স্টাফ রিপোর্টার ::
খরস্রোতা পাহাড়ি নদী দোয়ারাবাজার উপজেলার খাসিয়ামারা। উজান থেকে আসা বালিতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীটি। নদীর তলদেশ খনন ও নাব্যতা ফিরেয়ে আনাসহ সরকারি রাজস্ব সংগ্রহে গেল বৈশাখ মাসে সায়রাত মহাল (বালু মহাল) হিসেবে এই নদীটি ১৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকায় ইজারা দেয় স্থানীয় প্রশাসন। নদী ইজারার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে অসন্তুষ্ট হয় স্থানীয় বালুখেকো সিন্ডিকেটে। এতোদিন তারা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছিল। কিন্তু প্রশাসন নদীটি ইজারা দেয়ায় তাদের অবৈধ কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। বালুখেকো সিন্ডিকেট এখন তাদের আক্রোশ মেটাতে চাচ্ছে বর্তমান ইজারাদারের ওপর। নানা ইস্যু তোলে মহাল থেকে বালু উত্তোলনে বাধার সৃষ্টি করছে। নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের উস্কে দিয়ে ‘রাবার ড্যাম ইস্যু’ তৈরি করে বালু উত্তোলনে বাধা দিচ্ছে।
জানা যায়, খাসিয়ামারা নদীর টিলাগাঁও এলাকায় নির্মিত রাবারড্যাম দিয়ে নৌকা বালুমহালে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না বালুখেকো সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভুল বুঝিয়ে তারা ফায়দা হাসিলের পাঁয়তারা করে যাচ্ছে।
গেল সপ্তাহে বালু বহনের জন্য কয়েকটি নৌকা ও ড্রেজার মেশিন নিয়ে রাবারড্যামের উপর দিয়ে উজানে প্রবেশ করতে চাইলে বাধা দেন এলাকাবাসী। এ নিয়ে ইজারাদার ও এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়।
পরবর্তীতে ১৯ জুলাই দোয়ারাবাজার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সল আহমদের উপস্থিতিতে রাবারড্যামের উপর দিয়ে নৌকা প্রবেশ করাতে চাইলে ইটপাটকেল ছুঁড়েন স্থানীয়রা। আর এর নেপথ্যে ছিল বালুখেকো সিন্ডিকেটের সদস্যরা। ইটপাটকেলে এক নৌকার চালক আহত হন। এই ঘটনায় ২০ জুলাই সরকারি কাজে বাধা দানে ১৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার রিপন চাকমা। এই ঘটনায় চাঁদাবাজির অভিযোগে স্থানীয় বালু সিন্ডিকেটের ২০ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন ইজারাদার মের্সাস অমিত এন্টারপ্রাইজের পরিচালক কবির হোসেন।
পৃথক দুইটি মামলা দায়েরের পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত দুইদিন খাসিয়ামারা ও দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয়রা।
খাসিয়ামারা বালু মহালের ইজারাদার কবির হোসেন বলেন, এই বিক্ষোভকারীদের উস্কে দেয়ার পেছনে বালুখেকো সিন্ডিকেটটি কাজ করছে। আমি সরকারিভাবে মহাল ইজারা নিয়েছি। ইজারা নেয়ার পর থেকে ওই চক্রটি বিভিন্নভাবে আমাকে হয়রানি করে আসছে। এখন ভরামৌসুম। নদীতে অনেক পানি রয়েছে। কিন্তু রাবার ড্যামের অজুহাতে স্থানীয় কিছু লোকদের উস্কে দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে অসাধু চক্রটি।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফ মুর্শেদ মিশু বলেন, এ ব্যাপারে দুইটি মামলা হয়েছে। একটি ভূমি অফিস ও অন্যটি ইজারাদার করেছেন। যেহেতু বালুমহাল ইজারার বিষয়টি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া হয়। তাই আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেছি।
দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবদুলাল ধর বলেন, দুইটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। সার্ভেয়ার কর্তৃক মামলায় ইতোমধ্যেই একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিরা জামিনে রয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।