1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০১:২৭ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ফেসবুকে অপপ্রচার পোস্ট মুছে ফেলা হবে

  • আপডেট সময় শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০২৩

ডেস্ক রিপোর্ট ::

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ‘সোশ্যাল মিডিয়া’ উত্তপ্ত করার মতো হুমকিমূলক বক্তব্য ফেসবুকে পোস্ট করে অপপ্রচার চালালে তাৎক্ষণিক পোস্টটি ডিলিট করবে ফেসবুক বা মেটা। এক্ষেত্রে সম্মতি নেবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। কীভাবে এই কাজটি করবে সোশ্যাল মিডিয়া কর্তৃপক্ষ এ সংক্রান্ত একটি গাইড লাইন থাকবে দু’পক্ষের দিক থেকে। সেখানে ইসির মনোনীত একটি টেকনিক্যাল টিম কাজ করবে।
এ সংক্রান্ত ইসি ও মেটা কর্তৃপক্ষের মধ্যে বৃহ¯পতিবার (৩ আগস্ট) সিইসির দপ্তর সংলগ্ন সম্মেলন কক্ষে সাক্ষাৎ হয়েছে। সাক্ষাতে ইসির পক্ষে নেতৃত্বে দেন অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এবং মেটার বাংলাদেশে নিযুক্ত হেড অব পাবলিক পলিসি রুজান সারোয়ার। সভায় মেটার পক্ষ থেকে কীভাবে কাজ করবেন সে বিষয়ে কমিশনকে অবহিত করেন। পরবর্তী সময়ে আরো সভা করে এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে চায় উভয় পক্ষই।
গুজব-অপপ্রচার থেকে সহিংসতা এবং সহিংসতায় নিরীহ মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে ধর্মীয় উসকানি থেকে অপপ্রচার, নির্বাচন কেন্দ্রিক অপপ্রচার এবং এই প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে জঙ্গিবাদের উত্থান উল্লেখযোগ্য। নির্বাচনে হুমকিমূলক সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হলে সেটি মেটা কর্তৃপক্ষ ইসির সঙ্গে পরামর্শ করে বন্ধ করবে এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং আইনজ্ঞরা। তারা বলছেন, এটা একটা ইতিবাচক দিক। সাধুবাদ জানানো যায়। বলছেন, সতর্ক থাকতে হবে যেন আইনের অপপ্রয়োগ না ঘটে এটা নিশ্চিত করতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু ধর্মীয় ইস্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়, তা নয়। আরো ¯পর্শকাতর ইস্যুতে শামিল হয় কুচক্রী মহল। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, প্রাণসংহারী করোনা মহামারির টিকা নিয়েও গুজব ছড়িয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একটি ষড়যন্ত্রকারী মহল তৎপরতা চালিয়েছিল।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরের শেষ অথবা জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন উপলক্ষে সরব হয়ে উঠেছে ফেসবুকসহ সামাজিকমাধ্যমগুলো। চলছে নানামুখী গুজব-অপপ্রচার। অনেক সময় প্রতিপক্ষের চরিত্র হননমূলক অপপ্রচার চালিয়ে একটি ফায়দা আদায় করে নেয়। এসব নানা ইস্যুতে অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচন ভ-ুল হওয়ার মতো পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। বিতর্কিত পোস্ট থেকে সংহিসতা উসকে দেয়। এসব অপপ্রচার থামাতে ফেসবুক স্বপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে এসেছে। কমিশন তাদের প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করছে। বলছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোট পরবর্তী সংস্থাটির সঙ্গে কাজ করবে কমিশন। এর জন্য কোনো আর্থিক ব্যয় করতে হবে না কমিশনকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। এই নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা গুজব ও অপপ্রচারের ঘটনা ঘটে। এসব বিষয়ে কীভাবে কাজ করা যায় তারা একটা প্রস্তাব দিয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, নাগরিকরা চাইলেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ পোস্ট ডিলিট করতে পারে না। তাদের একটা পলিসি আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই প্ল্যাটফরম একটা পলিসির মধ্যে দাঁড়িয়েছে। ওনাদের এবং আমাদের আইনের মধ্যে যেটা পড়বে সেটাই ডিলিট করতে পারবে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্ট বা মেশিন লার্নিং দিয়ে আপত্তিকর পোস্টগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সব তদারকি করা সম্ভব না। একটা নির্দিষ্ট ফরমুলার মাধ্যমে করা হবে। থ্রেট সিস্টেমের মধ্যে না হলে তারা সেটা ব্যবস্থা নিতে পারে না। হাজার কমেন্ট; কোনটি সে ধরবে কোনটি ধরবে না- সেটাও ফাইন্ডিংয়ের বিষয়। এটাও চিহ্নিত করতে গেলে তাদের একটা ক্রাইটেরিয়া দিতে হবে। এগুলো বিষয়ে ইসির পক্ষ থেকে একজন টেকিনিক্যাল এক্সপার্টকে স¤পৃক্ত করে দেওয়া হবে। উভয়ই পরামর্শক্রমে নির্বাচন সংক্রান্ত বিরূপ পোস্ট ডিলিট করবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান বলেন, গুজব শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক না। নানা প্রক্রিয়ায় মানুষ ভিকটিমাইজ হয়। গণতান্ত্রিক পন্থার একটা প্রিরিকুইজিট থাকে। যেমন উন্নত সমাজ ব্যবস্থায় শিল্প বিপ্লব হয়েছে। শহরকেন্দ্রিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সম্মান ও সহনশীলতা তৈরি হয়েছে। তবে আমাদের মতো অনুন্নত রাষ্ট্রে আরবান রেশেনাল আচরণটা আমরা কখনো পাই না। ফলে এখানে নানা রকম গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ঘটনাটি আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখি না।
