শহীদনূর আহমেদ ::
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সীমান্ত নদী ধোপাজান-চলতি। জেলার অন্যতম সায়রাতমহল (বালু মহাল)টিতে সরকারিভাবে বালু পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকলেও রাতের আঁধারে ধোপাজান চলতি নদীতে চলে অবৈধ ড্রেজারের তা-ব। নদীর পারে ড্রেজার বসিয়ে বালি-পাথর উত্তোলন করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
পরিবেশ বিধ্বংসী এই ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো। অব্যাহত ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে বসতঘর, গ্রামের রাস্তা, কবরস্থান, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। দিনকে দিন নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিলেও ভাঙন রোধে নেয়া হচ্ছে না কোনো উদ্যোগ। পাশাপাশি অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ীদের দমনেও প্রশাসনিক তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে না।
সরেজমিনে ধোপজান-চলতি নদী তীরবর্তী জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের কাইয়ারগাঁও এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদী তীরবর্তী এই গ্রামটি অব্যাহত ভাঙনে নিশ্চিহ্নের পথে। প্রতিদিনই কোনোনা কোনো এলাকা ভাঙছে। গ্রামের অনেক মানুষ তাদের ফসলি জমি, বসতঘর হারিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। নদী ভাঙনের তীব্রতা যেহারে বেড়েছে এমনটা চলতে থাকলে অচিরেই পুরো গ্রামে নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা জানান, নদী ভাঙনের প্রধান কারণ হচ্ছে বোমামেশিন অর্থাৎ ড্রেজারের তা-ব। রাতের আঁধারে নদী তীরে অসংখ্য ড্রেজার দিয়ে বালি ও পাথর উত্তোলন করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। চক্রের সদস্য জমির মালিকদের নগদ টাকা বা শক্তি প্রয়োগ করে ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন করে থাকে। রাত ৯টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত চলে ড্রেজারের এই তা-ব। ড্রেজার দিয়ে নদীর তীর গর্ত করে বালি-পাথর উত্তোলন করায় ধ্বসে পড়ে নদীর পাড়। এতে ঝুঁকিতে থাকে আশেপাশের ঘরবাড়ি। স্থানীয় সিন্ডিকেট প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চাননা কেউ।
হামজা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, রাতে নদীতে প্রতিদিন ড্রেজার চলে। ড্রেজারের শব্দের জন্য এখানে মানুষ রাতে ঘুমাতে পারেনা। রাতে ড্রেজার চললেও দিনের বেলায় ড্রেজার বন্ধ থাকে।
রুবেল মিয়া নামের স্থানীয় নৌকা চালক বলেন, যারা ড্রেজার চালায় তারা অনেক প্রভাশালী। তারা স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে রাতে ড্রেজার দিয়ে বালি পাথর তুলে থাকেন। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। সিন্ডিকেটের কাছে জমি বিক্রি করে দেন। আর সিন্ডিকেটের লোকেরা প্রশাসনের অগোচরে ড্রেজার বসিয়ে বালি পাথর তুলেন। যার ফলে নদীর তীর ক্রমাগত ভাঙছে।
গৃহবধূ জাহানারা বলেন, আমাদের বাড়ি একসময় আরও দূরে ছিল। ভাঙতে ভাঙতে এখন এই পর্যন্ত আসছে। এভাবে ভাঙ্গতে থাকলে এক সময় আমার ঘর নদীতে চলে যাবে।
এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ বলেন, ড্রেজার বন্ধে বিজিবি যেমন কাজ করছে, তেমনি প্রশাসনও কাজ করছেন। নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সংশ্লিষ্টদের নিকট দাবি জানিয়েছি।