বিশেষ প্রতিনিধি ::
টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণের নামে জিহাদী সভা করায় বুয়েটের ৩১ ছাত্রকে গ্রেপ্তার ও পরবর্তীতে কারাগারে পাঠানোর ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোচিত একটি ঘটনা। পুলিশ ও বুয়েটের বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃত ৩৪ জনের মধ্যে ২৪ জন বুয়েটের বর্তমান ছাত্র এবং ৭জন সাবেক ছাত্র। তিনজন এসএসসি পাশ করে বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হয়েছে। নাশকতার তথ্য উদঘাটন করতে গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও বুয়েটের একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আফিফ আনোয়ার ইসলামী ছাত্রশিবির বুয়েট শাখার বায়তুল মাল সম্পাদক। তার নেতৃত্বেই বুয়েটের ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীরা টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণের নাম করে নাশকতার ছক করতে এসেছিল। পুলিশ তাদের মুঠোফোন ও ব্যাগ জব্দ করে তাদের কাছ থেকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন কার্যক্রমের কাগজ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কল্যাণ তহবিলের প্রচারপত্র, সদস্য-সাথীদের কোরআন হাদিসের পাঠযোগ্য সিলেবাস, কর্মী ঘোষণা অনুষ্ঠানের কাগজপত্রসহ ইসলামী ছাত্রশিবিরের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে।
মামলার বিবরণ ও পুলিশ জানায়, বাংলাদেশ ইসলামিক ছাত্রশিবিরের বুয়েট শাখার বায়তুল মাল সম্পাদক আফিফ আনোয়ারের নেতৃত্বে বুয়েট পড়–য়া শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা টাঙ্গুয়ার হাওরে গোপন মিটিং করতে জড়ো হয়েছিল। আফিফ বুয়েটের তিতুমির হলের ৩০৪নং কক্ষে অবস্থান করেন এবং বুয়েটের মেটেরিয়াল সাইন্স এন্ড মেটালারজিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র। তিনি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার মান্দারখিল গ্রামের আনোয়ারুল হকের পুত্র। তাকে মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে। মামলার দ্বিতীয় আসামি বখতিয়ার নাফিসও ছাত্রশিবিরের দায়িত্বশীল কর্মী। তিনি বুয়েটের তিতুমির হলের ৩০৪নং রুমে থেকে ম্যাকানিক্যাল বিভাগে ৪র্থ বর্ষে পড়াশোনা করছেন। বখতিয়ার নাফিস টাঙ্গাইল জেলার শখিপুর উপজেলার তক্তারচালা গ্রামের আব্দুস সামাদের পুত্র। তাদের নেতৃত্বেই মূলত টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়ানোর ছক করে নাশকতার পরিকল্পনা করতে শিবিরের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছিল বলে জানায় পুলিশ।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন কার্যক্রমের তথ্য, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কল্যাণ তহবিলের প্রচারপত্র, সদস্য-সাথীদের কোরআন হাদিসের পাঠযোগ্য সিলেবাস, কর্মী ঘোষণা অনুষ্ঠানের তথ্যসহ ইসলামী ছাত্রশিবিরের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও আটককৃতদের তল্লাশি করে ছাত্র শিবিরের সাথী, সদস্য ও কর্মীর সিলেবাস, কর্মী ঘোষণা অনুষ্ঠানের প্রমাণপত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির শাখা কর্তৃক অনুমোদিত সদস্য সহায়িকা, ইসলামী যুদ্ধনীতিতে মানবাধিকার বিষয়ক কাগজপত্র, বনশ্রী থানার শিবিরের সভাপতি শায়খ মাহমুদ টিুট কর্তৃক ‘সৈনিক কাফেলার ভাইদের কাছে পাঠানো পত্র’সহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জব্দ করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়। তাহিরপুর থানায় মামলা নং ১৬।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে গিয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর ড. খায়রুল কবীরের রোমেনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের জামায়াত শিবিরের দায়িত্বশীলরা বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট হুমায়ুন মঞ্জুরকে আইনজীবী নিয়োগ করতে চাইছিলো। তিনি রাজি হননি। আদালতে এসে জেলা ছাত্রশিবিরের বর্তমান ও সাবেক নেতারা আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে হাটাহাটি করেছেন। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
ড. খায়রুল কবির রোমেন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে জব্দকৃত আলামত থেকেই প্রমাণ হয়েছে তারা ছাত্রশিবিরের দায়িত্বশীল নেতাকর্মী। বেড়ানোর নামে নীরবে এখানে নাশকতার পরিকল্পনা করতে এসেছিল। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা কমিটির তৎপরতায় তারা ধরা পড়ে। তাদের জামিন চাওয়া হলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে আমরা বাধা দিবো। তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে নাশকতার তথ্য উদঘাটনের আহ্বান জানাবো আদালতে।
তাহিরপুর থানার ওসি সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ২৪ জন বুয়েটের বর্তমান ছাত্র, ৭জন সাবেক ছাত্র এবং ৩জন বিভিন্ন কলেজের ছাত্র। এর মধ্যে ১ ও ২ নম্বর আসামি শিবিরের বুয়েট শাখার শীর্ষ দায়িত্বশীল নেতা। তারা মূলত নাশকতা করার পরিকল্পনা করতেই এখানে এসেছিল। তিনি বলেন, আমরা তাদেরকে রিমান্ডে আনার জন্য আদালতে আবেদন জানাবো।