গত শুক্রবারে (২৮ জুলাই ২০২৩) প্রকাশিত স্থানীয় পত্রিকা থেকে দু’টি সংবাদশিরোনাম তুলে দিচ্ছি : ‘গচ্চা কোটি টাকা! ৪৫ হাজার ঘনফুট পাথরকে সাড়ে সাত হাজার ঘনফুট দেখিয়ে বিক্রি’ ও ‘ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, অর্থকেলেঙ্কারির মহোৎসব’। বিস্তারিত বিবরণ দিচ্ছি না। কেবল বলছি : পাথর বিক্রির রাজস্ব সরকারি তহবিলে জমা পড়ছে না এবং সাধারণ মানুষের আয় একজন তঞ্চক মেরে দিয়ে উধাও হয়ে গেছে। উদ্ধৃত দুই সংবাদের ভিত্তিতে নিঃসন্দেহেই বলা যায় : দেশের প্রত্যন্ত একটি জেলা সুনামগঞ্জে এমনটা যেমন হচ্ছে, তেমনি রাজধানী ঢাকাতে হচ্ছে, আকসার হচ্ছে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে, অপ্রতিহত গতিতে, কোনও কীছুর তোয়াক্কা না করে। এককথায় সার্বিক বিবেচনায় সমগ্র দেশটাই কিংবা প্রতিষ্ঠিত পুরো আর্থসামাজিক ব্যবস্থাটাই আত্মসাতের কেলেঙ্কারির পঙ্কে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে আছে। পত্রপত্রিকায় এবংবিধ হাজারটা সম্পদ আত্মসাতের ঘটনা উপস্থাপনের পরিপ্রেক্ষিতে যে কেউ বলে ফেলতেই পারেন যে, দেশের ভেতরে তলে তলে ঋণখেলাপির ঘটনার অন্তরালে লুণ্ঠনচর্চা থেকে শুরু করে দুঃস্থ মানুষের জন্যে সাহায্য পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকরণে হরিলুট চলছে। কেন্দ্র থেকে প্রত্যন্তে প্রেরিত সম্পদ মাঝপথে লুণ্ঠিত হচ্ছে অবাধেÑ ৩২ নম্বরের দুতলা থেকে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ২০ টাকা একতলায় এসে ১০ টাকা হয়ে যাওয়ার মতো করে। এবংবিধ কথাকাহিনী কোনও দুর্মুখের মুখ থেকে নির্গত হলে, তার কথাকাহিনী নিছক মিথ্যা বলে এক ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না কীছুতেই, অন্তত বাংলাদেশের বর্তমান আর্থসামাজিক ব্যবস্থার সামগ্রিক পরিপ্রেক্ষিত-পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে। কারণ স্বজনপোষণের আর্থনীতিক রাজনীতি এই দেশে বলতে গেলে সকল প্রকার লুটপাটের পদ্ধতিকে অবাধ ও অপ্রতিরোধ করে তোলেছে। সম্পদ ভাগবাটোয়ারাকে বিভিন্ন কৌশলে দিয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বৈধতা। আর তা ছাড়া আছে লুটপাটের সহায়ক দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার সামাজিক সংস্কৃতির চর্চা। এককথায় দেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার চরিত্রটা অনেকটাই সম্পদের ভাগবাটোয়ারা একটি পুঁজিতান্ত্রিক রকমফের মাত্র। যার কারণে ব্যাপকাকারে উন্নয়নের ফাঁকে ধনবৈষম্য বৃদ্ধির প্রবণতাটি কার্যকর আছে তার নিজস্ব নিয়মে এবং পুঁজির পুঞ্জিভবনের এই পুঁজিতান্ত্রিক প্রকরণ অনুসারেই গড়ে উঠেছে এখানকার প্রশাসনিক ও রাজনীতিক সংস্কৃতি, যে-সংস্কৃতির পাকেচক্রে পড়ে এই দেশের আসন্ন নির্বাচনটা দেশর মানুষের নিজের শক্তিতে হতে পারবে কিনা, সে প্রশ্ন ইতোমধ্যে উঠেছে। দেশের মানুষ এই বিপদ থেকে সুরক্ষা চায়, স্বজনপোষণের রাজনীতির নাগপাশ থেকে মুক্তি চায়।