বিশেষ প্রতিনিধি ::
টাঙ্গুয়ার হাওরে এসে নাশকতার পরিকল্পনায় গোপন সভা করায় পুলিশ বুয়েট পড়–য়া ছাত্রশিবিরের ৩১ নেতাকর্মীসহ ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আদালত তাদেরকে কারাগারে পাঠান। এ ঘটনায় জেলায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার বিকেলে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করার পর সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের সাবেক ও বর্তমান দায়িত্বশীল একাধিক নেতা আদালত এলাকায় উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যায় একটি নৌকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়ানোর নাম করে গোপন সভা করে বুয়েট পড়–য়া শিবিরের নেতাকর্মীরা। সভায় তারা রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী কথাবার্তাসহ উত্তেজনাকর কথাবার্তা বলেন। বিষয়টি পুলিশ অবগত হয়ে দ্রুত অনুসন্ধানে নামে। পুলিশ জানতে পারে বুয়েট পড়–য়া এই ছাত্ররা সবাই ছাত্রশিবিরের দায়িত্বশীল নেতাকর্মী। বেড়ানোর নামে তারা মূলত ছাত্রশিবিরের পরিকল্পানমূলক সভা করতে এসেছে। এই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই পুলিশ রবিবার সন্ধ্যায় তাদেরকে আটক করে। রাতে ও সোমবার দুপুরে তাদের আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা খুঁজে পায় পুুলিশ। বিকেলে তাহিরপুর থানা পুলিশ তাদেরকে সুনামগঞ্জে আমলগ্রহণকারী তাহিরপুর আদালতে প্রেরণ করে। আদালত সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বুয়েটের তীতুমীর হলের ৩০৪ নম্বর কক্ষের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র আফিফ আনোয়ার (২৪), বখতিয়ার নাফিস (২৪), কাজী নজরুল ইসলাম হলের ১ম বর্ষের ছাত্র মো. সাইখ সাদিক (২১), শেরে বাংলা হলের ১ম বর্ষের ছাত্র ইসমাইল ইবনে আজাদ (২১), একই হলের প্রথম বর্ষের ছাত্র সাব্বির আহম্মেদ (২১), ২য় বর্ষের ছাত্র তাজিমুর রাফি (২০), এমএ রশিদ হলের ৩য় বর্ষের ছাত্র মো. সাদ আদনান অপি (২২), আহছান উল্লাল হলের ১ম বর্ষের ছাত্র মো. শামীম আল রাজি (২০), একই হলের ৩য় বর্ষের ছাত্র মো. আব্দুল্লাহ আল মুকিত (২৩), শেরেবাংলা হলের ১ম বর্ষের ছাত্র মো. জায়িম সরকার (২১), স্মৃতি হলের মাস্টার্স ১ম বর্ষের ছাত্র হাইছাম বিন মাহবুব (২৫), সোহরাওয়ার্দী হলের ৩য় বর্ষের ছাত্র মাহমুদুর হাসান (২২), এমএ রশিদ হলের ২য় বর্ষের ছাত্র খালিদ আম্মার (২১), আহছান উল্লাহ হলের ৩য় বর্ষের ছাত্র মো. ফাহাদুল ইসলাম (২৩), সোহরাওয়ার্দী হলের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তানভির আরাফাত ফাহিম (২১), ২য় বর্ষের এটিএম আবরার মুহতাদী (২১), সোহরাওয়ার্দী হলের ২য় বর্ষের ছাত্র মো. ফয়সাল হাবিব (২০), আব্দুল বারি (২৪), চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আনোয়ারুল্লাহ সিদ্দিকী (২৮), বাকি বিল্লাহ, মাহাদি হাসান (২৩), মাস্টার্সের ছাত্র আলী আম্মার মৌয়াজ (২৫), টিএম তানভির হোসেন (২৬), শহিদ স্মৃতি হলের মাস্টার্স ২য় বর্ষের ছাত্র মো. রাশেদ রায়হান (২৪), বুয়েট ৩য় বর্ষের সাকিব শাহরিয়ার (২৩), শেরেবাংলা হলের মাস্টার্স ১ম বর্ষের ছাত্র ফায়েজ উস সোয়াইব (২৪), চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আব্দুর রাফি (২৫), আশরাফ আলী (২৫), মো. মাহমুদ হাসান (২৫), মো. এহসানুল হক (২৪), তীতুমীর হলের ৪র্থ বর্ষের মাঈন উদ্দিন (২৪), বুয়েটের সিনিয়র এসিসটেন্ট রেজিস্ট্রার আবু হানিফের ছেলে রাইয়ান আহম্মেদ সাজিদ (১৭), তানিমুল ইসলাম (১৫) ও মো. আব্দুল্লাহ।
তাহিরপুর থানার ওসি সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী। তারা বেড়ানোর নাম করে নাশকতার পরিকল্পনাসভা করতে এসেছিল। খবর পেয়ে আমরা তাদেরকে আটক করি। সোমবার তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
তিনি জানান, টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকরা আসেন মূলত শুক্র ও শনিবার। কিন্তু তারা এসেছে রবিবার। পর্যটনের নামে আসলে রাষ্ট্রবিরোধী সভা করতেই তারা এসেছিল। তাদের দ্বারা যে কোনও নাশকতা সম্ভব।
এদিকে বিকেলে তাদেরকে আদালতে পাঠানো হলে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক ও বর্তমান দায়িত্বশীল একাধিক নেতা আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হোন। এসময় সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবুল বাশার বলেন, গ্রেপ্তারকৃত কয়েকজনের পরিবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে আইনজীবী হওয়ার জন্য। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই ছাত্র। তারা আমাদের সংগঠনের কোন পর্যায়ের নেতা এখনো আমরা সেই তথ্য পাইনি।