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের উদাহরণ টেনে ঢাবির এই অধ্যাপক বলেন, পর্নোগ্রাফির জন্য মেয়েরা যে ভিকটিম হচ্ছে- এই আইনটি তাদের জন্য রক্ষাকবচ। আবার অপব্যবহার হচ্ছে না, সেটা বলব না।
নির্বাচনকেন্দ্রিক অপপ্রচার রোধ প্রসঙ্গে জিয়াউর রহমান বলেন, আমাদের এখানে যেহেতু পলিটিক্যাল ইনস্টিটিউট ডেভেলপ করেনি এবং রাজনীতি সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেনি। সুতারং নীতিমালাটা শক্তিশালী না। ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি যার যার মতো ব্যবহার করেন। যদি একটা ডিভাইসের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা যায়; এর সুফল শুধু যার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হবে তিনিই শুধু নন রাষ্ট্রও সুবিধা পাবে। নির্বাচনকেন্দ্রিক অশোভন আচরণ ও আনলজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিস খুব হয়ে থাকে। গণতান্ত্রিক ধারায় মানুষের বাকস্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু সেটা অন্যের জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ের মানহানিকর না হয় সেজন্য ফেসবুক যে উদ্যোগ নিয়ে ইসির সঙ্গে সভা করেছে তা ইতিবাচক। এর মাধ্যমে নির্বাচনকেন্দ্রিক গুজব ও মিথ্যা-বিভ্রান্তিকর তথ্য অপসারণের মাধ্যমে যদি একটা চেকারের মধ্যে আনা যায় তাহলে অবশ্যই সেটা সবার জন্য ভালো।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা যেখানেই হোক না কেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিরঙ্কুশ অধিকার নয়। এক্ষেত্রে কিছু শর্ত আছে, যেমন- অন্যের অধিকার ক্ষুণœ না করে, অন্যের ধর্মের ওপরে কোনো আঘাত না আসে, কোনো উসকানিমূলক-ঘৃণা-বিদ্বেষ ইত্যাদি প্রচার করার কোনো সুযোগ নেই। সেটা বাংলাদেশের সংবিধান হোক বা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের দলিল হোক বা ইউরোপীয় মানবাধিকারের (ইইউ) দলিল হোক। সব ক্ষেত্রেই বলা আছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা অবশ্যই কাম্য। তবে মত প্রকাশের নামে ওই কাজগুলো করা যাবে না।
আইনের এই অধ্যাপক বলেন, গুজব-অপপ্রচার ও বিদ্বেষমূলক খবর বন্ধে যে উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে তা ইতিবাচক। শুধু আমাদের এখানে না, স¤প্রতি কানাডায়ও এ বিষয়ে একটা পদক্ষেপ নিতে ওই দেশের সরকারকে দেখা গেছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের কিংবা একটি নির্বাচন প্রক্রিয়া ভ-ুল হওয়ার জন্য উসকানিমূলক কিছু দেখা গেলে তাৎক্ষণিক ডিলিট বা মুছে ফেলে দিতে হবে।
অধ্যাপক জাকির আরো বলেন, নির্বাচন এলেই কারো চরিত্রহরণ করা, কারো ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করা, মিথ্যা তথ্য দেওয়া, আইন ও সংবিধানের বিরুদ্ধে গিয়ে অপপ্রচার করা, সহিংসতা এবং উসকানি দেওয়া অবশ্যই কারো কাম্য নয়। এটা চলতে দেওয়া যেতে পারে না। এটা বন্ধ করার জন্য অবশ্যই একটা ব্যবস্থা করা উচিত। আমি মনে করি, মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করে আইন যতটুকু দিয়েছে ততটুকু সংরক্ষিত করে এর বাইরে সমাজ, রাষ্ট্র, ধর্ম ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও চরিত্রহরণ করার যে ধরনের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসবে তা সঙ্গে সঙ্গে ডিলিট করা নয়; যারাই এটা করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা উচিত। তিনি বলেন, সা¤প্রতিক ও অতীত ইতিহাস যদি পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখা যাবে একেবারে বানানো গল্প ও চরিত্র হননকারী পোস্ট ছেড়ে সহিংসতায় বহু মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সহায়তা জঙ্গিবাদের মতো ঘটনা সুসংগঠিত হচ্ছে।
এদিকে, মেটা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সভার পর ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ফেসবুকের একটা টিমের সঙ্গে আমরা বসেছিলাম। তবে এটা প্রাথমিক একটা আলোচনা। পরে তাদের সঙ্গে আলোচনা আরো হবে। যেকোনো অপপ্রচারের কনটেন্ট আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফাইন্ড আউট করবে ফেসবুক।
অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, নির্বাচনের প্রচারণার জন্য কোন ধরনের কনটেন্টে তারা বিধিনিষেধ আরোপ করবে সে বিষয়ে তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে নেবে। যেগুলো আমাদের কাছে মনে হবে নেগেটিভ প্রচারণা, সেগুলো বন্ধের জন্য বলা হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ কার্যক্রম চালানো হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com