‘স্মার্ট’ শব্দটি বিভাষার বটে কিন্তু বাংলাদেশে এর ব্যবহার সাধারণ শিক্ষিত সমাজের বেড়া ভেঙ্গে রাষ্ট্ররাজনীতিক নীতিনির্ধারক সংঘের কাছে সমধিক গ্রহণীয় হয়ে উঠেছে এবং বর্তমানে সমাজসংস্থিতির মর্মমূলে আসনগ্রহণ করে আর্থসামাজিক ব্যস্থার দিকনির্দেশক আদর্শে পর্যবসিত হয়েছে। স্মার্টনেসের আদর্শে আদর্শায়িত হয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মহাযজ্ঞ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে অগ্রগতির বৃহতাকার জ্যামিতিক উল্লম্ফন ঘটছে প্রতিনিয়ত। বাংলাদেশ বর্তমানে উন্নয়নশীলতার যাত্রাপথে অপ্রতিরোধ্য এক অভিযাত্রী এবং আগামী দশকদেড়েকের মধ্যে বৈশ্বিক পরিসরে উন্নত দেশের মর্যাদায় আসীন হবার জন্যে ভীষণ উদগ্রীব। কিন্তু প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে যে, এই উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য গতির আবর্তে জনগণের মধ্যে ধনবৈষম্য বাড়ছে সমতালে। অর্থাৎ মুষ্টিমেয়ে সুবিধাভোগীর ব্যক্তিগত সম্পদের পুঞ্জিভবনের আকার বৃদ্ধির সঙ্গে অধিক সংখ্যকের ব্যক্তিগত সম্পদের আকার ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে ক্রমাগত।
নিন্দুকেরা বলছেন, একদিকে মানুষের ধনী হওয়া ও অন্যদিকে গরিব হওয়ার এই প্রবণতা শেষ পর্যন্ত দেশের কোনও ভালো করবে না, দেশ কখনওই স্মার্ট হয়ে উঠবে না, বরং স্মার্ট শব্দের বিপরীত অর্থে প্রযোজ্য সকল প্রকার খারাপ বৈশিষ্ট্যের আধার হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যে তার আলামত দেখা দিতে শুরু করেছে। বিভিন্ন আলামতের মধ্যে উদাহরণ স্বরূপ একটি বিশেষ লক্ষণের বিষয়ে এখানে উল্লেখ করা যায়। স্মার্ট বাংলাদেশের শিশুরা স্মার্টফোন ব্যবহার করে। এই স্মার্টফোন তাদেরকে স্মার্ট করে না তোলে বরং তাদের শিক্ষণের একাগ্রচিত্ততায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করে শিক্ষগত কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কারও কারও অভিমত এই যে, এর পরিণতিতে অদূর ভবিষ্যতে স্মার্ট বাংলাদেশ পরিচালনার জন্য স্মার্ট নাগরিকের অভাব দেখা দেবে এবং গড়ে তোলা স্মার্ট বাংলাদেশের পরিকল্পনাটি মাঠে মারা যাবে, যদি না আগে থেকেই বিদেশীদের দ্বারা ভবিষ্যতের স্মার্ট বাংলাদেশ পরিচালনার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়।
দেশের কোনও কোনও বিজ্ঞজনের মতো সম্প্রতি জাতিসংঘও বিষয়টি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। জানা গেছে, তাঁরা বিশ্বব্যাপী স্কুল পর্যায়ের শিক্ষাক্ষেত্রে স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ কারার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, অন্তত শিশুশিক্ষাক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার মানবিক বৈশিষ্ট্যবহির্ভূত হওয়া উচিত নয়। তাঁরা নির্দিষ্ট করে বলেছেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার ‘মানবকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি’র অধীন হওয়া উচিত।”
আমরা মনে করি, দেশের শিশুদের যথাযথ মানবিক বিকাশ নিশ্চিত করা অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে দক্ষ কিংবা স্মার্ট করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতিসংঘের পরামর্শ এখনই কার্যকর করা প্রয়োজন। অন্যথায় অদূর ভবিষ্যতের উন্নত বাংলাদেশ পরিচালনার উপযুক্ত মানুষের অভাবে ভোগতে হবে জাতিকে, অর্থাৎ উন্নত বাংলাদেশ পরিচালনার জন্য দেশে দক্ষ জনশক্তি থাকবে না।