভিযোগ করা থেকে বিরত রাখতে চাপ প্রয়োগের তৎপরতাসহ বাধা প্রদানের চেষ্টা চলে। কিন্তু থানায় অভিযোগ করা হয়েছে এবং অভিযোগ গ্রহণ করা হলেও মামলা নিবন্ধন হয়নি। এখন হুমকি ধামকি চলছে।
এই ঘটনার কোনও মর্মার্থ অথবা নির্গলিতার্থ আছে কী? নিশ্চয়ই আছে। এর একটি সহজ অর্থ হলো ভুক্তভোগী ওই নারী ও তার স্বামীর মানবিকতাকে লুট করা হয়েছে এবং এটাই বাস্তব ঐতিহাসিক সত্য। সমাজ ও রাষ্ট্র, সমাজের ও রাষ্ট্রের আইন অথবা প্রতিষ্ঠিত সামাজিক-প্রশাসনিক ব্যবস্থা এই দুই নারী-পুরুষের মানবিক অধিকারকে সুরক্ষা দিতে পারে নি, প্রকারান্তরে একটি প্রতিষ্ঠিত সমাজকাঠামোর পরিসরে সহিংসতার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই মানবিকতাবিরোধী সহিংসতা ইতিহাসের একটি পর্বের একটি বাঁকে সত্য হলেও মানবজাতির অগ্রযাত্রায় নির্ধারক নিয়ন্তা নয়। মানবতার সংগ্রাম দুর্বার হবে অচিরেই, সকল সামাজিক, রাজনীতিক ও অর্থনীতিক অত্যাচারের অবসান ঘটবে। মানুষ দিকে দিকে জেগে উঠছে এবং জেগে উঠবে। সমাজটাকে বদলে দেবেই।
প্রশাসনকে বলছি, অত্যাচারীর ক্ষমতাকে কীছুটা খর্ব করার প্রচেষ্টায় তৎপর হয়ে প্রসঙ্গোক্ত দম্পতিকে একটুখানি দয়াদাক্ষিণ্য প্রদর্শন করুন, অত্যাচারীকে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। আইন তো আছে, তার প্রয়োগ করুন। প্রতিষ্ঠিত যে-সমাজকাঠামো অন্যায়, অত্যাচার ও সহিংসতা চালানোর ক্ষমতাকে জন্ম দিচ্ছে আইনকে ও ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে তার ক্রীড়নক করে তোলবেন না।