হোসাইন আহমদ ::
বস্তা ও বাদামের খোসার সূত্র ধরে শান্তিগঞ্জে স্কুলছাত্রী রাজনা বেগম হত্যার দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হল রাজনা’র আপন চাচাতো ভাই পাথারিয়া গ্রামের সিজিল মিয়ার ছেলে মো. সালমান মিয়া (২৪) ও আপন চাচী সিজিল মিয়ার স্ত্রী আইরুন নেছা (৫২)। বৃহস্পতিবার তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়। এ সময় আদালত তাদেরকে জেল হাজতে পাঠান।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (২২ জুলাই) সন্ধ্যায় পাথারিয়া গ্রামের শরীফপুর তালুকদার বাড়ি সংলগ্ন সড়কের পাশে স্কুলছাত্রী রাজনা বেগমের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রাজনা বেগম পাথারিয়া গ্রামের ইসরাইল মিয়ার মেয়ে ও স্থানীয় সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে রবিবার (২৩ জুলাই) শান্তিগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন রাজনা বেগমের পিতা ইসরাইল মিয়া।
পুলিশ সূত্র জানায়, মামলাটি একটি ক্লুলেস হত্যাকা-। মামলার মূল রহস্য উদ্ঘাটনে জেলা পুলিশ সুপারের দিকনির্দেশনায় জগন্নাথপুর সার্কেলের সিনিয়র পুলিশ সুপার শুভাশীষ ধর, শান্তিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. খালেদ আহমদ চৌধুরীসহ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল ইসলাম হত্যাকা-ের ছায়া তদন্ত শুরু করেন। চলে একাধিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন। কোনোভাবেই রহস্য উন্মোচনের না কূল-কিনারা পাওয়া যাচ্ছিল না। অপরদিকে, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারসহ বিভিন্নভাবে চলছিল খুনের রহস্য উন্মোচনের আপ্রাণ চেষ্টা। তদন্তকালে গ্রামের লোকজন, পরিবারসহ আশপাশের লোকজনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হয়। এক পর্যায়ে গত বুধবার (২৬ জুলাই) বিকেলে শান্তিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. খালেদ আহমদ চৌধুরী ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম পুনরায় রাজনাদের বাড়িতে যান এবং অনুসন্ধান শুরু করেন। তখন রাজনা বেগমের চাচাতো ভাই মো. সালমান মিয়ার বসতবাড়ির রান্নাঘরের ভিতরে রাজনা বেগমের লাশের গায়ে জড়ানো সাদা প্লাস্টিকের বস্তার অনুরূপ আরো একটি সাদা প্লাস্টিকের বস্তা দেখতে পান এবং নিহত রাজনা বেগমের মাথায় লেগে থাকা বাদামের খোসার ন্যায় রান্নাঘরে আরো বাদামের খোসা পাওয়া যায়। এর সূত্রে ধরেই রাজনা বেগমের খুনের ঘটনায় তার আপন চাচাতো ভাই মো. সালমান মিয়া ও আপন চাচী আরুন নেছাকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। পরবর্তীতে হত্যা মামলার ঘটনার বিভিন্ন আলামত পর্যালোচনা করে মো. সালমান মিয়া ও তার মা আইরুন নেছাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়। আদালত তাদেরকে জেল হাজতে পাঠান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক জানান, রাজনা হত্যার সাথে জড়িত অন্য ব্যক্তিদের শনাক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হবে। হত্যাকা-ের আসামি রাজনার চাচাতো ভাই সালমান ও চাচী আইরুন নেছাকে জিজ্ঞাসাবাদে ইতোমধ্যে অনেক তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে।
শান্তিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী জানান, চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্রী রাজনা হত্যার ঘটনায় শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশ রহস্য উদ্ঘাটনে বিভিন্ন কর্মকৌশল অবলম্বন করে আসছিল। গত বুধবার রাতে হত্যার সাথে বিভিন্ন আলামতের সাথে মিল থাকায় নিহত রাজনা বেগমের চাচাতো ভাই ও চাচিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে ওই মামলায় আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। হত্যার আরো রহস্য উদ্ঘাটনে গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের রিমান্ডের আবেদন করা হবে। আশা করি এই হত্যাকা-ে জড়িতদের গ্রেফতার এবং হত্যার মূল রহস্য উদ্ঘাটন সম্ভব হবে।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শুভাশীষ ধর বলেন, হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ তৎপর রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে হত্যাকা-ে জড়িত মূল পরিকল্পনাকারীদের নাম, পরিচয় প্রকাশ করা যাচ্ছে না।