গণমাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে প্রচুর। শত শত মাইলব্যাপী বিস্তৃত বনাঞ্চল পুড়ে ভস্মীভূত হচ্ছে, তাপদাহে ফুসকা পড়ছে জনপদের মানুষজনের। স্থানে স্থানে বাড়ছে বন্যা-ঝড়-বৃষ্টি ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কিংবা গলছে বরফ, বাড়ছে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা। অর্থাৎ জলবায়ুর তাপ বৃদ্ধির কারণে কী কী দুর্ঘটনা ঘটছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তার বিবরণ দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বলা হয়েছে গত জুলাই মাস বিগত এক লক্ষ বছরের মধ্যে বেশি উষ্ণতা পৃথিবীকে উপহার দিয়েছে এবং বৈজ্ঞানিকরা এর কারণ হিসেবে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারসঞ্জাত গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়াকে মূলত দায়ি করেছেন। এমন সাদামাটাভাবে বিষয়টি বিবেচনা করা হলে ‘উদুর পি-ি বুধুর ঘাড়ে’ প্রত্যার্পণের মতো একট ঘটনা সংঘটিত হয়। কারণ ‘জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার’ ও ‘গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া’রও পেছনে একটি কারণ থাকেতে পারে সে-ভাবনাটা আড়ালে পড়ে যায়।
আসলে মূল কারণটা পুঁজিবাদী আর্থব্যবস্থার চাকা ঘুরে জীবাশ্ব জ্বালানির উপর ভর করে। জীবাশ্ব জ্বালানি না পুড়ালে কলকারখানা, বাতানুকূলযন্ত্র, গাড়ি, উড়োজাহাজ, যুদ্ধযান চলে না কিংবা কোনও যুদ্ধাস্ত্র অথবা আণবিক বোমা তৈরি করা যায় না এবং প্রকারান্তরে মুনাফা করা যায় না, মানুষ কর্তৃক মানুষকে শোষণ করার রজানীতি বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং পৃথিবীর একমাত্র নিয়তি দাঁড়িয়েছে, পৃথিবীকে পুড়ে মরতে হবে এবং পুড়ে মরা থেকে রক্ষা পেতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে, পৃথিবীতে বনভূমির বিস্তার বাড়াতে হবে বিশাল আকারে এবং প্রাকৃতিক উপায়ে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার প্রতিরোধ গড়ে তোলতে হবে। তা না করতে পারলে ওজোন স্তরের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মেরামত করা সম্ভব হবে না এবং পৃথিবীর অব্যাহত উষ্ণতা বৃদ্ধি প্রক্রিয়াটিকেও থামানো যাবে না। মনে রাখতে হবে পৃথিবীতে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে অব্যাহত রেখে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়াকেও থামনো কীছুতেই সম্ভব নয়। কারণ পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা চালাতে গিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানির মাত্রা এতোটাই বাড়িয়েছে যে, সেটা পৃথিবীকে তাপদাহের তীব্রতা দিয়ে ভস্মীভূত করার পর্যায় উপনীত করেছে। তাই পুঁজিবাদকে মুনাফা নিশ্চিত কারার স্বার্থে প্রথমেই পৃথিবীর দেশে দেশে আধিপত্য বিস্তারের প্রধান হাতিয়ার যুদ্ধাস্ত্র কিংবা বিশেষ করে পারমাণবিক বোমা উৎপাদনের কার্যকলাপ থেকে সরে আসতে হবে, তদুপরি যে-কোনও ধরনের যুদ্ধকে চিরতরে নিষিদ্ধ করে দিতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। এইটুক করতে পারলে উষ্ণতা বৃদ্ধির অন্যান্য ছোটখাটো সমস্যাগুলো দূর করা যাবে অনায়াসে, বেশি বেগ পেতে হবে না।