শান্তিগঞ্জে শান্তি নেই। সেখানে স্থানীয় শান্তিভঙ্গকর ছোটবড় অনেক ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। গণমাধ্যমে ফলাও করে সে-সব ঘটনার বিবরণ ছাপা হচ্ছে এবং তৎপ্রেক্ষিতে মানুষের উদ্বিগ্নতা বাড়ছে। এই তো গতকালের (২৫ জুলাই ২০২৩) দৈনিক সুনামকণ্ঠে একটি অপ্রীতিকর ঘটনার খবর ছাপা হলো। এক কিশোরীর বস্তাবন্দি লাশ পাওয়া গেছে, সে ২২ জুলাই রাতে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। ঘটনাটি যতই ছোট মনে হোক এর তাৎপর্য বিশাল ও সুগভীর। এটি বলে দিচ্ছে সমাজ ধর্ষণপ্রবণ পুরুষতান্ত্রিকতার দিকে আরও বেশি করে সংহত হচ্ছে এবং আধুনিক থেকে আধুনিকতর জীবনের অর্থাৎ বৈদ্যুতিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করেওÑ যাকে বলে ডিজিটাল যুগে পদার্পণ করেওÑ সভ্য না হয়ে অসভ্য হয়ে উঠছে। তাছাড়া কীছুদিন আগে একটি কাঁঠালের নিলামকে কেন্দ্র করে দুই দল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘটিত সহিংস সংঘর্ষে তিনজনের প্রাণহানি ঘটেছে। শান্তিগঞ্জে এরকম সামাজিক শান্তি নষ্টকর আরও বেশ কটি এরকম ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। সেগুলো ‘ছোটখাটো’ হলেও বৈষয়িক জীবনের আধুনিকতার আড়ালে মননে বা সমাজমানসতায় অসভ্য থেকে যাওয়ার বাস্তবতাকেই প্রতিপন্ন করছে।
শান্তিগঞ্জে জেলার অন্যান্য উপজেলার তুলনায় দ্রুত ব্যাপকমাত্রার উন্নয়নের ছোঁয়া লাগিয়ে দিয়েছেন আমাদের পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি। কিন্তু এমতাবস্থায় মনে হচ্ছে তাঁর এই সমাজ বদলে দেওয়ার যুগান্তকর প্রচেষ্টা কীছু কীছু বৈষয়িক উন্নয়নের সঙ্গে সমাজমানসতার কিংবা মননের উন্নয়ন সম্ভব করে তোলতে পারেনি। এমন তো হবার কথা ছিল না।
পৃথিবীর এমন কোনও স্থান-দেশ নেই যেখানে শান্তিভঙ্গকর ঘটনা ঘটে না। বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু বোধ করি অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে শান্তিভঙ্গকর ঘটনাগুলো বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে অত্যন্ত বিশ্রী, যা আমাদের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতির ভীষণ ভীষণ নি¤œমাত্রা-স্তর কিংবা বিকাশের পর্যায়কে চিহ্নিত করে এবং মনে হচ্ছে দেশর প্রতিটি মানুষ প্রকৃতি, নিজের সত্ত্বা, অন্য মানুষ ও মানবপ্রজাতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তা না হলে কাঁঠাল নিয়ে মারামারি, কিশোরী ধর্ষণ ও খুন, ছাগল কর্তৃক বাগানের ফসল বিনষ্টিকে নিয়ে দুপক্ষের মারামারি কিংবা গ্রোত্রহিংসা চরিতার্থ করতে এমন অমানুষ হয়ে উঠবে কেন মানুষ? এরকম প্রশ্ন থেকেই যায়।
নারীবিদ্বেষ, ধর্ষণ, খুন, অপহরণ, দখল, মাদকব্যবসা, জালিয়াতি, চাঁদাবাজি, চোরাচালান, পণ্যে ভেজাল মিশানো, স্বার্থান্বেষণ, বিদেশে সম্পদ পাচার, অনাচার, অনিয়ম, ঘুস, দুর্নীতি, রাজনীতির আড়ালে শাসন শোষণের সাধ চরিতার্থকরণে ক্ষমতার লাভের নোংরা রাজনীতি ইত্যাদিতে নিমগ্ন হয়ে থাকা দেশের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠছে কেন? অর্থাৎ প্রশ্ন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে, এর উত্তর চাই, সমস্যার সমাধান চাই।
শান্তিগঞ্জে শান্তি নেই যেমন, তেমনি দেশের কোথাও শান্তি নেই। এই কথাটাই চূড়ান্ত সত্য। আমরা শান্তির কামনায় কালাতিপাত করছি। শান্তিগঞ্জের অশান্তি কেটে যাক। দেশের সবখানে শান্তি আসুক। শান্তির শীতল বৃষ্টিপাতে বন্যা বয়ে যাক। প্রকৃতিসঞ্জাত বাইশের বন্যা চাই না, কিন্তু শান্তির বন্যা চাই।