স্টাফ রিপোর্টার ::
শুক্রবার (৪ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টা। জাউয়াবাজার পয়েন্টে স্কুলপড়ুয়া দুই ছেলের সাথে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল এক ছেলের। এক পর্যায়ে ওই ছেলেটির পক্ষ নিয়ে কমপক্ষে ৩০-৩৫টি ছেলে এসে ঘটনাস্থলে জড়ো হয়। কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই স্কুলপড়–য়া দুই ছেলের ওপর তারা হামলে পড়ে। নিজেদের রক্ষায় বাজারের এক দোকান থেকে অন্য দোকানে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। দোকানি এবং উপস্থিত লোকজনও তাদের রক্ষায় এগিয়ে আসার সাহস পাননি। কিশোরগ্যাংয়ের হামলায় ওই স্কুলপড়–য়া দুই ছেলে গুরুতর আহত হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এমন ঘটনা জাউয়াবাজারে নতুন নয়। ওই কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যরা কলেজে এবং বাজারে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে গত ৬ মাসে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ বার মারিমারির ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের হামলা থেকে বাদ যাননি শিক্ষক থেকে সাধারণ লোক। তারা রীতিমতো জাউয়াবাজারের আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, স্থানীয় কোণাপাড়া এলাকার কিছু ছেলে রয়েছে এই দলের নেতৃত্বে। তাদের নামে এলাকায় সংঘর্ষের একাধিক মামলাও রয়েছে। তাদের উৎপাতে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, বাজার এলাকা হওয়ায় রাতভর তাদের সংঘবদ্ধ আড্ডা চলে পানের দোকানে কিংবা চায়ের দোকানে। রাত হলে তাদের বেশির ভাগ আড্ডা জমে বন্ধ করে যাওয়া টং দোকানের বেঞ্চে। তখন মাদক সেবনও চলে নির্দ্বিধায়। এছাড়া প্রতিরাতেই চলে কিশোরগ্যাংয়ের মোটরসাইকেল মহড়া।
জাউয়াবাজারের বাসিন্দা হিউম্যান রাইটস অব বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের যুগ্ম মহাসচিব রাজু আহমদ পীর বলেন, আমাদের এলাকায় বর্তমানে কিশোরগ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এতে করে ¯পষ্ট বুঝা যায় এলাকায় আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, ফাঁড়ি পুলিশ, বিট পুলিশিংয়ের নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতি মাসে যদি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সুশীল, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী নিয়ে আলোচনা করতেন তাহলে হয়তো অনেক অঘটন ঘটার আগেই নিষ্পত্তি করা যেত।
জাউয়াবাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাবেক সভাপতি আছাদুর রহমান বলেন, সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে অসংগতির কারণে কিশোর অপরাধের উৎপত্তি হয়। পরে এদের রাজনীতিকীকরণ ও ব্যবহার করা হয় নানা অপরাধে। ক্ষমতার ¯পর্শ পেয়ে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠে। স্থানীয় প্রশাসন এর দায় এড়াতে পারে না। আমরা আশা করি প্রশাসন এলাকার শান্তি রক্ষায় কঠোর ভূমিকা পালন করবে।
জাউয়াবাজার পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ আহমদ উল্ল্যা ভূঁইয়া বলেন, আমরা সব সময় চেষ্টা করি এলাকায় আইনশৃংখলা পরিস্থিতি যেন সুন্দর ও স্বাভাবিক থাকে। তবে জাউয়াবাজার এলাকায় কাজ করতে গিয়ে অনেক সমস্যা ফেস করতে হয়। জায়গাটি খুব বেশি ক্রিটিক্যাল। তিনি বলেন, শুধু প্রশাসন একা সবকিছু নির্মূল করতে পারবে না। এজন্য এলাকাবাসীর সহায়তাও প্রয়োজন।